মহাকাশে দু'টি কৃত্রিম উপগ্রহ, টেরা এসএআর-এক্স আর ট্যান্ডেম এক্স, ডিএনএ-র ডাবল হেলিক্সের মতো পরস্পরের চারপাশে ঘুরপাক খেয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে চলেছে আর পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক ছবি তুলছে৷
বিজ্ঞাপন
মহাশূন্য থেকে যেন কোনো চোখ পৃথিবীর ওপর নজর রাখছে অথচ আমরা তা জানতে পারছি না৷ টেরা এসএআর-এক্স একটি জার্মান রাডার স্যাটেলাইট৷ সাধারণ অপটিকাল স্যাটেলাইট যা পারে না, এই রাডার স্যাটেলাইট তা পারে৷
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টার ডিএলআর-এর মাইক্রোওয়েভস অ্যান্ড রাডার ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর আলবের্তো মোরেইরা বলেন, ‘‘আবহাওয়া বা আলো যেমনই হোক না কেন, রাডার স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠের হাই-রেজোলিউশান ছবি তুলতে পারে৷''
রাডার স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠের দিকে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ পাঠায় ও তার প্রতিফলন ছোট ছোট সেকশানে ধরে রাখে৷ সেই তথ্য একত্রিত করলে ভূপৃষ্ঠের একটা প্রোফাইল পাওয়া যায়৷ টেরা এসএআর-এক্স ভূগোলক প্রদক্ষিণ করে আর জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টার ডিএলআর-এ তথ্য পাঠায়৷ টেরা এসএআর-এক্স ও তার জোড়োয়া ট্যান্ডেম এক্স, দু'টি রাডার স্যাটেলাইটকেই এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ দু'টো রাডার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আরো বেশি তথ্য ও খুঁটিনাটি পাওয়া যায়৷ রাডার ডাটা থেকে যে ইমেজ ডিসপ্লে করা যায়, তা ভূপৃষ্টের প্রতিটি মিটার জমির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি৷ মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনগুলো পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়৷ প্রফেসর আলবের্তো মোরেইরা বলেন, ‘‘ট্যান্ডেম এক্স দিয়ে আমরা ভূপৃষ্ঠের যে ছবি পাচ্ছি, তা এর আগের সব কিছুর চেয়ে ৩০ গুণ বিশদ৷''
মহাকাশে প্রথম মানুষ থেকে প্রথম ফুল
মহাকাশে মানুষের যাওয়া একটা সময় অকল্পনীয়ই ছিল৷ কুকুর পাঠিয়ে স্বপ্নযাত্রার সোপান তৈরি হলো৷ প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন গেলেন৷ তারপর প্রথম নারী, প্রথম ফুল হয়ে এবার শুরু হলো মহাকাশে প্রথম টমেটো দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: Colourbox/M. Bell
সবার আগে ফলের মাছি
মহাকাশে প্রথম প্রাণী ফলের মাছি৷ হ্যাঁ, ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য ভি-টু রকেটে মানুষ না পাঠিয়ে এক ধরণের মাছিই পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দু’বছর পর শুরু হয় বানর পাঠানো৷ ঊনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে ইঁদুর এবং কুকুরও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন, অর্থাৎ আজকের রাশিয়াও মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাণী পাঠিয়েছে বেশ কয়েকবার৷ তবে ১৯৫১ সালে প্রথম তাদের পাঠানো দু’টি কুকুর মহাকাশ থেকে জীবিত ফেরে৷ তবে কোনো প্রাণীই মহাকাশে গিয়ে অরবিট প্রদক্ষিণ করেনি৷ ১৯৫৭ সালে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নেরই আরেক কুকুর লাইকা৷ লাইকা অরবিট থেকে ফেরায় মানুষেরও মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন জাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন
মহাকাশ ঘুরে আসা প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন৷ ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক নভোযানে চড়ে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে আসেন তিনি৷ ছবিতে স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তে ইউরি গ্যাগারিন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মহাকাশে প্রথম নারী
মহাকাশে প্রথম নারী পাঠাতেও দেরি করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ ১৯৬১ সালেই ৪০০ আবেদন থেকে বেছে নেয়া হয় ভ্যালেন্টিনা টেরেশকোভাকে৷ ভস্টক চালিয়ে মহাকাশে গিয়ে ভেলেন্টিনা টেরেশকোভা সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থাতেই ফিরেছিলেন নিজের দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম ফুল
কয়েকদিন আগেই পাওয়া গেছে মজার এক খবর৷ মহাকাশে এবার ফুল ফুটেছে৷ জিনিয়া ফুল৷ মহাকাশে মাটিই নেই৷ তারপরও সেখানে ফুল ফোটানো কিন্তু মহাবিস্ময়েরই ব্যাপার৷ নাসার নভোচারীরা এবার তা-ও সম্ভব করেছেন৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর নভোচারী স্কট কেলি টুইটারে একটি জিনিয়া ফুলের ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, এটা মহাকাশে প্রথম ফোটা ফুল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
তারপর টমেটো?
