মার্চ মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের মসজিদে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে এক অস্ট্রেলীয় যুবক৷ শুক্রবার স্থানীয় আদালত তার মানসিক ভারসাম্যের পরীক্ষা করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে হামলায় ৫০ জন নিহত হন৷ শুক্রবার হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন টেরান্টের মামলায় শুনানি দেয় আদালত৷
তার বিরুদ্ধে মোট ৮৯টি অভিযোগের বাইরে পরবর্তীতে আরও অভিযোগ আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
কিন্তু স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী, আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আগে অভিযুক্তের মানসিক স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা যাচাই করতে হয়৷
নিউজিল্যান্ডের আইন বলছে, অভিযুক্তের বিচারকার্য সম্পন্ন হবার আগে দেখে নিতে হয় যে, সে মানসিকভাবে যথেষ্ট সুস্থ কিনা৷
শুক্রবারের শুনানিতে তাই এমন আদেশ শোনালো আদালত৷ এরপর, করা হবে ব্রেন্টন টেরান্টের মানসিক পরীক্ষা৷
কেমন ছিল শুনানি?
মসজিদে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ব্রেন্টন টেরান্টের বিরুদ্ধে রয়েছে ৫০টি ধারায় খুনের অভিযোগ৷
শুক্রবারের শুনানিতে সশরীরে উপস্থিত ছিল না টেরান্ট৷ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজির করানো হয় তাকে৷
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, অকল্যান্ডের একটি ‘ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি' কারাগারে রাখা হয়েছে টেরান্টকে৷
ইতিমধ্যে, টেরান্টের হয়ে লড়ার জন্য দু'জন আইনজীবীকে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে পালটা সওয়াল করেনি তার আইনজীবী৷
বিশ্বজুড়ে নির্বিচার গুলিবর্ষণে যত হত্যা
মাঝে মাঝেই বিশ্বের নানা স্থানে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে মানুষ৷ সবশেষ তা ঘটেছে নিউজিল্যান্ডে৷ ২০০৭ সাল থেকে এমন ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/San Bernardino County Sheriff
১২ বছরে ৩০ হামলা
এক প্রতিবেদনে ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্বিচার গুলিবর্ষণের ৩০টি বড় ঘটনা উল্লেখ করেছে রয়টার্স৷ এসব হামলায় বিশ্বজুড়ে ৮০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/San Bernardino County Sheriff
সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে
সবচেয়ে বেশি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে৷ স্কুল, রেস্টুরেন্ট, চার্চ, এমনকি বাদ যায়নি ইমিগ্রেশন সেন্টারও৷ গত ১২ বছরে দেশটিতে ১৮ টি বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন মোট ৩৪৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুকধারীদের হামলার অন্যতম লক্ষ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ এর মধ্যে ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটিতেই বন্দুকধারী সবচেয়ে বেশি ৩২ জনকে হত্যা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Maury
নাইটক্লাব থেকে সংগীত উৎসব
১ অক্টোবর, ২০১৭৷ লাস ভেগাসে চলছিল সংগীত উৎসব৷ ৬৪ বছর বয়সি এক বন্দুকধারী পাশের হোটেলের ৩২ তলা থেকে শুরু করেন নির্বিচার গুলিবর্ষণ৷ ৫৮ জনের প্রাণ নিয়ে নিজেকেও হত্যা করেন এই প্রবীণ৷ এর আগে ১২ জুন, ২০১৬ সালে ফ্লোরিডার সমকামীদের একটি নাইটক্লাবে হামলার ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়৷
ছবি: Reuters/S. Nesius
বাদ যায়নি চার্চও
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর রোববারের প্রার্থনা চলছিল তখন৷ বন্দুকধারী সেসময় টেক্সাসের ফাস্ট ব্যাপটিস্ট চার্চে হামলা চালায়৷ এতে ২৬ জন প্রাণ হারান৷ বন্দুকধারী ক্ষান্ত হন নিজেকে গুলি করে৷
১২৯ জনের মৃত্যু হয় ফ্রান্সে ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ সালের হামলায়৷ একাধিক হামলাকারী গোটা প্যারিসজুড়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায়৷ তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এর দায় স্বীকার করে৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Ena
হামলার শিকার বুরকিনা ফাসো
একাধিক বন্দুকধারী এই হামলাটি চালায় বুরকিনা ফাসোর একটি রেস্টুরেন্টে৷ ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারির ঘটনাটিতে ২৯ জন মারা যান৷
ছবি: Reuters/Reuters TV
টিউনিসিয়ায় দুই দফা
২৫ জুন ২০১৫ সালে ছাতায় লুকিয়ে বন্দুকসহ টিউনিসিয়ার একটি হোটেলে ঢুকে বিভিন্ন দেশের ৩৯ জনকে হত্যা করেন এক ব্যক্তি৷ একই বছরের মার্চে সামরিক বাহিনীর পোশাকে দেশটির জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশ করে ২২ জনকে হত্যা করেন আরেক বন্দুকধারী৷ দুটি ঘটনারই দায় স্বীকার করে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Imago
কেনিয়ার শপিং মলে হামলা
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির একটি শপিং মলে ৬৭ জনকে হত্যা করে বন্দুকধারী৷ ২০১৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের এই ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্টের স্বজনও মারা যান৷
ছবি: Reuters
নরওয়ের ইয়ুথ ক্যাম্পে হামলা
নরওয়ে৷ ২২ জুলাই, ২০১১ সাল৷ চলছিল দেশটির ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির ইয়ুথ সামার ক্যাম্প৷ পুলিশের পোশাক পরে বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সেখানে ৬৯ জনকে হত্যা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা
জুম্মার নামাজ আদায়ের সময়ে দুটি মসজিদের মুসল্লিদের উপর গুলিবর্ষণে নিহত হন ৫০ জন, আহত ৪০ জন৷ গত ১৫ মার্চের এই ঘটনা নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড৷