টিউমার দূর করতে লাগে ব্রেন সার্জারি৷ আবার রেডিও সার্জারি-ও করা যায়৷ সেটা হল সাইবার ছুরি দিয়ে বিনা ব্যথার, কম সময়ের অস্ত্রোপচার, যেমন করা হয় বার্লিনের শারিটে হাসপাতালে৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের ‘শারিটে' হাসপাতালে ডাক্তাররা হাই-টেক সাইবার-নাইফ বা সাইবার ছুরি ব্যবহার করছেন ২০১১ সাল থেকে৷ পাঁচশো'র বেশি রোগীর উপর এ ভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে৷
নিউরোসার্জন ড. মার্কুস কুফেল্ড বলেন, ‘‘রোগীর পক্ষে রেডিও সার্জারি-র সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এই যে, সব কিছু ঠিকমতো চললে আমরা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে টিউমারটা ধ্বংস করে ফেলতে পারি৷''
মাথাটা ঠিক জায়গায় ধরা থাকে শুধু একটা হালকা, কাস্টম-মেড প্লাস্টিকের মুখোশ পরিয়ে৷ সাইবার-নাইফ-এর রশ্মি যাতে অন্য কোথাও না পড়ে, সোজা টিউমারে গিয়ে লাগে, সেজন্য আগে থেকে এক্স-রে করে নেওয়া হয়৷ টিউমারটা ঠিক কোথায়, সেটা নির্দিষ্ট করার জন্য ঐ তথ্যের প্রয়োজন৷
মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর পাঁচটি খাবার
কিছু খাবার এত সুস্বাদু যে যতই খাওয়া হোক, তৃপ্তি যেন মেটেনা৷ কিন্তু সব খাবার তৃপ্তি মিটিয়ে খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জনপ্রিয় পাঁচটি খাবার একটু বেশি খেলে মস্তিষ্কের জটিল রোগও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Kesu
গরুর মাংস, খাশির মাংস...
মাংস অনেকেরই প্রিয়৷ গরু বা খাশির মাংস, চিকিৎসকরা যেগুলোকে ‘রেড মিট’ বলেন, সেগুলো তো কারো কারো প্রতিদিনের খাবার৷ এসব মাংস প্রতিদিন তো নয়ই, সপ্তাহে চার বারের বেশি না খাওয়াই উত্তম৷ গবেষকরা বলছেন, ‘রেড মিট’ সপ্তাহে চারবারের বেশি খেলে আলৎসহাইমার ঝুঁকি বাড়ে৷
ছবি: HLPhoto/Fotolia.com
মাখন বেশি খেলেও মহাবিপদ
দিনে এক চা চামচের পরিমাণ মাখন বা (বিভিন্ন প্রাণীর চর্বি থেকে তৈরি) মার্জারিন খাওয়া যেতে পেরে, কিন্তু এর বেশি হলেই বিপদ৷ গবেষকরা বলছেন, মাখন বা মাখনজাতীয় খাবার না খেয়ে খাদ্য তালিকায় অলিভ অয়েল যোগ করা সবচেয়ে নিরাপদ৷ তাহলে মস্তিষ্কের রোগের আশঙ্কা খুব একটা থাকবেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Eebener
বেশি খেলে পনিরও ক্ষতিকর
পনির খুব সুস্বাদু৷ মস্তিষ্কের জটিল রোগ আলৎসহাইমার থেকে দূরে থাকতে চাইলে সপ্তাহে মাত্র একবার পনির খেতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Volker Gerstenberg
তেলে ভাজা এবং ফাস্টফুড
তেলে ভাজা খাবার এমনিতেই নানা রোগের কারণ৷ ফাস্টফুডও তাই৷ এ ধরণের খাবার ডাক্তাররা এমনিতেই কম খেতে বলেন৷ আলৎসহাইমার-এর ঝুঁকি আছে এমন লোকদের তো এসব থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতেই হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেস্ট্রি এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবার
মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি৷ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য তো মিষ্টি এক অর্থে ‘হারাম’, অন্যদেরও উচিত মিষ্টি কম খেয়ে মস্তিষ্কটাকে নিরাপদ রাখা৷ বেশি মিষ্টি খাচ্ছেন? তাহলে আলৎসহাইমারের সঙ্গে কিন্তু আপনার দূরত্ব কমছে!