নভোচারীরা ধীরে ধীরে মহাকাশে খাদ্যশস্য ফলানোর দিকে এগিয়ে যেতে চান৷ সেই লক্ষ্যের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই আসলে জিনিয়া ফোটানো৷ ইতিমধ্যে খুব ছোট আঙ্গিকে লেটুস চাষের চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ খুব শিগগির নাকি তাজা টমেটোও দেখা যাবে মহাকাশে!
ছবি: Colourbox/M. Bell
6 ছবি1 | 6
স্যাটেলাইটগুলোর রাডার প্রণালী প্রায় দশ মিটার উঁচু এই পরীক্ষাগারে টেস্ট করে দেখা হয়েছে৷ ল্যাবটির সর্বত্র অ্যাবজর্বার ফিট করে রাখা হয়েছে৷ এই সব অ্যাবজর্বার ঝড়তি-পড়তি মাইক্রোওয়েভগুলোকে শুষে নেয়, যার ফলে মাপজোকে ব্যাঘাত ঘটে না৷
প্রফেসর আলবের্তো মোরেইরা জানালেন, ‘‘ট্যান্ডেম এক্স যুক্ত হবার পরে দু'টি স্যাটেলাইটের ফর্মেশন ফ্লাইট বা পাশাপাশি ওড়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ দু'টি স্যাটেলাইট সেকেন্ডে সাড়ে সাত হাজার মিটার গতিতে পরস্পরের থেকে মাত্র ১২০ মিটার দূরত্বে উড়ে চলেছে – সেটাই তো একটা চ্যালেঞ্জ৷ ট্যান্ডেম এক্স-কে আকাশে তোলা থেকে শুরু করে, দু'টি স্যাটেলাইটের ঘড়িগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে মেলানো৷''
মহাকাশের বাড়ির কথা
মহাকাশে বসবাসের জন্য পৃথিবীর তিনজন বিজ্ঞানী ২০০০ সালের ২ নভেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ বা আইএসএস-এ পৌঁছেছিলেন৷ ছবিঘরে থাকছে আইএসএস নিয়ে কিছু তথ্য৷
ছবি: Reuters/NASA
খালি চোখে দেখা যায়
চাঁদ যেমন, তেমনি আইএসএস-কেও পৃথিবী থেকে মাঝেমধ্যে খালি চোখে দেখা যায়৷ পৃথিবী থেকে এর উচ্চতা ৩৩০ থেকে ৪৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামা করে৷ এটা সেকেন্ডে পাঁচ মাইল বেগে চলে৷ ফলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে দেড় ঘণ্টা৷ ছবিতে যে আটটি সোলার অ্যারে দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো দিয়েই সেখানকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়৷ একসঙ্গে মোট ছয়জন নভচারী থাকতে পারেন সেখানে৷
ছবি: Reuters/NASA
প্রথম অধিবাসী
মাঝের জন মার্কিন উইলিয়াম শেফার্ড আর তাঁর দুপাশে দুই রাশিয়ান ইউরি গিডজেঙ্কো (বামে) ও সের্গেই ক্রিকালভ৷ এই তিনজনই আইএসএস এর প্রথম বাসিন্দা৷ ২০০০ সালের ২ নভেম্বের তাঁরা আইএসএস-এ পৌঁছান৷ ছিলেন ১৩৬ দিন৷
ছবি: NASA
সাড়ে পাঁচ মাস
নভচারীরা সাধারণত গড়ে সাড়ে পাঁচমাস করে থাকেন মহাকাশের এই বাড়িতে৷ তবে নাসার নভচারী স্কট কেলি (ছবিতে যাঁকে দেখছেন) ও রাশিয়ার মিখাইল করনিয়েনকো আইএসএস-এ থাকবেন প্রায় এক বছর৷
ছবি: Scott Kelly/NASA
মাল্টিন্যাশনাল
