দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে মিত্র শাক্তির বিমান হামলা চালিয়ে বার্লিন গুঁড়িয়ে দেওয়া সময় বেঁচে যায় কুমিরটি৷ গুঞ্জন আছে, সেটি অ্যাডলফ হিটলারের পোষা ছিল৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার মস্কো চিড়িয়াখানায় ৮৪ বছর বয়সে কুমিরটি মারা যায়৷ শনিবার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সেটির মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলে, ‘‘প্রাণীরা যুদ্ধ বা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়৷''
১৯৪৩ সালের ২৩ নভেম্বর বোমা হামলার সময় বার্লিনের একটি চিড়িয়াখানা থেকে স্যাটার্ন নামের ওই কুমিরটি বেরিয়ে গিয়েছিল এবং যুদ্ধের পুরোটা সময় সাড়ে তিন মিটারের ওই প্রাণীটি নিজে নিজেই বেঁচে ছিল৷ ১৯৪৬ সালে বৃটিশ সেনারা সেটিকে খুঁজে পায়৷
যুদ্ধের বছরগুলোতে স্যাটার্ন কিভাবে টিকে ছিল তা কেউ জানে না৷ খুঁজে পাওয়ার পর সেটিকে মস্কোর চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেন, কুমিরটি দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং বুড়ো হয়ে মারা গেছে৷
‘‘প্রকৃতিক পরিবেশে এ ধরনের কুমির সর্বোচ্চ ৫০ বছর বাঁচে৷’’
মস্কো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ টুইটারে স্যাটার্নের একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছে, ‘‘স্যাটার্নকে ৭৪ বছর রাখতে পেরে মস্কো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সম্মানিত বোধ করছে৷ সে আমাদের অনেককে শিশুকাল থেকে চেনে৷ আশা করি আমরা তাকে হতাশ করিনি৷''
হিটলারের পোষাপ্রাণী
স্যাটার্নকে মস্কোতে নিয়ে যাওয়ার পর গুঞ্জন ছিল, বার্লিন চিড়িয়াখানার নয় বরং সেটি হিটলারের পোষাপ্রাণী ছিল৷ যদিও ওই গুঞ্জনের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ সম্ভবত, স্যাটার্ন ১৯৩৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয় এবং সেখান থেকে সেটিকে বার্লিনে আনা হয়৷
বিবৃতিতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘মস্কোতে আনার পরপরই কুমিরটি হিটলারের কাছে ছিল বলে গল্প রটে গিয়েছিল৷ জার্মানিতেও এই গল্প রটে৷
‘‘এটা আসলে গল্পই, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷ আর যদি সত্যই কুমিরটি কারো পোষা হয়েও থাকে.....তবুও যুদ্ধ বা রাজনীতির সঙ্গে প্রাণীদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তাই মানুষের পাপের বোঝা সেটির উপর চাপানো খুব হাস্যকর৷''
হিটলার কে ছিলেন?
‘হিটলার কে ছিলেন’ প্রশ্নটি হ্যারমান প্যোল্কিং-এর বহুল পঠিত বইয়ের বিষয়৷ হিটলারের নিজের এবং তার সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন উদ্বৃতিও উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে৷ সেগুলোরই কয়েকটি থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP
শিশু অ্যাডলফ হিটলার (১৮৯০)
‘‘পরিবারের অন্য সবার চেয়ে সে ব্যতিক্রম ছিল৷’’ – মা ক্লারা হিটলারকে উদ্বৃত করে অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কে এ কথা জানিয়েছিলেন তার ছোটবেলার বন্ধু অগুস্ট ক্যুবিসেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিন্সে ক্লাসের ছবি, ১৯০০/০১
‘‘সে নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিল, ভারসাম্যহীনও ছিল, তবে সহিংস ছিল না৷ অবশ্য অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল৷ আর সে কঠোর পরিশ্রমীও ছিল না’’ – বলেছেন হিটলারের ফরাসি শিক্ষক ড. এডওয়ার্ড হুয়েমার৷ (ছবিতে একেবারে উপরের সারির ডানদিকের কোণায় হিটলারকে দেখা যাচ্ছে৷)
ছবি: picture-alliance/akg-images
অ্যাডলফ হিটলারের নিজের পোট্রেট
