মহাকাশের ছবিকে নান্দনিক করে তোলেন যে শিল্পী
৮ মার্চ ২০২১বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে হাবল টেলিস্কোপ ও অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলেন লুইস কালসাদা৷ পেশায় তিনি ডেটা ভিশুয়ালাইজেশনস আর্টিস্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘এই স্তম্ভগুলি এতটাই বাস্তব মনে হয়, যে ছবির মধ্যে সেগুলির আকার-আয়তনও অনুভব করা যায়৷ থ্রিডি অ্যানিমেশনে রূপান্তরিত করলে সেগুলি আরও বাস্তব হয়ে ওঠে৷ মনে হবে, নক্ষত্রের আলো যেন এই স্তম্ভগুলি খোদাই করছে৷ বিভিন্ন স্তর এবং ব্যাকগ্রাউন্ড বা প্রেক্ষাপটও দেখা যায়৷ সামনের স্তরে নক্ষত্রগুলি দেখা যায়৷ মাঝে স্তম্ভগুলিও চোখে পড়ে৷ যাকে বলে একাবারে চোখ-ধাঁধানো ছবি৷’’
লুইস কালসাদা আরও জানালেন, যে ছোট কাঠামো, গ্যাসের মধ্যে ছোট আঙুলের মতো দেখতে অংশগুলি আসলে নক্ষত্রের জন্মের প্রক্রিয়ার দৃশ্য৷ আশেপাশের গ্যাসকে চূড়ান্ত রূপ দেবার কাজ চলছে৷ সৃষ্টির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ঈগল নেবুলা অসাধারণ দেখাচ্ছে৷ এমন সব ছবি একই সঙ্গে বিস্ময় ও সম্ভ্রম জাগিয়ে তোলে৷
মার্টিন কর্নমেসার ও লুইস কালসাদা এই প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন৷ বিজ্ঞান ও শিল্পকলার মধ্যে অসাধারণ এক মেলবন্ধন ঘটেছে৷ তারা কীভাবে এই অসাধ্যসাধন করেন লুইস কালসাদা তা বুঝিয়ে বললেন৷ তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘এই সব ক্যামেরা কিন্তু ফটোগ্রাফি জগতের প্রচলিত ক্যামেরা নয়৷ অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সুন্দর ছবি তুললেই হবে না৷ হাবল টেলিস্কোপ তথ্য সংগ্রহ করে এই সব ফিল্টারের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে৷ ক্যামেরার সামনে যে ছোট লেন্স বসানো হয়, এই ফিল্টার সে রকম৷ সেই ফিল্টার শুধু নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা রং প্রবেশ করতে দেয়৷’’
সাধারণত গোটা মহাজাগতিক বস্তুটিকে পর্যবেক্ষণ করতে অসংখ্য ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়৷ একের পর এক ফিল্টারের প্রয়োজন পড়ে৷ সেই সব ফিল্টারের সমন্বয়ে একটি রঙিন ছবি সৃষ্টি করা হয়৷ রংগুলি মূল ভৌত প্রক্রিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে যুক্ত৷ পরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কালসাদা বলেন, ‘‘তারপর আমরা কিছুটা ফাইন টিউনিং করি৷ সে ক্ষেত্রে শিল্পকলার প্রয়োগ শুরু হয়৷ অবশ্যই আসল ডেটা বা তথ্যের সঙ্গে আমরা কিছুটা বাড়তি বৈশিষ্ট্য যোগ করি, কনট্রাস্ট ও এখানে-সেখানে কিছু সমন্বয় করি৷ অনেক সৃজনশীল স্বাধীনতার অবকাশ থাকে৷ রিয়েল ডেটার সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটানোর পর সেই চিত্র আরও নান্দনিকভাবে মনোরম করে তোলার কিছু উপায় থাকে৷
প্রায় নিরানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহই মূল উদ্দেশ্য, সুন্দর ছবি তৈরি করা নয়৷ এটা অনেকটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মতো৷ লুইস কালসাদা মনে করেন, ‘‘কখনো এমন একটি ছবি ধারণ করার পর মনে হয়, এটা তো একটা স্থিরচিত্র৷ তবে সময়ের প্রচলিত মানদণ্ডের তুলনায় এই চিত্র কিছুটা ভিন্ন৷ দেখলে মনে হবে, সবকিছু যেন থমকে গেছে৷ কিন্তু না, প্রবল শক্তির সঙ্গে সেটি বদলে যাচ্ছে৷’’
মোনোসেরোটিস নামের নক্ষজ্ঞ সত্যি অভিনব৷ ১০-২০ বছরের মধ্যে আমরা আলোর অত্যন্ত সুন্দর প্রতিফলন দেখতে পাই৷ এমন বাইনারি নক্ষত্রের চারিপাশের গ্যাসের মধ্য দিয়ে সেই আলো চলে যায়৷ অনেকটা ফুটে ওঠা ফুলের মতো সেটি চকচক করে ওঠে৷
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বাইরে ভয়ংকর সব ক্রিয়ার কিছু ঝলক সত্যি দেখা যাচ্ছে৷ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাসের সামান্য এক ঝলকের মধ্যে মানবজাতির অস্তিত্বের পুরো সময় সত্যি অসাধারণ৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি