জার্মানির কাউফ বয়রেন শহরের মসজিদটিতে আর সব মুসল্লির জায়গা হয় না৷ তাই নেয়া হয়েছিল নতুন মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ৷ কিন্তু গণভোট রায় দিয়েছে বিপক্ষে৷ ফলে সেখানে সরকারি জমিতে নতুন মসজিদ নির্মাণ আর সম্ভব হচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
বাভারিয়ার ছোট্ট শহর কাউফবয়রেন৷ শহর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে আরেকটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল তুর্কি মুসলমানদের ধর্মীয় সংগঠন ডিআইটিআইবি৷ কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে বড় একটা অংশের আশঙ্কা, এলাকায় আরেকটি মসজিদ হলে মুসলমানদের আধিপত্য আরো বাড়বে এবং তা ‘ইসলামীকরণ'-এ সহায়ক হবে৷ সে আশঙ্কা দূরে রাখতেই অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভ্যার্নার গ্যোপেলের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল গণভোট৷ রোববার অনুষ্ঠিত সেই গণভোট মসজিদ নির্মাণের বিপক্ষে রায় দিয়েছে কাউফবয়রেনের মানুষ৷
মসজিদ নির্মাণ ইস্যুতে জার্মানিতে এটি অবশ্য প্রথম গণভোট নয়৷ ‘মোর ডেমোক্রেসি', অর্থাৎ ‘আরো গণতন্ত্র' নামের একটি বেসরকারি সংস্থা জানাচ্ছে, এর আগে ২০০২ সালে হেসে রাজ্যের শ্লুস্টার্ন শহরে ‘মসজিদ নির্মাণ করা হবে কিনা' এমন প্রশ্নে স্থানীয় জনগণের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল গণভোটের মাধ্যমে৷ সেই গণভোট অবশ্য মসজিদ নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছিল৷
কাউফবয়রেনের মানুষ ৫০০০ বর্গ মিটারের সরকারি জমিতে মসজিদ নির্মাণের বিপক্ষে রায় দেয়ায় ডিআইটিআইবি হতাশ৷ তবে ডিআইটিআইবির কাউফবয়রেন শাখার চেয়ারম্যান ওসমান ও্যসটুর্ক জানিয়েছেন, গণরায় তাঁরা মেনে নেবেন৷
গণরায় সরকারি জমিতে মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করলেও এখনো মসজিদ নির্মাণের একটি পথ খোলা আছে৷ চাইলে জমি কিনে মসজিদ নির্মাণ করতে পারবে ডিআইটিআইবি৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