ফ্লোরিডার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে সফল ভাবে মহাকাশে রওনা হলো ড্রাগন। যার ভিতর আছেন চার মহাকাশচারী।
বিজ্ঞাপন
তিন মার্কিন এবং এক জাপানি মহাকাশচারীকে নিয়ে সফল ভাবে মহাকাশের স্পেস স্টেশনের দিকে উড়ে গেল নাসার স্পেস এক্স-এর ড্রাগন মহাকাশযান। সোমবারই যানটির মহাকাশের স্পেস স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার কথা। সেখানে অন্য মহাকাশচারীদের সঙ্গে আগামী ছয় মাস কাজ করবেন এই চার মহাকাশচারী। তারপর স্পেস এক্স-এর মহাকাশযানে চড়েই তাঁরা ফিরে আসবেন পৃথিবীতে।
এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অ্যামেরিকার ফ্লোরিডায় নাসার গবেষণা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে মহাকাশে গিয়েছিল স্পেস এক্স-এর ড্রাগন। সেই মহাকাশযানেও মহাকাশচারী ছিলেন। তবে রোববার ফ্লোরিডা থেকে যে চারজন মহাকাশচারীকে পাঠানো হয়েছে, তাঁর আগামী ছয় মাস মহাকাশের স্পেস স্টেশনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অংশ নেবেন।
প্রাণের সন্ধানে তিনটি উপগ্রহে
পৃথিবীর বাইরে কোথাও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায় কি-না তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য সৌরজগতের বাইরের দিকের তিনটি উপগ্রহকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে নাসা৷ কেন? জানতে পারেন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
নজর তিনটি চাঁদে
বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৬২.৭ কোটি কিলোমিটার৷ ১২০ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে শনির চাঁদ এনসেলাডাস৷ আর নেপচুনের ট্রাইটনের অবস্থান ৪৪০ কোটি কিলোমিটার দূরে৷ সৌরজগতের দুই শতাধিক চাঁদের মধ্যে এই তিনটিতে প্রাণের সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
পানির প্রবাহ
নাসার বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই তিনটি উপগ্রহের ভূপৃষ্ঠের নিচে পানির প্রবাহ আছে, যেমনটা আছে পৃথিবীতেও৷ পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের সূচনার জন্য যে পরিবেশ তেমনটা আছে ছিল সেখানেও৷
ছবি: Image courtesy of Craig Smith and Diva Amon, ABYSSLINE Project
হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের ছয় হাজার কিলোমিটার নিচে পর্যন্ত হাইড্রোথার্মাল ভেন্টসের অস্তিত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে একটা সময়ে এমনটা অবিশ্বাস্যই ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে৷ সমুদ্রবিজ্ঞান আর খনিজ গবেষণায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসংখ্য অনুজীবের সন্ধান মিলেছে ভূগর্ভের এই সমুদ্রে৷ একইভাবে বৃহস্পতি, শনি আর নেপচুনের তিনটি উপগ্রহেও প্রাণের দেখা মিলতে পারে বলে ধারণা করছেন নাসার গবেষকেরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
পৃথিবীর বাইরে প্রাণ
এই উপগ্রহগুলোতে প্রাণের অস্তিত্ব যে মিলতেই পারে এমনটা অবশ্য নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছে না৷ সেখানকার ভূগর্ভে যদি কোন অনুজীবের দেখা মিলে তা হবে পৃথিবীর থেকে আলাদা৷ কিন্তু এর মাধ্যমে গোটা মহাবিশ্বেই প্রাণ নিয়ে গবেষণার নতুন এক দ্বার উন্মোচিত হতে পারে, বলছেন নাসার ওশান ওয়ার্ল্ডস ল্যাবের প্রধান কেভিন পিটার হ্যান্ড৷
ছবি: NASA/JPL/Universities Space Research Association/Lunar & Planetary Institute
ইউরোপা ক্লিপার
