মহাকাশে পাড়ি দেবার স্বপ্ন দেখেন বহু মানুষ৷ আর সেই স্বপ্ন দেখেন তাঁরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে৷ বলা বাহুল্য, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি৷ কিন্তু সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মহাকাশচারীদের ঘুমের ব্যাঘাত অনিবার্য৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠে, সন্ধ্যায় সূর্য ডুবে যায়৷ ফলে মানুষ সেই অনুযায়ী নিজের ঘুমের একটা ছন্দ রপ্ত করে নিয়েছে৷ কেউ বেশি রাতে ঘুমায়, দেরিতে ওঠে, কেউ বা ‘আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ...'
– এই নীতিতে বিশ্বাস করে৷ কিন্তু নিয়মিত ঘুম প্রায় সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ অন্তত পৃথিবীর বুকে তো বটেই৷
কিন্তু মহাকাশে গেলে ঘুমের যেন ছন্দপতন ঘটে৷ সেখানে সকাল-সন্ধ্যা, রাত-দিন নেই৷ সবই এক কৃত্রিম ঘড়ির নিয়ম মেনে চলে৷ ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ছাড়াই ঘুমাতে এবং ঘুম থেকে উঠতে হয়৷ স্নায়ুবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বিষয়টি ভালো করে পরীক্ষা করেছেন৷ ‘দ্য ল্যান্সেট নিউরোলজি' নামের পত্রিকায় তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুল ও কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন৷ এর আওতায় তাঁরা মার্কিন ‘স্পেস শাটল' বা মহাকাশফেরির কয়েকটি অভিযানের তিন মাস আগে থেকে যাত্রা শুরু হওয়া পর্যন্ত এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন – আইএসএস-এ অভিযান চলাকালীন মহাকাশচারীদের ঘুমের সময় মেপে দেখেছিলেন৷ শাটল-এর মোট ৬৪ জন আরোহী এবং আইএসএস-এ ২১ জনের ঘুমের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷
তাতে দেখা গেছে, অভিযানের আগে তাঁরা রাতে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমাতেন৷ আইএসএস-এ পৌঁছে তাঁদের ঘুমের গড় সময় দাঁড়ায় ৬ ঘণ্টা ৫ মিনিট৷ অথচ মহাকাশচারীদের প্রতি নাসা-র পরামর্শ হলো দিনে সাড়ে আট ঘণ্টার ঘুম৷
ঘুমের অভাব ও ক্লান্তির ভাবের কথা অনেক মহাকাশচারীই বলে আসছেন৷ তবে এর আগে ঠিক এভাবে তার পরিমাপ করা হয়নি৷ পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের উপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ যাত্রার আগে অথবা অভিযানের সময় তাঁদের ঘুম নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামাননি৷ তাঁদের মধ্যে অনেককেই তাই ঘুমের ওষুধও খেতে হয়েছে৷