ক্যানাডার ক্রিস হ্যাডফিল্ড আইএসএস-এ গিটার বাজাচ্ছেন৷ গত ১৫ বছরে ২০০-র বেশি নভচারী এই বাড়ির বাসিন্দা হয়েছেন৷ এর মধ্যে ১৪১ জন মার্কিন নাগরিক, ৪৪ জন রাশিয়ার, জাপান ও ক্যানাডার সাতজন, ইটালির পাঁচজন, জাপান ও ফ্রান্সের তিন জন, আর ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, স্পেন, কাজাখস্থান ও মালয়েশিয়ার একজন করে নাগরিক রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/NASA
শাটল বাস
মার্কিন স্পেস শাটল অ্যাটলান্টিসকে আইএসএস-এ ডক করতে দেখছেন৷ অবশ্য অ্যাটলান্টিস এখন আর নেই৷ তার জায়গায় আছে রাশিয়ার সুয়্যজ যান৷ এ ধরণের স্পেস শাটলে করেই নভচারীরা আইএসএস-এ পৌঁছান৷ অধিবাসীদের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও যায় এসব যানে করে৷
ছবি: Getty Images/NASA
স্পেসওয়াক
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নভচারীরা প্রায় ১৮০টি স্পেসওয়াক সম্পন্ন করেছেন৷
ছবি: Reuters/NASA
রোবটিক হাত
আইএসএস-এর কয়েকটি রোবটিক হাত রয়েছে৷ ছবিতে যেটা দেখছেন সেটার নাম ‘ক্যানাডার্ম২’৷ পুরো মেললে হাতটার দৈর্ঘ্য হয় ৫৭.৭ ফুট৷ এই হাত প্রায় ১০০ টন ওজন সমপরিমাণ জিনিসপত্র তুলতে পারে৷
ছবি: Reuters/NASA
টুইটার তারকা নভচারী
আইএসএস-এ জার্মানির তিন নভচারীর একজন আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট৷ আইএসএস থেকে তিনি ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন৷ মহাকাশ থেকে একের পর এক টুইট করে রীতিমত সাড়া ফেলেছিলেন তিনি৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির জয় থেকে শুরু করে মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল জয় পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট নিয়ে মহাকাশ থেকে টুইট করেছিলেন গেয়ার্স্ট৷
ছবি: Getty Images/ESA/A. Gerst
8 ছবি1 | 8
দু'টি স্যাটেলাইট থাকার সুবিধে হল, পাহাড় কিংবা বাড়িঘরের তথাকথিত ‘রেডিও শ্যাডো' পড়ে না – অর্থাৎ সব কোণ থেকেই বেতার সংকেত পাওয়া যায়৷ অপরদিকে দু'টি কক্ষপথে সমান্তরাল উড়াল অসম্ভব৷ কাজেই দুই স্যাটেলাইটের কক্ষপথ পরস্পরের সঙ্গে মেলে না, সেগুলো অপ্রতিসম৷ ট্যান্ডেম এক্স প্রকল্পের প্রধান ড. মানফ্রেড জিঙ্ক বলেন, ‘‘শেষমেষ দু'টি স্যাটেলাইটের গতিপথ যেন মানব ডিএনএ-র সেই ডাবল হেলিক্সের মতো; প্রথম স্যাটেলাইটটা দ্বিতীয় স্যটেলাইটের চারপাশে ইস্ক্রুপের মতো ঘুরপাক খায়৷''
স্যাটেলাইটদের এই ট্যান্ডেম উড়ালের ফলে পৃথিবীর একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা সম্ভব হয়৷ বিভিন্ন রেজোলিউশানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গ্রিড – কিন্তু কেন...?