মঙ্গলবার মস্কো থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার সেনা একটি ড্রোনকে গুলি করে নামায়। যে অঞ্চলে ড্রোনটিকে গুলি করে নামানো হয়েছে, তার পাশেই আছে রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা গ্যাসপ্রমের একটি ডিপো। তবে রাশিয়ার সংবাদসংস্থাকে গ্যাসপ্রম জানিয়েছে, তাদের ডিপোয় কোনো ক্ষতি হয়নি।
মস্কোরগভর্নর আন্দ্রেই ভরোবাইঅভ জানিয়েছেন, ড্রোনটি ইউক্রেনের। কোলামনা অঞ্চলে গ্যাসপ্রমের ডিপো এবং একটি বেসামরিক কাঠামো ধ্বংস করার জন্যই ড্রোনটি পাঠানো হয়েছিল বলে তার দাবি। তবে তার আগেই রাশিয়ার সেনা ড্রোনটিকে গুলি করে নামিয়ে নেয়।
ছবিতে ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার সেনা ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Anatolii Stepanov/AFP/Getty Images
লাখ লাখ মানুষের জন্য কালো দিন
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে কিয়েভসহ ইউক্রেনের অনেক এলাকার নাগরিক এমন বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন৷ কারণ সেদিন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটি দেশের উপর আরেক দেশের সবচেয়ে বড় হামলা৷ হামলার পরপরই ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি করা হয়৷
ছবি: Ukrainian President s Office/Zuma/imago images
থিয়েটারে আশ্রয় নিয়েও রেহাই হয়নি
ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর কথা বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকা দখলের লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন৷ দনেৎস্কের মারিউপল শহরের বাসিন্দারা কয়েক সপ্তাহ বাড়ির বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ ছবিতে মারিউপল থিয়েটার ভবন দেখা যাচ্ছে যেখানে আশ্রয় নেয়া কয়েকশ মানুষ রাশিয়ার হামলায় প্রাণ হারান৷
ছবি: Nikolai Trishin/TASS/dpa/picture alliance
রেকর্ড পরিমাণ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট দেখা দেয়৷৷ জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর মতে, আশি লাখের বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান৷ পোল্যান্ড একাই প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেয়৷
ছবি: Anatolii Stepanov/AFP
বুচার ছবি বিশ্বকে চমকে দেয়
মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে রুশ সেনাদের সরিয়ে দিতে সমর্থ হয় ইউক্রেনের সেনাবাহনী৷ কিয়েভ দখল করার রাশিয়ার পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়৷ সেই সময় কিয়েভের কাছে বুচা এলাকায় রাশিয়ার নৃশংসতার চিহ্ন দেখা যায়৷ সেখানকার নাগরিকদের অত্যাচার ও হত্যার চিত্র বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়৷ রুশ বাহিনীর হাতে বুচায় ৪৬১ জন হত্যার শিকার হন বলে কর্মকর্তারা জানান৷
ছবি: Carol Guzy/ZUMA PRESS/dpa/picture alliance
পালাতে গিয়ে প্রাণহানি
এপ্রিলে ইউক্রেনের ডনবাস এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ এলাকা ছাড়তে সেখানকার ক্রামাটর্সক শহরের স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন অনেকে৷ কিন্তু সেখানে রাশিয়া হামলা চালালে ৬১ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ আহত হন ১২০ জন৷
হামলা থেকে বাঁচতে অনেক ইউক্রেনীয় পাতাল রেলস্টেশন বেছে নিয়েছিলেন৷
ছবি: Dimitar Dilkoff/AFP/Getty Images
প্রতিরোধের প্রতীক
যুদ্ধের প্রথম দিনই কৃষ্ণ সাগরের স্নেক আইল্যান্ড দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া৷ সেই সময় ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পন করতে না চাওয়ার একটি অডিও ভাইরাল হয়৷ জুনে ইউক্রেন জানায়, তারা স্নেক দ্বীপ থেকে রুশদের সরিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে৷
ছবি: Ukraine's border guard service/AFP
হতাহতের সংখ্যা অস্পষ্ট
এখন পর্যন্ত যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা কত তা অস্পষ্ট৷ জাতিসংঘ বলছে, কমপক্ষে সাত হাজার ২০০ সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন৷ আহতের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার৷ ইউক্রেনের কত সেনা মারা গেছেন তাও জানা যায়নি৷ ডিসেম্বরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা জানান, সংখ্যাটি ১৩ হাজার পর্যন্ত হতে পারে৷ নিরপেক্ষ তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Raphael Lafargue/abaca/picture alliance
