মহাকাশে জঞ্জাল পরিষ্কার করার উদ্যোগ
৬ মে ২০১৯গবেষকরা তাই এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করার উপায় খুঁজছেন৷ মহাকাশে জঞ্জাল ক্রমশ বাড়ছে৷ এ সব জঞ্জালের মধ্যে আছে হাজার হাজার পুরনো স্যাটেলাইট যা বিকল হয়ে গেছে৷ অর্থাৎ এখন আর সেগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে না৷ ব্রিটিশ সাউন্ড ডিজাইনার নিক রায়ান শব্দ নির্ভর এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন যা মহাকাশে জঞ্জাল শনাক্ত এবং সেটির অবস্থান জানাতে পারে৷ এটা বড় কোনো জঞ্জাল হতে পারে, যেমন রকেটের পুড়ে যাওয়া ইঞ্জিন৷
অধিকাংশ জঞ্জালই আকারে ছোট, তবে সেগুলো যে গতিতে ছুটছে তা বিপজ্জনক৷ তিনি বলেন, ‘‘এমনকি একটি রংয়ের ছিটেফোঁটাও যদি একটি স্যাটেলাইট বা, সৃষ্টিকর্তা না করুক আইএসএস-এ আঘাত হানে, তাহলে বিপর্যয় ঘটতে পারে৷ এটা ভূপৃষ্ঠে থাকা অবকাঠামোর জন্যও হুমকিস্বরুপ৷ কেননা আমরা কক্ষপথে স্থির স্যাটেলাইট এবং আবহাওয়া স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরশীল৷ মহাকাশে জঞ্জাল তাই সবকিছুর জন্যই হুমকি৷''
মহাকাশে প্রতিটি সংঘর্ষের পরিণতিতে নানা প্রতিক্রিয়া হতে পারে৷ আর জঞ্জালের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন এক জঞ্জালের মেঘ সৃষ্টি হতে পারে যা ভেদ করা দুরুহ হয়ে পড়বে৷ তাই আমরা যদি আরো রকেট মহাকাশে পাঠাতে চাই, তাহলে কক্ষপথ সাফাইয়ের কাজ শুরু করতে হবে৷
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র বা আইএসএস-এ ইতোমধ্যে একটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে, যেটির নাম ‘রিমুভ ডেব্রি৷' আইএসএস-এ পৌঁছানোর পর নভোচারীরা সেটিকে এক বিশেষ মিশনের জন্য প্রস্তুত করেছেন৷ আর তা হচ্ছে, মহাকাশ পরিষ্কার করার অভিযান৷
ইংল্যান্ডের সারে শহরে স্পেস সেন্টারে বসে প্রফেসর গুলিয়েল্মো আলিয়েটি এবং তাঁর দল স্যাটেলাইটটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তারা এই জঞ্জাল পরিষ্কারের স্যাটেলাইটটি ডিজাইন করেছেন৷ প্রফেসর গুলিয়েল্মো আলিয়েটি এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ভবিষ্যতেও মহাকাশ ব্যবহার করার জন্য আমাদের সাফাইয়ের কাজ শুরু করতে হবে৷''
আইএসএস থেকে ‘রিমুভ ডেব্রি' স্যাটেলাইটটি ছাড়া হয়েছে৷ মহাকাশের জঞ্জাল ধরতে এটিতে কিছু চমৎকার উপায় আছে৷ এটির গ্রাউন্ড কন্ট্রোল ম্যানেজার রিচার্ড ডিউক বলেন, ‘‘আমাকে যা অভিভূত করেছে তা হচ্ছে, আমি দীর্ঘদিন ধরে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করলেও এমন কিছু আগে কখনো দেখিনি৷ আমি আসলে এটার জন্য গর্বিত৷ আপনি হঠাতই বুঝতে পারেন, পৃথিবীতে এটাই প্রথম৷ এমনটা অতীতে কখনো করা হয়নি৷ এমন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা অসাধারণ ব্যাপার৷''
জঞ্জাল পরিষ্কার করার এই স্যাটেলাইট আগামী মাসগুলোতে বেশকিছু পদ্ধতি পরীক্ষা করবে৷ এর মধ্যে রয়েছে, হারপুন বা টেটা ছুঁড়ে জঞ্জাল ধরা৷ কিন্তু, এরপর কী হবে? এটি কি ভবিষ্যতে এক ভাসমান ডাস্টবিনে পরিনত হবে? প্রফেসর গুলিয়েল্মো আলিয়েটি বলেন, ‘‘এটা অনেকটা অদ্ভূত হবে যদি জঞ্জাল পরিষ্কার করার মিশনে ব্যবহৃত একটি স্যাটেলাইট সবশেষে নিজেই জঞ্জালে পরিণত হয়৷ না, সেটা হবে না, আমরা এই মিশনের পর সবকিছুই পরিষ্কার করে ফেলবো৷''
অর্থাৎ জঞ্জাল পরিষ্কার করার এই স্যাটেলাইট কাজ শেষে নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে৷ এটির মধ্যে এমন এক পন্থা আছে যা সেটিকে ক্রমশ নীচের দিকে ধাবিত করবে এবং একসময় সেটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে৷ আর তখনই স্যাটেলাইটটি এবং সেটিতে থাকা জঞ্জাল জ্বলেপুড়ে যাবে৷
ভূপৃষ্ঠ থেকে খালি চোখেও তা দেখা যাবে৷ তবে সেটিকে দেখে মনে হবে খসে পড়া এক তারা৷
ক্রিস্টিনে সাইডেমান/এআই