1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মস্কোর কাছে 'আরো কিছু' চায় তেহরান, কথা দিলেন না পুটিন

২৩ জুন ২০২৫

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ইরানের উপর হামলাকে ‘অপ্রয়োজনীয়' এবং ‘অযৌক্তিক' বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

ক্যারিকেচার: ইসরায়েল এবং ইরানের উদ্দেশে জলপাইয়ের ডাল মুখে সাদা পায়রা হিসাবে শান্তির প্রতীক উড়িয়ে দিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন
রাশিয়া শুরু থেকেই ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিলেও এই প্রস্তাবে সাড়া মেলেনিছবি: DW

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইরানকে কোনো সুনির্দিষ্ট সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেননি।

মস্কো ইরানের এক গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক। কিন্তু গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরও রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে তার অন্যতম অংশীদারের সমর্থনে জোরালো ভূমিকা রাখেনি।

১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের সমর্থনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে আরো সাহায্যের জন্য রাশিয়াকে অনুরোধ করতেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মস্কো পাঠিয়েছেন।

এর আগে একাধিকবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েল প্রকাশ্যেই ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন এবং আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে হত্যার বিষয়ে নানা ধরনের কথা বলেছে। রাশিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এমন পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।

ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলা নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদামির পুটিন। গত সপ্তাহে তিনি সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনে পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে রাশিয়ার মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।

ইরান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি পুটিনের সমর্থন চেয়ে খামেনেইর লেখা একটি চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন।

বৈঠকের শুরুর অংশ রাশিয়ার টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। সেখানে পুটিন আরাঘচিকে বলেছেন, "ইরানের বিরুদ্ধে এই একেবারেই অপ্রয়োজনীয় অযৌক্তিক আগ্রাসন।"

পুটিন আলাদা করে মার্কিন হামলার কথা উল্লেখ না করে বরং সার্বিকভাবে ইরানের ওপর 'হামলা' সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে কথা বলেছেন।

তেহরানের ও মস্কোর মধ্যে 'খুব ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘস্থায়ী' সম্পর্ককে স্বাগত জানিয়ে আরাঘচি পুটিনকে বলেছেন, রাশিয়া তেহরানের ‘অংশীদার এবং সহযোগী' ছিল এবং আছে।

এর উত্তরে পুটিন আরাঘচিকে বলেছেন, রাশিয়া "ইরানের জনগণকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে।" তবে সাহায্য বলতে পুটিন কী বুঝিয়েছেন, সে বিষয়ে ক্রেমলিন বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে রাশিয়া প্রকাশ্যে তেহরানকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয়নি।

রাশিয়া কোন ধরনের সহায়তা দিতে পারে, জানতে চাইলে বৈঠকের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র  দিমিত্রি পেশকভ সাংবাদিকদের বলেন, "সবই নির্ভর করছে ইরানের কী প্রয়োজন তার ওপর। আমরা মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছি।"

এর আগেও পুটিন ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাশিয়া ভূমিকা রাখতে পারে, এমন প্রস্তাব করলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। পুটিন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে অন্য কোনো ধরনের সহায়তা চায়নি।

পেশকভ বলেছেন, ইরানের উপর মার্কিন হামলা মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উপর প্রভাব ফেলবে না, কারণ দুটো ‘ভিন্ন বিষয়'।

পুটিনকে 'আরো বেশি কিছু করার' আহ্বান জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনেইর একটি চিঠি নিয়ে মস্কো গিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ইরান।

ইরানের সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, দেশটি চায় পুটিন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও কিছু করুক। তবে তেহরান ঠিক কী ধরনের সহায়তা চায়, সে সম্পর্কে সূত্রগুলি সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থান কী?

02:35

This browser does not support the video element.

চলমান সংঘাতে রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের পরীক্ষা

ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে সহায়তার জন্য ইরান থেকে অস্ত্র কিনেছে রাশিয়া। এই বছরের শুরুতে তেহরানের সঙ্গে একটি ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।

অংশীদারত্ব চুক্তিতে অবশ্য পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত কোনো ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ওয়াশিংটন যেভাবে ইউক্রেনকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং উপগ্রহ গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে, একইভাবে রাশিয়াও যাতে ইরানকে সমর্থন করে, এমন প্রস্তাব রাশিয়ার ভেতর থেকেই উঠেছে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ছাড়াও ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও প্রাণহানি ঘটেছে হামলায়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র সহায়তা ছাড়াও আন্তর্জাতিক চাপপ্রয়োগে রাশিয়ার আরো সক্রিয় ও জোরালো ভূমিকা চায় ইরান।

আপাতত অবশ্য নানা বিবৃতি এবং বক্তব্যেই রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ রয়েছে।

রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া, চীন এবং পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে তাৎক্ষণিক এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।

জাতিসংঘে রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনসিয়া ২০০৩ সালে ইরাক ইস্যুতে মার্কিন অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দেন। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল ২০০৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরাকে রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্রের মজুদ আছে দাবি করে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বিশ্বের জন্য একটি আসন্ন বিপদ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।

নেবেনসিয়া বলেন, "আবারও আমাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রূপকথার গল্প বিশ্বাস করতে বলা হচ্ছে, যাতে তারা আবারও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের উপর দুর্ভোগ ডেকে আনতে পারে। ইতিহাস যে আমাদের মার্কিন সহকর্মীদের কিছুই শেখায়নি, এ বিষয়ে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আরো শক্তিশালী হচ্ছে।"

এডিকে/এসিবি (রয়টার্স, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