সংগীত যে আমাদের শরীর-মন তরতাজা করতে পারে, তা অনুভব করতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না৷ তবে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের উপর সংগীতের প্রভাব সম্পর্কে নেদারল্যান্ডসের এক গবেষক নতুন দিশা দেখাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
সংগীতের ছন্দে আমরা নেচে উঠি৷ সংগীত আমাদের মুখে হাসি ফোটায়৷ সংগীত আমাদের হৃদয় খুলে দেয় – অর্থাৎ মনে আনন্দ দেয়৷ নেদারল্যান্ডসের মস্তিষ্ক গবেষক এরিক স্কের্ডার এমনটা মনে করেন৷ সংগীত শুনলে মানুষের মাথার মধ্যে ঠিক কী ঘটে, ‘সিঙ্গিং ইন দ্য ব্রেন' নামের বইয়ে তিনি তা বুঝিয়ে বলেছেন৷ নিউরোসাইকোলজির অধ্যাপক এরিক স্কের্ডার বলেন, ‘‘সাহিত্যে সংগীত সম্পর্কে বর্ণনায় একটি বিষয় উঠে এসেছে, যা হলো প্রত্যাশা৷ যে মুহূর্তে আপনি ভাবছেন, এটা তো খুব চেনা সুর, ঠিক সেই মুহূর্তে মস্তিষ্কের মধ্যে নিজেকে পুরস্কৃত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়৷ সেই প্রণালী আপনাকে ভাবতে শেখায় – সত্যি, এটাই তো চাই!''
আন্দ্রে রিউ-র মতো পেশাদারী সংগীতশিল্পীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের উপর সংগীতের প্রভাব আরও বেশি৷ স্বরলিপি পড়ে সঙ্গে সঙ্গে সংগীত সৃষ্টি করতে সাধারণ সংগীতপ্রেমীকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে হয়৷ এভাবে অবশ্য মস্তিষ্কেরও প্রশিক্ষণ চলে৷ পেশাদারী সংগীতশিল্পী কোনো এক সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই কাজ করতে পারেন৷ এরিক স্কের্ডার বলেন, ‘‘আপনি দেখবেন, উচ্চ মানের সংগীত সৃষ্টি করার সময়েও তাঁর মস্তিষ্কের অনেক কম অংশ সক্রিয় রয়েছে, নিউরাল সিস্টেম কম ব্যবহৃত হচ্ছে৷ সেটাই তাঁর দক্ষতা৷ এমনটা করে তাঁর মস্তিষ্কের অনেক নিউরাল সার্কিট অক্ষত থাকছে৷ সেই বাড়তি শক্তি জমা হচ্ছে৷ সেই শক্তি ব্যবহার করে তিনি আরও নিউরাল সিস্টেম সক্রিয় করে তুলবেন, যা তাঁকে আরও বড় মাপের সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে৷''
বিশেষ এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে আন্দ্রে রিউ ও তাঁর অর্কেস্ট্রা একটি সন্ধ্যায় প্রায় ১১,০০০ দর্শকের মনোরঞ্জন করলেন৷ মুগ্ধ দর্শকদের প্রতিক্রিয়াই তার প্রমাণ দিলো৷ কেউ বলেন, উদ্দীপনা যোগায়, প্রাণবন্ত করে তুলেছে৷ সবার মনে আরও আনন্দ এসেছে৷ কেউ বা হতবাক হয়ে পড়েছেন৷ কেউ হাসতে বা কাঁদতে চাইছেন৷
আবেগের এমন বহিঃপ্রকাশের পেছনে প্রধান বেহালাবাদক ফ্রাংক স্টেইন্স-এরও অবদান রয়েছে৷ তিনি ২৪ বছর ধরে আন্দ্রে রিউ-র ইয়োহান স্ট্রাউস অর্কেস্ট্রার সদস্য৷ ফ্রাংক বলেন, ‘‘বেহালা বাজানো শুরু করার সময় প্রত্যেকটি আঙুলের দিকে নজর দিতে হতো, ছড়ির প্রত্যেক টানের কথা ভাবতে হতো৷ আরও অধ্যয়ন করতে করতে সব কিছু উধাও হয়ে যায়, সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঘটে৷ মনে হয়, আমারই কোনো অংশ সেই কাজ করে দিচ্ছে৷ ফলে আমার মস্তিষ্ক অন্য কোনো কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে৷''
সংগীত শুধু আবেগ জাগিয়ে তোলে না৷ এরিক স্কের্ডার তাই সব স্কুলে উচ্চ মানের সংগীত শিক্ষার ডাক দিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের মস্তিষ্কের বিকাশ ৩০ বছর পর্যন্ত চলে৷ বিশেষ করে হোয়াইট ম্যাটার, প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স এই বয়স পর্যন্ত বিকশিত হয়৷ তাই সেই প্রক্রিয়া আদর্শ করে তুলতে মস্তিষ্ককে যতটা সম্ভব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে হবে, উদ্দীপিত করতে হবে৷ সংগীত তার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে৷''
আন্দ্রে রিউ ও তাঁর অর্কেস্ট্রা নিয়মিত সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন৷ মাসত্রিখট শহরে এক কনসার্টে দর্শকরা সেই সংগীত শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছেন৷
সংগীত: শোককে পরিণত করে শক্তিতে
