নাওমি এলিশুভ একজন ইসরায়েলি বেহালা বাদক৷ ২০ বছর ধরে তাঁর হাত কাঁপে৷ কিন্তু গত মঙ্গলবার তেল আভিভের একটি হাসপাতালে নিজের ব্রেন অপারেশনের সময় বেহালা বাজাচ্ছিলেন নাওমি, তাও আবার চিকিৎসকদের পরামর্শে৷
বিজ্ঞাপন
ইচিলভ হাসপাতালে নাওমির ব্রেন অপারেশন হয়৷ ব্রেন অপারেশন বলতে, তাঁর মস্তিষ্কে একটি ‘(ব্রেন) পেসমেকার' বসানো হয়৷ নাওমি ২০ বছর যাবৎ একটি ‘ট্রেমর' বা কাঁপুনিতে ভুগছেন৷ লিথুয়ানিয়া থেকে আগত সংগীতশিল্পীকে ঐ হাত কাঁপার দরুণ কনসার্ট শিল্পী হওয়া ছেড়ে শুধু বেহালা শেখানোর কাজে নিজেকে সীমিত রাখতে হয়েছে৷ এবার সেই কাঁপুনি দূর করার শেষ প্রচেষ্টা: মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে৷
মগজে এক দশমিক তিন মিলিমিটারের একটি ইলেকট্রোড বসানো হবে ব্রেনের পেসমেকার হিসেবে – হার্টের যেমন পেসমেকার থাকে৷ তার জন্য মাথার খুলিতে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফুটো করে তার ভেতর দিয়ে ইলেকট্রোডটি ঢোকানো হয়৷ এ সবই লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে, অর্থাৎ শুধু সেই স্থানটুকু অবশ করে৷ শেষ প্রশ্ন থেকে যায়: মস্তিষ্কের ঠিক কোন জায়গায় ইলেকট্রোডটি বসানো হবে?
সংগীত সুস্থ হতে সাহায্য করে
সংগীত মানুষকে আনন্দ দেয় – সেকথা কম-বেশি সকলেই জানি৷ তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে একসাথে সংগীতচর্চা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগীকে সুস্থ করতেও ভূমিকা রাখে৷ আরো পাবেন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Hochschule für Musik Karlsruhe
সংগীতের আসর
গান শোনার সময় ‘মোটিভেশন হরমোন’ ডোপামিন এবং ‘সুখ হরমোন’ এন্ড্রোফিন’ মস্তিষ্কে একত্রিত হয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো সংগীতদল যখন কোরাসে গান গায়, তখন সেই গান উপভোগ করার সময় এক ধরণের বিশেষ অনুভূতি হয়৷ এই অনুভূতি মানুষকে নিরাপত্তা দেয় এবং মনোযোগও বাড়ায়৷ ফলে ‘ইমিউন সিস্টেম’ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷
ছবি: B. Maas
‘ইমিউনথেরাপি’ হিসেবে গান গাওয়া
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, কোনো সংগীতদলে গান গাওয়ার পর রোগী অনেক ভালো বোধ করেন৷ শুধু তাই নয়, সংগীত শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে উজ্জীবিত করে ‘স্ট্রেস’ কমায় এবং তার পাশাপাশি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ‘ইমিউন সিস্টেম’-কেও বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: DW/A. Slanjankic
গান গেয়ে ভালো থাকা
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষক দল বয়স্ক মানুষদের, যাঁরা গায়কদলে গান করেন এবং যাঁরা গান করেন না – তাঁদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান৷ সমীক্ষা চলাকালীন সখের গায়কদের কম ঔষুধের প্রয়োজন হয় এবং ডাক্তারের কাছেও কম যেতে হয়৷ অথচ যাঁরা গায়কদলের সাথে জড়িত ছিলেন না, তাঁদের অনেক বেশিবার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে৷
