নারী অধিকারের প্রশ্নে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ কমিউনিস্ট দেশগুলির একটা সুনাম ছিল৷ অথচ আজকের রাশিয়ায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কোনো নারী মহাকাশচারী দেখা যায়নি৷ অবশেষে ইয়েলেনা সেরোভা সেই ‘ঐতিহ্য’ ভাঙতে চলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
নিজের হেয়ারস্টাইল, শিশুকন্যার ভবিষ্যৎ – এমন সব বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে ৩৮ বছর বয়স্ক মহাকাশ বিজ্ঞানী ইয়েলেনাকে৷ কারণ তিনি একজন নারী৷ গত প্রায় সাত বছর ধরে মহাকাশ যাত্রার অনুশীলন করে চলেছেন তিনি৷ স্বামীও প্রাক্তন ‘ট্রেনি কসমোনট'৷ তাঁদের কন্যাসন্তানের বয়স ১১৷ প্রশ্ন উঠেছে, সে কি মা-কে ছেড়ে এতদিন থাকতে পারবে? মহাকাশে গেলে তাঁর লম্বা কালো চুল কীভাবে ধোবেন, তাও ‘ডেমনস্ট্রেট' করতে প্রস্তুত ছিলেন ইয়েলেনা৷ শুধু মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা আমার সহকর্মী পুরুষ কসমোনটের হেয়ারস্টাইল নিয়ে আগ্রহী নন?''
অথচ সোভিয়েত ইউনিয়নই ১৯৬৩ সালে প্রথম নারীকে মহাকাশে পাঠিয়েছিল৷ ফলে ভালেন্টিনা টেরেশকভা গোটা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে পড়েন৷ কিন্তু তার পরে মাত্র দু'জন নারী এই গৌরব অর্জন করতে পেরেছেন৷ ইয়েলেনা চতুর্থ নারী, যিনি এই সুযোগ পাচ্ছেন৷
আপনি চুল রং করেন, নাকি করবেন?
জার্মানিতে শতকরা ৫০ জন মেয়েই চুল রং করেন আর ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় এই হিসেব তো প্রায় ৭০ শতাংশ৷ বাঙালি মেয়েদের ক্ষেত্রেও এই হিসেব দিনদিন বাড়ছে৷ চুলে রং করার কিছু তথ্য পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/P. ManiTtewari
কেশবতী কন্যা, মেঘবরণ চুল
মেয়েদের সৌন্দর্যের অপর নাম সুন্দর চুল! যে কোনো মানুষকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে চুলের ভূমিকা বিশাল৷ চুলের স্টাইল যেমন চেহারা পাল্টে দেয়, তেমনি চুলের রংও৷ পশ্চিমা বিশ্বে আগে থেকেই মেয়েদের চুলে রং করার ফ্যাশন রয়েছে৷ তাছাড়া ইউরোপের দেশগুলোয় সোনালি চুলের রয়েছে বিশেষ কদর ,অর্থাৎ স্বর্ণকেশীরাই নাকি বেশি সুন্দরী৷ তাই অনেকেই চুল রং করে স্বর্ণকেশী হতে চান৷
ছবি: Fotolia
বাঙালি নারীর চুল
আগেকারদিনে বাঙালি নারীর সৌন্দর্যই ছিল মাথাভর্তি লম্বা ঘন কালো চুল৷ এই চুল নিয়ে আমাদের কবি, সাহিত্যিকরা কত কথাই না লিখেছেন! চুল পেকে গেলে তা ঢাকতে বা বয়স কিছুটা কমাতে চুলে রং লাগানো হতো৷ যুগের সাথে চুলের ফ্যাশনেও এসেছে অনেক পরিবর্তন৷ লম্বা কালো চুল অনেক তরুণীর কাছেই কিছুটা একঘেয়ে৷ তাই সময়ের সাথে তাল মেলাতে আজকাল তারা চুলের রং পাল্টায়৷
ছবি: Abu Naser
সোনালী চুল
বেশিরভাগ জার্মানদের চুলের রং বাদামি বা কিছুটা হালকা৷ তাই যাঁরা চুল গাঢ় বাদামি বা কালো করতে চান, তাঁদের জন্য সেটা কোনো সমস্যা নয়৷ তবে যাঁরা নিজের চুলের রঙের চেয়ে হালকা বা বাদামি চুলকে সোনালি করতে চান, তাঁদের জন্য কিছু সমস্যা আছে৷ ‘‘এতে চুল রুক্ষ এবং শুকনো হয়ে যাবার ভয় থাকে৷’’ বলেন মিউনিখ শহরের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাটরিশিয়া অগিলভি৷
ছবি: Fotolia/Minerva Studio
কেমিকেলে অ্যালার্জি
ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘‘যাঁদের মাথার ত্বক সংবেদনশীল তাঁরা অবশ্যই পার্লারে গিয়ে চুলে রং করাবেন৷ মাথার ত্বকে সরাসরি রং না লাগিয়ে শুধু চুলে রং দেবেন, যাতে ত্বক কেমিকেল থেকে দূরে থাকে৷ এছাড়া জীবনে প্রথমবার চুলে রং দেওয়ার আগে অবশ্যই হাতের ত্বকে বা অন্য কথাও রং লাগিয়ে রেখে কয়েক ঘণ্টা পর অ্যালার্জি বা কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা কিনা পরীক্ষা করে নেবেন৷’’
ছবি: DW/E. Grenier
রং করার নিয়ম
‘‘চুলে রং দেয়ার দুই-একদিন আগে চুলে শ্যাম্পু না করাই ভালো৷ এতে মাথার ত্বক অ্যাসিড সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং চুল ভালোভাবে রং-কে গ্রহণ করে৷ বিশেষকরে সংবেদনশীল মাথার ত্বকের জন্য বিশেষভাবে এ কথা প্রযোজ্য৷’’ বলেন মিউনিখের এক পার্লারকর্মী রোজা লিটসমান৷