ছবি: Roland Förch
5 ছবি1 | 5
শারিটে হাসপাতালের ব্রেন সার্জন ও রেডিওলজিস্টরা একত্রে সিদ্ধান্ত নেন, কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হবে৷ রেডিওলজি-র রোবট শুধু ছোট, স্পষ্ট আকারের টিউমার বিনষ্ট করতে পারে৷ তবুও, প্রথাগত নিউরোসার্জারি যখন আর কাজ করে না, তখন রেডিও সার্জারি সাহায্য করতে পারে৷
ব্রেন সার্জারি আর সাইবার-নাইফ
নিউরোসার্জন প্রফেসর পেটার ভাইকোৎসি বলেন, ‘‘সাধারণ ব্রেন সার্জারি আর সাইবার-নাইফের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, ও দু'টো পরস্পরের পরিপূরক প্রক্রিয়া৷ মাথার খুলির তলার দিকে যে সব টিউমার থাকে, সে সব ক্ষেত্রে সাইবার-নাইফ-ই ভালো, কেননা সাইবার-নাইফ নিখুঁতভাবে সেই সব জায়গায় পৌঁছতে পারে, যেখানে আমরা সার্জনরা কাছাকাছি টিস্যুর বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলব৷''
ইরিস গাইগার-এর ব্রেন টিউমার আছে৷ তিনি প্রযুক্তিতে বিশ্বাসী৷ হাই-টেক ট্রিটমেন্ট করালে তিনি উত্তরোত্তর ব্রেন সার্জারি ও তার গুরুতর সাইড-এফেক্ট থেকে রেহাই পাবেন৷ রেডিও সার্জারির অপারেশনে কোনো ব্যথা নেই, রোগীর পুরোটা সময় জ্ঞান থাকে৷ রশ্মি দিয়ে শুধুমাত্র টিউমারটা বিনষ্ট করা হয়, সুস্থ ব্রেন টিস্যুর কোনো ক্ষতি হয় না৷
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী ৭টি খাবার
প্রতিদিন হাজার চিন্তার সঠিক কাজটা করতে হয় মস্তিষ্ককে৷ তাই তার জন্য চাই প্রকৃত খাবার৷ কীভাবে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সক্রিয় রাখবেন – এখানে থাকছে তেমনি কিছু খাবারের তালিকা৷
ছবি: Fotolia/gaai
ডার্ক চকোলেট
প্রতিদিন এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে৷ অল্প পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
আখরোট
আখরোটে অন্যান্য বাদামের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে৷ এটি মস্তিষ্ককে যে কোনো রোগ থেকে রক্ষা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টমেটো
টমেটো – সহজলভ্য এই সবজিটি মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কারণ এতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচায়৷ এছাড়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে টমেটো৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTOs
স্যামন ও সামুদ্রিক মাছ
মানুষের মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে তৈরি৷ তাই এটিকে সক্রিয় রাখতে প্রয়োজন ফ্যাটি অ্যাসিড৷ সামুদ্রিক মাছ যেমন – স্যামন, টুনা ও অন্য সামুদ্রিক মাছ মস্তিষ্কের খাবার হিসেবে বেশ উপকারী৷ কারণ এই খাবারগুলোতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আলজইমার রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
গ্রিন টি
গবেষকরা বলছেন, গ্রিন টি মস্তিষ্কের সংযোগ ক্ষমতা বাড়ায়, সেই সাথে পারকিনসন্স ও স্মৃতিভ্রংশের হাত থেকে রক্ষা করে৷ চিনি ছাড়া দিনে তিন কাপ সবুজ চা আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপকারী৷
ছবি: Fotolia/gaai
ব্লু বেরি
বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বাড়াতে ব্লু বেরির জুড়ি নেই৷ এতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েডস৷ এছাড়া এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে৷ মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে এটি৷ পারকিনসনস আর আলজাইমার থেকেও রক্ষা করে ব্লু বেরি৷
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা মস্তিষ্কের সংযোগ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়৷ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও রয়েছে, আছে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে, যা ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে৷
ছবি: Fotolia/JOETEX1
7 ছবি1 | 7
সাইবার-নাইফ সেন্টার-এর প্রধান ড. মার্কুস কুফেল্ড বললেন, ‘‘প্রত্যেকটি একক রশ্মির খুব বেশি রেডিয়েশন নেই, কাজেই সুস্থ টিস্যুকে খুব বেশি রেডিওঅ্যাক্টিভিটি সহ্য করতে হয় না৷ ম্যাগনিফাইং লেন্স-এর মতো, রশ্মিগুলোকে টিউমারের ওপর ফোকাস করা হয়, যার ফলে টিউমারটা বড় মাপের, কার্যকরি রেডিয়েশন পায়৷''
এখন একটা রোবট যখন সার্জনের কাজ হাতে নেয়, তখন সেই রোবট বিভিন্ন দিক থেকে প্রায় দু'শো ফোটন রশ্মি ছোঁড়ে৷ টিউমার যদি রিল্যাপ্স করে, তাহলে এই অপেক্ষাকৃত মোলায়েম ট্রিটমেন্ট রিপিট করা যেতে পারে৷