ছবি: picture alliance / dpa
পিয়ানো
‘‘স্ট্রোক হবার পর অনেকেরই আঙুলের খানিকটা অংশ অবশ হয়ে যায়৷ কিন্তু তাঁরা যদি পিয়ানো বাজান, তাহলে আস্তে আস্তে একটি একটি করে আঙুলে শক্তি ফরে আসতে পারে৷ অবশ্য এর জন্য আগে থেকেই পিয়ানো বাজানো জানতে বা শিখতে হবে না৷’’ এ কথা বলেন, জার্মানির হ্যানোভার শহরের মেডিকেল কলেজের সংগীত মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. একার্ট আল্টেনম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায়
পিয়ানো বাজানোর সময় প্রতিবারই হাতের আঙুলে তার প্রতিফলন ঘটে৷ বাজানোর সময় আঙুলের নড়াচড়া এবং শব্দধ্বনি রোগীর অনুভূতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এর কারণে রোগীর ‘মোটিভেশন’ বা ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায় এবং স্ট্রোকে ভীত হয়ে যাওয়ার ভাব কেটে যেয়ে৷ শুধু তাই নয়, সংগীত বা গানের মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দও খুঁজে পান রোগীরা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
হাঁপানি রোগ
সংগীত ‘ক্রনিক’ ব্যথা, ভয়, অশান্তি – এ সব কমিয়ে মন ভালো করে দেয়৷ যাঁরা বুড়ো বয়সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাঁরা সমাজ থেকে কিছুটা দূরে সড়ে যান৷ অথচ সংগীতের মাধ্যমে ‘ডিমেনশিয়া’-র রোগীদের কাছে যাওয়া যায়, করা যায় বন্ধুত্ব৷ এছাড়া স্যাক্সোফোন বা বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে শ্বাসনালীর পেশি শক্ত হয় ও ফুসফুসের কাজ বেড়ে যাওয়ায় ‘অ্যাজমা’ রোগীরাও উপকৃত হতে পারেন৷
ছবি: Hochschule für Musik Karlsruhe
6 ছবি1 | 6
ইচিলভ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ইটঝাক ফ্রিড জানালেন: ‘‘ইলেকট্রোডটা সঠিক জায়গায় বসানোর জন্য পেশেন্টের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন৷ সেজন্য আমরা নাওমি এলিশুভকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন অপারেশন চলার সময় বেহালা বাজান৷'' নাওমি অবশ্যই তা করেছেন, এবং সেই অপারেশনের ফল হয়েছে আশ্চর্য: ‘‘আমরা যখন সঠিক জায়গায় স্টিমিউলেশনটি অ্যাকটিভেট করি, তখন নাওমির কাঁপুনি দূর হয়ে যায় – তিনি মন-প্রাণ দিয়ে মোৎসার্ট বাজাতে থাকেন, কিন্তু কোনোরকম ট্রেমর ছাড়াই৷''
অপারেশনের ফলাফলে প্রফেসর ফ্রিড খুশি, তবে সবচেয়ে বেশি খুশি নাওমি স্বয়ং: ‘‘আমি বেহালা বাজাব, কাগজ-পত্রে স্বাভাবিক ভাবে সই করব, পেয়ালা না কাঁপিয়ে, চা না ফেলে চা খাব৷'' তাঁর একমাত্র দুঃখ হলো, তিনি এর আগে এমন আশ্চর্য একটি অপারেশেনের কথা শোনেননি কেন৷ নয়ত এর অনেক আগেই স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করতে পারতেন৷
জেনে রাখা ভালো যে, মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার অনেক ক্ষেত্রেই পেশেন্টকে পুরোপুরি অজ্ঞান না করে হয়৷ এর ফলে চিকিৎসকরা আরো ভালোভাবে দেখতে পারেন, মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি অস্ত্রোপচারের সময় কাজ করছে কিনা৷ মস্তিষ্কের আসল উপাদান – অর্থাৎ ঘিলুর কোনো যন্ত্রণাবোধ নেই৷