ম্যানচেস্টারে বোমা বিস্ফোরণে হতাহত ব্যক্তিদের সম্মানে ও অর্থ সহায়তায় ৪ জুন ম্যানচেস্টারে ফের কনসার্টের আয়োজন করা হয়৷ প্রায় ৫০ হাজার সংগীত অনুরাগীর উপস্থিতিতে আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টটি জেগে ওঠার নতুন বার্তা দেয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/O. Humphreys
হতাহতদের জন্য বিশেষ কনসার্ট
২২ মে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে মার্কিন পপ সংগীত তারকা আরিয়ানার কনসার্টে আত্মঘাতী হামলায় ২২ জন নিহত হয়৷ আহত হয় ৬৪ জন৷ হতাহতদের সম্মানে এবং সহায়তায় ওল্ড ট্রাফোর্ডে ‘ওয়ান লাভ ম্যানচেস্টার’ নামের এই কনসার্টে আরিয়ানার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন সংগীত তারকা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/O. Humphreys
শোককে শক্তিতে রূপান্তর
ম্যানচেস্টারে হামলার ১৩ দিন পর গত রবিবার আয়োজিত কনসার্টের মঞ্চে আরিয়ানা উঠে এলে শোক যেন শক্তিতে পরিণত হয়৷ সংগীত যেন শোকে শক্তির সঞ্চার করে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Hogan
আরিয়ানার বার্তা
উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে আরিয়ানা বলেন, এখানে সমবেত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ৷ বলেন,‘‘আমি আপনাদের খুব ভালোবাসি৷ আমি মনে করি, আপনারা যে ভালোবাসা ও ঐক্য প্রদর্শন করছেন, তা ওষুধের মতো কাজ করছে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের জন্য এটা জরুরি৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/Dave Hogan
অন্য তারকাদের সঙ্গে আরিয়ানার পরিবেশনা
২৩ বছর বয়সি এই তারকা মাইলি সাইরাসের সঙ্গে গান পরিবেশন করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/Dave Hogan
মঞ্চে জাস্টিন
সংগীত পরিবেশ করছেন জাস্টিন বিবার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Dave Hogan
ফ্যারেলের সঙ্গে মাইলি
মাইলি সাইরাস আর ফ্যারেল উইলিয়মস এর অসাধারণ পরিবেশনায় মুগ্ধ হন দর্শকরা৷
ব্রিটিশ সংগীত শিল্পী রবি উইলিয়ামস হঠাৎ আসেন মঞ্চে৷ তাঁর ‘স্ট্রং’ গানটির কিছু কথা পরিবর্তন করে তা ম্যানচেস্টারে হতাহতদের স্মরণে গান৷ ‘ম্যানচেস্টার উই আর স্ট্রং....উই আর স্টিল সিংগিং আওয়ার সং’৷
ছবি: Getty Images/Dave Hogan for One Love Manchester
সবাই একতাবদ্ধ
শনিবার রাতে লন্ডন ব্রিজে হামলার পর অনেকেই ভেবেছিলেন নিরাপত্তা ইস্যুতে কনসার্ট বাতিল করা হতে পারে৷ কিন্তু তারপরও এই সফল আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ পাওয়া উচিত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের৷ আর তাই তাদের সঙ্গে এই ছবি৷
ছবি: Reuters/P. Noble
এক সঙ্গে এত তারকা শিল্পী
ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এত তারার মেলা আগে বসেনি৷ তাই তো ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাইরেও দর্শকদের লম্বা লাইন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Devlin
কঠোর নিরাপত্তা
ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কনসার্ট উপলক্ষে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা৷
ছবি: Reuters/P. Noble
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা
কনসার্টের অন্যতম বার্তা ছিল সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং এর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হওয়া৷ বিশ্বব্যাপী টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ সরাসরি দেখেছেন এই কনসার্ট৷
ছবি: picture-alliance/AP/Dave Hogan
একই দর্শকের উপস্থিতি
২২ মে অনুষ্ঠিত কনসার্টে যোগ দেওয়া দর্শকদের অনেকে রোববার, অর্থাৎ গতকাল রাতের কনসার্টেও উপস্থিত ছিলেন৷ আরিয়ানা যখন ‘ওয়ান লাস্ট টাইম’ গানটি গাইছিলেন, তখন অনেককেই কাঁদতে দেখা গেছে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/J. Goodman/London News Pictures via ZUMA