ছবি: Fotolia/gradt
বিশেষ যত্ন
রং লাগানোর পর মাথার ত্বকের জন্য ‘প্যাক’ লাগানো জরুরি৷ এটা তিলের তেলের হতে পারে, যা চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করে৷ রং করা চুলকে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হয়, অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত৷ কারণ এতে চুল রুক্ষ তো হয়ই না, বরং চুলের চকচকে আভা বজায় থাকে৷
ছবি: DW/A. Hollunder
চুলে হাইলাইট
চুলের ওপরের ভাগের সামান্য কিছু অংশ অনেকেই লাল বা ব্লন্ড, অর্থাৎ ‘হাইলাইট’ করেন৷ এটা করলে চুল বেশ আকর্ষণীয় দেখায়৷ তবে হাইলাইট করার পর যদি কারো মনে হয় যে, রং একটু বেশি হয়ে গেছে, তবে ‘অ্যান্টি ড্যানড্রফ’ বা খুসকি দূর করার শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই সেই অতিরিক্ত রং-এর ভাবটা কমে যাবে৷
ছবি: Zentralverband des deutschen Friseurhandwerks
হেয়ার ড্রায়ার
চুল শুকানোর জন্য কখনোই অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করবেন না৷ এতে চুল খশখশে হয়ে যায় এবং দেখতেও অস্বাস্থ্যকর মনে হয়৷ এছাড়া রং দেওয়ার ঠিক পর পর বেশি রোদ লাগলে চুলের রং কমে না, এ কথা ঠিক৷ তবে এতে চুল শুষ্ক হয়ে যায়৷ আসলে চুলের জন্য ভিটামিন ‘ই’ যেমন জরুরি, তেমনি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও দূরে থাকা দরকার৷
রঙিন চুলের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু
যাঁরা চুল রং করেন তাঁদের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি, তা হচ্ছে চুল যেন কোনোভাবেই শুকনো এবং খশখশে না হয়৷ দু-তিন দিন পর পর রঙিন চুলের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু এবং তার সঙ্গে একটি বিশেষ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন৷ সেটা কিন্তু ঘৃত-কুমারী বা কাঠবাদাম তেলও হতে পারে৷ আরো ভালো হয়, যদি চুল শ্যাম্পু কার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে একবার মাথা ধুয়ে হালকা করে মুছে ফেলা যায়৷
ছবি: Fotolia/mangostock
ছেলেদের চুল
আজকাল শুধু এই প্রজন্মের মেয়েরা নয়, ছেলেরাও চুলে রং করে থাকেন৷ তবে সেটা মেয়েদের তুলনায় অনেক কম৷ অবশ্য অনেক বয়স্ক পুরুষ পাকা চুল বা দাড়ি ঢাকতে তা রং বা মেহেদি (বানান ও উচ্চারণভেদে মেহেন্দি) করে থাকেন ৷
ছবি: DW/H. Hashimi
সোজা চুল
মেয়েদের জন্য একদম সোজা চুলই আজকের যুগের ফ্যাশন৷ যাঁদের চুল খুব কোঁকড়ানো, হালকা কোঁকড়ানো বা একটু ভাজ – তাঁদের জন্য বাজারে রয়েছে ‘হেয়ার স্ট্রেইটনার’ বা চুল সোজা করার ইলেক্ট্রনিক মেশিন৷ তবে অতিরিক্ত গরম করে নিয়মিত এই যন্ত্রটি ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হয়, চুল ভেঙে ও রুক্ষ হয়ে যায়৷ তাই এটা নিয়মিত ব্যবহার না করাই উচিত, বলেন রোজা লিটসমান৷
ছবি: DW/P. ManiTtewari
11 ছবি1 | 11
শুধু পৃথিবীতে নয়, মহাকাশেও পুরুষদের একচেটিয়া আধিপত্যের পেছনে নানা যুক্তি দেখানো হয়েছে৷ বলা হয়েছে, মহাকাশে যেতে হলে ও সেখানে কাজ করতে গেলে পেশিশক্তির প্রয়োজন৷ দৈহিক বল ছাড়া চলবে না৷ ‘অবলা নারী'-রা সেখানে আর কী করবে! তার উপর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সামরিক বাহিনীই মহাকাশ যাত্রার নিয়ন্ত্রণ করতো৷
রাশিয়ার ‘স্পেস নিউজ' পত্রিকার সম্পাদক ইগর মারিনিন সংবাদ সংস্থা এএফপি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই মানসিকতার বিষয়টি সম্পর্কে আরও কিছু মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর মতে, রাশিয়ার ভাবমূর্তির স্বার্থে মহাকাশে নারীদের প্রতি বৈষম্যের সময় শেষ করার সময় এসে গেছে৷ রুশ মহাকাশ সংস্থার প্রধান নিজে ইয়েলেনা সেরোভা-কে বাছাই করেছেন৷ তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএস-এও নারী-পুরুষের ভারসাম্য নেই৷ ইগর আরও বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে সেখানে পাঁচজন পুরুষ ছোট জায়গায় এক আকর্ষণীয় নারীর সঙ্গে সময় কাটাবেন – এটা চিন্তার বিষয় বৈকি৷