আয়া সোফিয়ার পর এবার আরেকটি ঐতিহাসিক স্থাপনাকে মসজিদে রূপান্তর করল তুরস্কের সরকার৷ শুক্রবার প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের এই সিদ্ধান্ত সরকারের অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
স্থাপনাটি খোরা বা কারিয়া হিসেবে পরিচিত৷ গেজেট অনুযায়ী রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সেটিকে মসজিদে পরিণত করার ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন৷ শিগগিরই স্থাপনাটি মুসলিমদের প্রার্থনার জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে৷ তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ প্রকাশ করা হয়নি৷
আয়া সোফিয়ার মতই খোরা বা কারিয়া এতদিন জাদুঘর ছিল৷ চতুর্থ শতকে রোমান সম্রাট কনস্টান্টিন দ্যা গ্রেটের শাসনামলে চার্চ হিসেবে এটি গড়ে ওঠে৷ এগারো থেকে বারো শতকে স্থাপনাটি বর্তমান রূপ নেয়৷ হোলি সেভিয়র নামে পরিচিত চার্চটির গায়ে চৌদ্দ শতকে বাইবেলে বর্ণিত ‘শেষ বিচারের' দেয়ালচিত্র আঁকা হয়৷
ষোল শতকে এটিকে মসজিদে রূপান্তর করে অটোমানরা৷ এসময় খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত দেয়ালচিত্রগুলোও মুছে দেয়া হয়৷ ১৯৪৫ সালে মসজিদটিকে জাদুঘরে পরিণত করার ঘোষণা দেয় তুরস্কের তৎকালীন সরকার৷ গত বছর আদালত এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়৷ তার প্রেক্ষিতে ৭৫ বছর পর এসে কারিয়াকে আবারো মসজিদে রূপান্তর করলেন এর্দোয়ান৷
এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে গ্রিস৷ একে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তবে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শুক্রবার স্থাপনাটির সামনে ইস্তানবুলের অনেক বাসিন্দা জড়ো হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম আন্দালু এজেন্সি৷ অনেকে সেখানে নামাজ পড়ার জন্যেও এসেছিলেন৷ ‘‘সিদ্ধান্ত জানার পর আমরা নামাজ পড়তে এসেছিলাম৷ কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে এটি এখনও নামাজের জন্য খোলা হয়নি৷ আমরা (মসজিদ) খুলে দেয়ার অপেক্ষায় আছি,'' বলেন কিউমা এর নামের একজন৷
গির্জা থেকে মসজিদ, মসজিদ থেকে জাদুঘর, আবার জাদুঘর থেকে মসজিদ হলো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য আয়া সোফিয়া৷ শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের নেতৃত্বে আয়া সোফিয়ায় জুম্মার নামাজে অংশ নেন মুসল্লিরা৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নেতৃত্বে এর্দোয়ান
শুক্রবার বিশাল মুসল্লি জমায়েত হয় আয়া সোফিয়ায়৷ ধর্মীয় টুপি মাথায় দিয়ে কোরান থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ করেন প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ প্রায় ৯০ বছর পর নামাজ আদায় হলো গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়া ১৪৮৩ বছরের পুরনো এই স্থাপনায়৷
ছবি: picture-alliance/AA/S. Zeki Fazlioglu
ভিভিআইপি উপস্থিতি
এর্দোয়ানের মন্ত্রিসভার অনেক মন্ত্রী ছাড়াও বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাও নামাজে উপস্থিত ছিলেন৷ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী আলী এরবাস খুতবায় বলেন, ‘‘ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদে হামলা হচ্ছে, বলপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, বোমা হামলা হচ্ছে, এমনকি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/press service Hagia Sophia/E. Oz
উপচে পড়া ভিড়
করোনা সংক্রমণে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও শুক্রবার আয়া সোফিয়ায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে৷ তবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়৷ অনেকেই ইতিহাসের অংশ হতে এদিন ভিড় জমান আয়া সোফিয়ায়৷
দুই সপ্তাহ আগেও আয়া সোফিয়া ছিল জাদুঘর৷ তবে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর্দোয়ান এই স্থাপনাটিকে আবার মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দেন৷ এই উদ্যোগ এর্দোয়ানের ইসলামপন্থি দল একে পার্টি ছাড়াও তুর্কি জাতীয়তাবাদীদেরও সমর্থন পেয়েছে৷ তবে তুর্কি সেক্যুলাররা এই স্থাপনাকে এতদিন খ্রিস্টান ও মুসলিমদের ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে দেখতেন৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
বিরোধীরা কী বলছেন?
সরকারপন্থিদের পক্ষ থেকে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিরোধীতাকারীদের নামাজ পড়তে না আসা নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে৷ তবে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির সদস্য এবং ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু জানিয়েছেন, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আমন্ত্রণই জানানো হয়নি৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
পর্যটনের কী হবে?
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আয়া সোফিয়া আগের মতোই সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷ তবে ভেতরে খ্রিস্ট ধর্মের নানা প্রতীক নামাজের সময় ঢেকে দেয়া হবে৷ আগে আয়া সোফিয়ায় প্রবেশমূল্য দিয়ে টিকেট কেটে ঢুকতে হতো৷ এখন বিনামূল্যেই পর্যটকেরা আয়া সোফিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন৷