জার্মানিতে মসজিদ নির্মাণ বা উন্নয়ন কাজে আরব দেশগুলোর থেকে নেওয়া অনুদান নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার৷ ধর্মীয় উগ্রবাদ নিরুৎসাহিত করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন৷
বিজ্ঞাপন
যে-কোনো দেশ থেকে মসজিদ বিষয়ক অনুদান প্রসঙ্গে নিবন্ধন করার আহ্বান জানানো হয়েছে আরব বিশ্বের প্রতি৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দৈনিক জুড ডয়চে সাইটুং ও এনডিআর ও ডাব্লিউডিআরকে জানায়, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ অন্যান্য আরব দেশগুলোর প্রতি মসজিদ বিষয়ক অনুদান একটি নিবন্ধনের মাধ্যমে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
আন্তর্জাতিক ও দেশি গোয়েন্দা সংস্থাকে কারা অনুদান দিচ্ছে ও কারা গ্রহণ করছে – এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়৷ জার্মানির কোনো ধর্মীয় সংগঠন আরবদেশগুলোর কাছে সহায়তা ও সমর্থন চাইলে সেটি দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে জার্মান প্রশাসন৷
গত নভেম্বরে হয়ে যাওয়া ইসলামিক সম্মেলনের সময় থেকেই ধর্মীয় অনুদান ও প্রভাবের বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে৷ সে সময় জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরব দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান তারা যেন জার্মানির মসজিদগুলোর ওপর কোনোধরনের প্রভাব না খাটায়৷ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে মসজিদে অনুদান প্রসঙ্গে কুয়েতের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়ে গেছে৷ তবে অন্যান্য দেশগুলো এখনো কিছু জানায়নি৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই গির্জার মতো মসজিদ থেকেও কর নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জার্মান সরকার৷ জার্মানিতে ৪৪ থেকে ৪৭ লাখ মুসলমান বাস করে৷ মুসলমানদের করের ব্যবস্থা না থাকায় মসজিদগুলোকে দানের উপর নির্ভর করতে হয়৷ বেশিরভাগ অনুদানই এসেছে আরব দেশগুলো থেকে৷ মসজিদে অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও নজরে এসেছে৷ তাই অনুদানকে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছে জার্মান সরকার৷