বুধবার ভোররাতে মস্কো ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক আকারে ড্রোন হামলা হয়েছে বলে রুশ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে৷ ইউক্রেনের লাগাতার হামলা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো তেমন জোরালো পালটা পদক্ষেপ নেয়নি৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ রাশিয়ার ভুখণ্ডে আরো স্পষ্ট করে তোলার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভের নেতৃত্ব৷ সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের অংশবিশেষ দখল করে রয়েছে ইউক্রেন৷ বুধবার ভোররাতে রাজধানী মস্কোর উপর একাধিক ড্রোন হামলা ঘটেছে৷ শহরের মেয়র সের্গেই সোবইয়ানিন জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত অন্যতম বড় আকারের হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন৷
টেলিগ্রামে নিজের চ্যানেলে তিনি দাবি করেন, যে মস্কো ও সংলগ্ন এলাকার আকাশে কমপক্ষে দশটি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে৷ তাঁর মতে, এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি৷ উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাসের পর ইউক্রেন মস্কোর উপর এত বড় আকারের ড্রোন হামলা চালায়নি৷ বুধবার রুশ কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন যে, সীমান্তের কাছে ব্রিয়ানস্ক ও অন্যান্য অঞ্চলের উপর ১৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে৷
গত কয়েক মাসে রাশিয়ার ভূখণ্ডে পালটা হামলা ও নাশকতার চেষ্টা জোরালো করেছে ইউক্রেন৷ বিশেষ করে অবকাঠামো ধ্বংস করে মস্কোর যুদ্ধের ক্ষমতা যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করছে সে দেশ৷ যেমন, তেল ও গ্যাস স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে৷ ইউক্রেনের ভূখণ্ডে লাগাতার হামলার জবাব হিসেবে কিয়েভের নেতৃত্ব এমন পালটা পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম অবকাঠামোর উপর সফল হামলার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন৷ তাঁর মতে, এমন হামলা বর্তমান সংকটের ‘ন্যায্য সমাপ্তি' আনতে সাহায্য করবে৷
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের বেড়ে চলা হামলা সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ইউক্রেনের মদতকারী দেশগুলি বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্বে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ রাশিয়ার চোখরাঙানি সত্ত্বেও একের পর এক ‘সাহসি' পদক্ষেপের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেন এখনো তেমন জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখেনি৷ ফলে মস্কোর ‘লাল সীমা' আসলে ভাঁওতা কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলির সরবরাহ করা সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার নিয়েও কিছু দেশে অস্বস্তি রয়েছে৷ তবে এখনো পর্যন্ত কিয়েভের উদ্যোগে রাশ টানার তেমন প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না৷
রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা সত্ত্বেও সে দেশের নেতৃত্ব এখনো জোরালো প্রতিরোধ দেখাতে না পারায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের দুর্বলতা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ তবে মস্কোর ক্ষমতাকেন্দ্রে তা নিয়ে কতটা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ পুটিন মঙ্গলবার চেচেন প্রজাতন্ত্রে গিয়ে সেখানকার অনুগত নেতা রামজান কাদিরভের সঙ্গে চেচেন যোদ্ধা ও স্বেচ্ছাসেবীদের পরিদর্শন করেন৷ প্রায় ১৩ বছর পর তিনি চেচনিয়া সফর করলেন৷
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।