সাংবাদিকদের ‘খবিশ’ ও ‘চরিত্রহীন’ বলায় আবারো সমালোচনার মুখে পড়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী৷ বাংলা ব্লগ, ফেসবুক এবং টুইটারে এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন অনেকে৷ কেউ কেউ তাঁর প্রতি সমর্থনও জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে মো. মাকসুদুর রহমানের লেখার শিরোনাম, ‘‘সমাজ**অ**কল্যাণমন্ত্রীকে *৫৫৫* অভিনন্দন!'' এই ব্লগার মহসিন আলীর বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের একটি তালিকা তৈরি করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিকরা গতকালের (শনিবার) আলোচনা সভায় তাঁর দেয়া বক্তব্য পাঠকদের উদ্দেশে ভদ্রস্থভাবে তুলে ধরার জন্য সেন্সরড করছেন৷ সে জন্য আমরা সাংবাদিক বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷ তবে একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী প্রকাশ্য কতটা অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করতে পারে তা দেখে সত্যিই আমরা লজ্জিত৷''
২০১৩ সালের আলোচিত দশ মন্তব্য
২০১৩ সালে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে বাংলাদেশে আলোচনায় ছিলেন অনেকে৷ কোনো কোনো মন্তব্য সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকও হয়েছে৷ বাংলাদেশে আলোচিত দশটি মন্তব্য প্রকাশ করা হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
‘হরতাল সমর্থকদের নাড়াচাড়ায় ভবন ধস’
সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷’’ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters
‘আমার কাছে তথ্য আছে’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে৷’’ ২৩ জুলাই ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি৷
ছবি: Sajeeb Ahmed Wazed
‘লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম’
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ার পরও লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম৷ তা না হলে মানুষ ভুলে যাবে দেশে লোডশেডিং ছিল৷’’ ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধনকালে একথা বলেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
‘...তারা বাঙালি নয়’ (প্রতীকী ছবি)
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের একটি মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে৷ ‘‘যারা ঘোমটা পরে, তারা বাঙালি নয়’’ – এ কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও, মিতা জানান, তিনি চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তার সমালোচনা করেছিলেন৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘২০ জন উপদেষ্টা’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন৷ ২১ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন৷’’ কিন্তু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপদেষ্টাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন এখন জীবিত আছেন৷ তাদের কয়েকজন আর উপদেষ্টা হতে রাজি নন৷
ছবি: Getty Images
‘...তেঁতুল বলি নাই’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমেদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারীদের তেঁতুল’ বলেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের তেঁতুলের মতো বলেছি, তেঁতুল বলি নাই৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
‘ধ্বংস এখন অবধারিত’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের পর ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত হলো৷’’ ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে একথা বলেন ইউনূস৷ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
‘মানুষ থুতু দেবে’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১ নভেম্বর বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো৷’’ এই মন্তব্যের কয়েকদিন পর তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার৷ নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে৷’’ শেষ অবধি অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
‘আমরা আপনাদের তৈরি করেছি’
অবরোধের আগুনে পোড়া গীতা সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই৷ আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই৷ আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন৷’’ প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গেলে তাঁকে এসব কথা বলেন গীতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
‘দিস ইজ বেয়াদবি’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান নি ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের এই আচরণ প্রসঙ্গে ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি৷’’ এরকম বিভিন্ন মন্তব্য করে গত পাঁচ বছর ধরেই আলোচনায় আছেন মুহিত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
10 ছবি1 | 10
রহমান লিখেছেন, ‘‘গত ৮ মাসের কার্যক্রমে সৈয়দ মহসিন আলীকে আমরা কোনো ক্রমেই সমাজকল্যাণমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারছি না৷ তাঁর দ্বারা ইতিমধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অকল্যাণের বার্তা পৌছে গেছে৷ তবে সমাজের অকল্যাণ করার জন্য যা যা করা দরকার তা অবশ্য তিনি ইতিমধ্যেই সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন৷''
প্রসঙ্গত, সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে নিয়ে বাংলা ব্লগে বিভিন্ন সময় নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে৷ রেজা ঘটক জানুয়ারি মাসে আমার ব্লগে লেখেন, ‘‘বাংলায় কাণ্ডজ্ঞান বলে একটা কথা আছে৷ একজন মানুষের কাণ্ডজ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি৷ আর একজন মন্ত্রীর তো এটা না থাকলে তাঁর মন্ত্রী হবার কোনো দরকার নাই৷ কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্ত্রী দিয়ে সমাজের কোনো লাভ হয় না৷''
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে এই বিষয়ে লিখেছেন, মন্তব্য করেছেন অনেকে৷ হামিদুল্লাহ বাবু জানিয়েছেন সাংবাদিকদের প্রতিবাদের কথা৷ তিনি এসংক্রান্ত একটি ছবিও প্রকাশ করেছেন৷
এছাড়া টুইটারে বাংলা ভাষায় মন্তব্য প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ এঁদের একজন ইশতিয়াক রাজিব মনে করেন, সব সাংবাদিক ‘খবিশ' নয়৷
মন্ত্রী মহসিন আলীর মন্তব্যের প্রতিবাদ ফেসবুকে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দেখা গেছে৷ সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিক এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব গোলাম মোর্তোজা তাঁর ব্যক্তিজীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন৷ বিশেষ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনীতিবিদরা যখন প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন, তখন কিছু সাংবাদিকদের সাহসিকতার কথা তুলে ধরেন তিনি৷
বর্তমান সরকারের আমলে সেই রাজনীতিবিদরা সাংবাদিকদের নিয়ে যেসব কথা বলছেন তা মোর্তোজা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘‘আজ আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় ‘সিঁধেল চোর'৷ শামীম ওসমানের ভাষায় ‘কুকুর'৷ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর ভাষায় ‘খবিশ' ‘চরিত্রহীন'৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা ছিলেন কারাগারে৷ শামীম ওসমান ছিলেন পলাতক৷ কোথায় ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী?''
উল্লেখ্য, এর আগেও সমাজকল্যাণমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসেই ধূমপান এবং টাঙ্গাইলের যৌনপল্লি উচ্ছেদের বিরোধিতাকারীদের নিয়ে কটূক্তি করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন৷