নতুন জীবন
ইরিস গাইগার বলেন, ‘‘বিগত কয়েক বছরে আমি যেন আমার জীবন থেকে আরো অনেক বেশি পেয়েছি৷ আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছিল, জীবনটা কতো ছোট৷ এই প্রযুক্তি ছাড়া আমার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা ছিল না৷ সাইবার-নাইফ দিয়ে অপারেশন না করলে, আজ আমি বেঁচে থাকতাম না৷''
ইরিস গাইগার-কে নতুন জীবনের মেয়াদ দিয়েছে সাইবার-নাইফ৷ মেটাস্টাসিস-গুলো যদি আবার আসে, তাহলে রেডিও সার্জারি আবার তাঁর জীবন বাঁচাতে পারে৷
মস্তিষ্কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেসব খেলা
খেলা অবশ্যই ভালো৷ কিন্তু কিছু খেলা আপনার জীবন কেড়ে নিতে পারে৷ দূরে থাকুন এসব খেলা থেকে৷ সাবেক জার্মান গোলরক্ষক টিম ভিসে চাইলে একজন রেসলার হতে পারতেন৷ কিন্তু হননি৷ কারণটা জানতে দেখুন ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মস্তিষ্ক যখন আঘাতপ্রাপ্ত
গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা রেসলিং করেন, তাঁদের অনেকেরই মস্তিষ্কে ভয়াবহ আঘাত লাগে৷ ক্যানাডার রেসলার ক্রিস বেনোয়া মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যান৷ চিকিৎসকরা তাঁর মস্কিষ্ক পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন ক্রিসের মস্তিষ্ক এতটাই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে যে, সেটা ৮৫ বছরের একজন আলজাইমার রোগীর মস্তিষ্কের সাথে তুলনা করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Affonso Gavinha/WWE
পাঞ্চ-ড্রাঙ্ক সিনড্রোম
চিকিৎসকদের কাছে এই রোগটির নাম হলো ক্রনিক বক্সার’স এনসেফালোপ্যাথি অথবা পাঞ্চ-ড্রাঙ্ক সিনড্রোম৷ যখন কোনো মুষ্টিযোদ্ধা অবিরাম মস্তিষ্কে আঘাত পেতে থাকেন এবং মস্তিষ্ক ক্ষতির শিকার হয়, তখন এই লক্ষণ দেখা দেয়৷ এর ফলে স্মৃতি নিয়ে সমস্যা, কথা বলার শক্তি হ্রাস, আত্মহত্যা চিন্তা এবং সবশেষে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যায় মানুষটির৷ পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধাদের এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture alliance/dpa Marcus Brandt
অ্যামেরিকান ফুটবল
ক্রনিক বক্সার’স এনসেফালোপ্যাথি কেবল মুষ্টিযোদ্ধাদের হয় এমনটা নয়৷ অ্যামেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা৷ সায়েন্স জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল লিগের খেলোয়াড়দের এক মৌসুমে ৬০০টি হেলমেট দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এরপরও এত শক্ত হেলমেট দিয়ে মস্তিষ্কের আঘাত রোধ করতে পারেননি তাঁরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Drago Prvulovic
নীতিতে পরিবর্তন
ন্যাশনাল ফুটবল লিগ এনএফএল অবশ্য আগে বরাবরই তাদের খেলোয়াড়দের পাঞ্চ-ড্রাঙ্ক সিনড্রোম থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে৷ কিন্তু সময় পাল্টেছে৷ তাই এই আঘাত থেকে খোলোয়াড়দের প্রতিরোধ গড়তে তাঁরা নীতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
বরফ যখন বিপজ্জনক
আপনি যদি মস্তিষ্কের আঘাত এড়িয়ে চলতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে আইস হকি থেকে দূরে থাকতে হবে৷ কেননা বেশ কিছু হকি খেলোয়াড়দের মধ্যেও এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়৷ সমস্যাটা বেশি হয় মাথায় ঠোকাঠুকি এবং বরফে দুর্ঘটনার কারণে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/The Canadian Press/Jason Franson
ফুটবল খেলা
ফুটবল খেলার সময় যাঁরা হেড করেন, তাঁদের এই বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখতে হবে৷ এটা অ্যামেরিকান ফুটবল বা হকির চেয়েও মস্তিষ্কে কখনো কখনো মারাত্মক আঘাত হানতে পারে৷
ছবি: Reuters/Ina Fassbender
কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত
বেসবলও কিন্তু কখনো কখনো একটি ঝুঁকিপূর্ণ খেলা হয়ে উঠতে পারে৷ প্রথম যে বেসবল খেলোয়াড় পাঞ্চ-ড্রাঙ্ক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি ৩৬ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন৷ তবে এই সিনড্রমটি তখনই ধরা পড়ে, যখন কেউ মারা যাওয়ার পর তাঁর মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা হয়৷ একমাত্র ‘অটোপ্সি’ করলেই তা বোঝা যেতে পারে৷