ইউক্রেনকে পশ্চিমের অস্ত্র সহায়তা
যুদ্ধের শুরুর দিকে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হবে কিনা তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ পরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হাইমার্স রকেট লঞ্চার পায় ইউক্রেন৷ এটা দিয়ে যুদ্ধরত রাশিয়ার সেনাদের কাছে পুনরায় অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে বাধা দেয়া সম্ভব হয়৷ এছাড়া এই লঞ্চারের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছুটা রুখে দাঁড়াতে সমর্থ হয় ইউক্রেন৷
ছবি: James Lefty Larimer/US Army/Zuma Wire/IMAGO
মুক্তির স্বাদ
সেপ্টেম্বরের শুরুতে খারকিভে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ চালায় ইউক্রেন৷ হঠাৎ এই আক্রমণের পর রুশ সেনারা অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়৷ দক্ষিণের খেরসন শহর মুক্ত করতে সমর্থ হন ইউক্রেনের সেনারা৷ ছবিতে ইউক্রেনের সেনাদের দেখে উল্লসিত ইউক্রেনীয়দের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP/Getty Images
ক্রাইমিয়া ব্রিজে বিস্ফোরণ
অক্টোবরের শুরুতে ক্রাইমিয়া ব্রিজে বড় বিস্ফোরণ হয়৷ এতে ব্রিজের কিছু অংশ ভেঙে যায়৷ রাশিয়া বলছে, বিস্ফোরকবাহী একটি ট্রাকের কারণে এমন হয়েছে৷ আর কিয়েভ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি৷
ছবি: AFP/Getty Images
জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা
ক্রাইমিয়া ব্রিজে বিস্ফোরণের কিছুদিন পর ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ সে কারণে লাভিভ থেকে শুরু করে খারকিভ সব জায়গায় বিদ্যুতের অভাব দেখা দেয়৷ এরপর থেকে রাশিয়া জ্বালানি অবকাঠামোতে নিয়মিত হামলা করে এসেছে৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার পথে
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রতিদিন ভিডিও বার্তা দেয়া শুরু করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তার এই বার্তা ইউক্রেন ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের নেতা ও নাগরিকদের আকৃষ্ট করে৷ সে কারণে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমের সমর্থন বেড়েছে৷ দেশটি এখন ইইউর সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে আলোচনা করছে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
লেওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক পাচ্ছে ইউক্রেন
যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কয়েকটি দেশ ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মানবিক, সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে৷ তবে রাশিয়ার উদ্বেগের কথা ভেবে ইউক্রেনকে লেওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ সম্প্রতি ইউক্রেনকে ঐ ট্যাঙ্ক দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এই ট্যাঙ্কটি জার্মানির তৈরি৷
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
14 ছবি1 | 14
রাশিয়ার ভিতর কোনো আক্রমণই এখনো পর্যন্ত স্বীকার করেনি ইউক্রেন। এর আগে সীমান্ত অঞ্চলে সেনাঘাঁটিতে ড্রোন আক্রমণ হয়েছে। তার দায়ও ইউক্রেন স্বীকার করেনি। স্বাভাবিকভাবেই এদিনের ঘটনা নিয়েও ইউক্রেন কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়া অবশ্য ড্রোনটির মডেল এবং নম্বর প্রকাশ করে দিয়েছে। ইউজে-২২ এয়ারবর্ন মেকের ড্রোনটি মূলত ইউক্রেনই ব্যবহার করছে বলে রাশিয়ার দাবি। ইউক্রেনের উকারজেট সংস্থা এই ড্রোনগুলি তৈরি করে।
ইউক্রেন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অবশ্য সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, রাশিয়ার ভিতর প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূর পৌঁছে গেছিল ড্রোনটি। এরপর পুটিন নিশ্চয় ঘর থেকে বার হতে ভয় পাবেন। যে কোনো সময় তার সামনে ড্রোন পৌঁছে যেতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে রাশিয়ার সেনা দাবি করেছে, একটি নয়, দুইটি ড্রোনকে দক্ষিণ রাশিয়ায় গুলি করে নামানো হয়েছে। অন্য ড্রোনটির তথ্য অবশ্য এখনো দেওয়া হয়নি। প্রথম ড্রোনটির একটি ছবি প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বরফ ঢাকা রাস্তায় ড্রোনটি পড়ে আছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুইপক্ষই ড্রোন ব্যবহার করছে। এর আগে রাশিয়ার একাধিক ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে ইউক্রেন।