যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গি বিমানের সহায়তা নিয়ে কুর্দি যোদ্ধারা মসুল বাঁধে এই অভিযান চালায়৷ সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, কুর্দি যোদ্ধারা এখন ওই বাঁধ এলাকা থেকে মাইন ও ফাঁদ (বু্বি ট্র্যাপ) সরানোর চেষ্টা করছেন৷ ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি গত ৭ আগস্ট থেকে দখল করে রেখেছিল আইএস৷ এই বাঁধ থেকেই ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আর পানি সরবরাহ করা হয়৷
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রবিবার কংগ্রেসে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন৷ চিঠির মূল বক্তব্য ইরাক পরিস্থিতি৷ তিনি চিঠিতে বলার চেষ্টা করেছেন ইরাকের অভিযানের বিস্তৃতি কমিয়ে আনা উচিত৷ কংগ্রেসে পাঠানো ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের রক্ষার ব্যাপারটিকেই বেশি জোর দিচ্ছে মার্কিন সেনাবাহিনী৷ মসুল বাঁধের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ফলে সেখানকার বেসামরিক নাগরিক এবং মার্কিন সেনাদের উপর বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা রয়েছে৷ এছাড়া ইরাকে মার্কিন দূতাবাসেও হামলা করতে পারে আইএস৷'' চিঠিতে আরো বলা হয়, কংগ্রেসকে এ বিষয়গুলো অবহিত করা জরুরি তাই বিস্তারিত জানানো হলো৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র কেইটলিন হেইডেন বলেছেন, ‘‘ইরাক সরকারের অনুরোধেই ঐ অভিযান চালানো হয়েছে৷''
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আইএস যোদ্ধাদের ব্রিটিনের জন্য বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন৷ তাদের রুখে দেয়ার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷ রবিবার টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘‘ইরাকে হয়ত সেনা পাঠানো ঠিক হবে না৷ তবে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে আইএস যাতে ত্রাস ছড়াতে না পারে সেজন্য কিছুটা হলেও সামরিক অভিযান চালানো যেতে পারে৷''
ইরাক ও সিরিয়ার বড় একটি এলাকার দখল নিয়ে সেখানে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট' জঙ্গিরা৷ গত জুনে ইরাকের মসুল এলাকার দখল নেয়ার পর থেকে হাজার হাজার ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে৷ উত্তর ইরাকে আইএস জঙ্গিদের হামলার মুখে ইয়াজিদি ও খ্রিস্টানরা পালিয়ে উত্তরের পবর্তমালায় আশ্রয় নিয়েছে৷
ইরাকের প্রধান কুর্দি দলের এক মুখপাত্র আলী আওয়ানী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘মসুল বাঁধ পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে৷ টাইগ্রিস নদীর উপর নির্মিত ঐ বাঁধ দখলে ১৪ দফা বিমান হামলা চালায় মার্কিন সেনাবাহিনী৷ এছাড়া হাডিথা এলাকায় অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ দখলের চেষ্টা করছে কুর্দি যোদ্ধারা৷ উত্তরাঞ্চলে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি, খ্রিস্টান, সাবাক এবং তুর্কমেন সম্প্রদায় অপহরণ ও মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছে বলে জানিয়েছে এএফপি৷