‘‘আত্মীয়স্বজনরা তাকে এমন ফালতু মনে করতো, যে কিনা সব ধরনের কঠিন কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতো,’’ অ্যাডলফ হিটলারের ছোটবেলার বন্ধু অগুস্ট কুবিসেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কর্পোরাল হিটলার
‘‘ইহুদিদের প্রতি হিটলারের তীব্র ঘৃণা কেন ছিল তার কারণ আমি কখনো প্রকাশ করিনি৷ বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা হয়ত এতে সামান্য অবদান রেখেছিল,’’ লিস্ট রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট ফ্রিৎস ভিডারমান৷
ছবি: Getty Images
অ্যাডলফ হিটলার (১৯৩৩)
‘‘উচ্চশ্রেণির মানুষেরা হিটলারের কাছে ঘেঁষতে চেয়েছে৷ এ রকম পরিবর্তনশীল মানুষদের জন্য আমার দাদার এক জুতসই ফর্মুলা ছিল: আপনি তাদের চোখে থুতু ছিটাবেন আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা’’, জার্মান ইহুদি সাংবাদিক বেলা ফ্রম৷ (জানুয়ারি ২৯, ১৯৩২)
ছবি: Ullstein
প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের কাছ থেকে ক্ষমতা নিচ্ছেন চ্যান্সেলর হিটলার, ১৯৩৩
‘‘আমি ক্ষণিকের জন্যও ভুলিনি যে, নাৎসিরা শত্রু – আমার শত্রু এবং আমার প্রিয় সবার শত্রু৷ তবে আমি একটা ক্ষেত্রে ভুল করেছিলাম, তা হচ্ছে, তারা কতটা ভয়াবহ শত্রু হবে সেটা আন্দাজ করতে পারিনি৷’’ – সেবাস্তিয়ান হাফনার, সাংবাদিক৷
ছবি: ullstein bild
ব্যাইরুথে হিটলার (১৯৩৮)
‘‘আমি এটা নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি যে, সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার আগে আমি হিটলারের যুদ্ধ চলাকালে অনারোগ্য রোগীদের ধ্বংস করে দেয়ার আকাঙ্খা সম্পর্কে জেনেছিলাম৷ তিনি বলেছিলেন তারা নাকি অপ্রয়োজনীয় ভক্ষক৷’’ – ফ্রিৎস ভিডারমান, ১৯৩৯ সালের ১৯ জানুয়ারি অবধি অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি পার্টির অ্যাডজুটেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ওবারসাল্সবার্গে হিটলার
‘‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স একটি সাধারণ যুদ্ধে জড়াবে না৷’’ ১৯৩৯ সালের ১৩ আগস্ট ওবারসাল্ফবার্গে আর্মি জেনারেলদের বলেছিলেন হিটলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
আলবার্ট স্পিয়ার এবং অ্যাডলফ হিটলার, ১৯৩৮
‘‘যুদ্ধের পুরো সময়টাতে হিটলার কখনো বোমাবর্ষণের শিকার কোনো শহর দেখতে যাননি৷’’ আলবার্ট স্পেয়ার, রাইশ মিনিষ্টার অফ আর্মামেন্টস অ্যান্ড ওয়ার প্রোডাকশন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভোল্ফ’স লেয়ারে গুপ্তহত্যা চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর হিটলার, ১৯৪৪
‘‘আমি সেখানে হিটলারকে দেখেছি, যিনি কিনা আমার বিক্ষিপ্ত অভিব্যক্তির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন৷ তিনি শান্তভাবে বলেছিলেন, ‘লিঙ্গে, কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল৷’’’ – অ্যাডলফ হিটলারের খানসামা হাইন্স লিঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance
অ্যাডলফ হিটলার এবং হ্যারমান গ্যোরিং, ১৯৪৪
‘‘আমি জানি, যুদ্ধে আমরা পরাজিত হয়েছি৷ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব পরিষ্কার৷ আমি এখন আমার মাথায় গুলি করতে চাই৷ [কিন্তু] আমরা আত্মসমর্পন করি না৷ কখনো না৷ আমরা হারতে পারি৷ কিন্তু নিজেদের সঙ্গে একটা দুনিয়া নিয়ে যাবো৷’’ ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরের শেষে অ্যাডজুট্যান্ট নিকোলাউস ফন বেলো-কে বলেছিলেন হিটলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Fine Art Images
সংবাদপত্রে হিটলারের মৃত্যু সংবাদ, ১৯৪৫
‘‘একজনের মনে হতে পারে, হিটলারের মৃত্যু এখন বরং অর্থহীন৷ তার আরো আগে মরা উচিত ছিল৷ আমি ভাবছি, কতজন মানুষ তিনি চড়চড় করে পুড়ছেন ভেবে নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে৷’’ – স্কটিশ লেখক নাওমি মিচিসন৷