হ্যান্ডের মূল মনযোগ এখন বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপাতে৷ তাদের চলমান একটি প্রকল্পের নাম ‘ইউরোপা ক্লিপার’ মিশন৷ যার অংশ হিসেবে উপগ্রহটির উদ্দেশ্যে একটি মহাকাশযান পাঠাবে নাসা৷ সেটি উচ্চ রেজ্যুলেশনের কিছু ছবি তুলে পাঠাবে৷ সেগুলো থেকে বিজ্ঞানীরা সেখানকার ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
ডিসকভারি
সৌরজগতের বাইরের দিকে গ্রহগুলো নিয়ে নাসার আরো একটি প্রকল্পের নাম ডিসোকভারি৷ তবে এটি এখনও পরিকল্পনার পর্যায়েই রয়েছে৷ এর অংশ হিসেবে ট্রাইডেন্ট নামের একটি অভিযান পরিচালনার কথা রয়েছে৷ যা বাস্তবায়িত হলে নেপচুনের চাঁদ ট্রাইটন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/JPL-Caltech
১২ বছরের যাত্রা
২০২৬ সালে ট্রাইডেন্ট পৃথিবী থেকে যাত্রার করার কথা৷ ট্রাইটন উপগ্রহটিতে পৌঁছাতে তার সময় লাগবে ১২ বছর৷ এর আগে ১৯৭৭ সালে সবশেষ ‘ভয়েজার টু’ মহাকাশযান ট্রাইটানের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল৷সেটি পৌঁছাতে পেরেছিল উপগ্রহটির ৪০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে৷ অন্যদিকে ট্রাইডেন্ট যাবে ৫০০ কিলোমিটার নিকটে৷
ছবি: NASA/JPL-Caltech
বায়ুমণ্ডল
ট্রাইডেন্টের মূল উদ্দেশ্য হবে ট্রাইটান উপগ্রহটির বায়ুমণ্ডলের গভীরতা পরিমাপ এবং তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা নেয়া৷ ট্রাইটানের বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা থাকলেও এনক্লেডাস আর ইউরোপাতে সেই সম্ভাবনা নগণ্য৷ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতো না হলেও এই তিনটির মধ্যে ট্রাইটানের পরিবেশ নিয়েই বেশি উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের ভাইজমান ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক ইয়োহাই কাসপি৷ কারণ সেখানে বায়ু প্রবাহ আছে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: public domain
কত সময় লাগবে
কিন্তু এসব গবেষণার সুফল কবে মিলবে? কাসপি মনে করেন ভবিষ্যত প্রজন্ম ৪০০ বছর পর হয়তো প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানের এই প্রচেষ্টা আর উদ্ভাবনগুলোর গুরুত্ব আর প্রয়োগের জায়গাটি ঠিকঠাক বুঝতে পারবে৷ ঠিক যেমন বিশ্বব্রম্মাণ্ড নিয়ে পুরনো ধারণা বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে গ্যালিলিওর অবদানকে আমরা এখন স্মরণ করি৷
ছবি: HO/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
চারজন মহাকাশচারীর তিনজন অ্যামেরিকার এবং একজন জাপানের। তাঁদের নাম যথাক্রমে, মাইকেল হপকিন্স, ভিক্টর গ্লোভার, শ্যানন ওয়াকার এবং সইচি নগুচি। গ্রিনিচ সময় রাত ১২টা ২৭ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে রওনা হন তাঁরা।
এতদিন মহাকাশের স্পেস স্টেশনে মহাকাশচারীদের আনা নেওয়ার কাজ মূলত করতো রাশিয়ার সয়ুজ মহাকাশযান। স্পেস এক্স-এর ড্রাগন বহু দিনের সেই নিয়মে খানিকটা পরিবর্তন আনলো। বস্তুত, রাশিয়ার মহাকাশযানের চেয়েও এই মহাকাশযান আর দ্রুত স্পেস স্টেশনে পৌঁছবে বলে নাসার বক্তব্য।
সোমবার সকালে নাসা জানিয়েছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অরবিট ভেদ করে ড্রাগন মহাকাশে ঠিক ভাবে পৌঁছে গিয়েছে। নাসার এই উৎক্ষেপনের পরে অ্যামেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাসা এবং অভিযাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ডনাল্ড ট্রাম্পও টুইটে লিখেছেন 'গ্রেট'। উৎক্ষেপণের সময় ফ্লোরিডার স্পেস স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন অ্যামেরিকার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেনস। তিনি বলেছেন, এ দিনের ঘটনা অ্যামেরিকার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।