‘আকাশভরা সূর্য-তারা’ এখনো আছে৷ কিন্তু সেই আকাশ যে ভরে যাচ্ছে আবর্জনায়! সরকারের টাকা নেই৷ তাই এবার বেসরকারি উদ্যোগে মহাকাশে আবর্জনা সাফাইয়ের তোড়জোড় চলছে৷
বিজ্ঞাপন
পৃথিবীতে অনেক দেশে আবর্জনা সাফাই ভালো ব্যবসা হয়ে উঠেছে৷ তাহলে মহাকাশই বা বাদ থাকে কেন? বহু দশক ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে যে সব স্যাটেলাইট ও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে, তার অনেকগুলি বাতিল হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে – কখনো আস্ত অবস্থায়, কখনো বা ভেঙে টুকরো হয়ে৷ নোবো ওকাডা মানবজাতিকে এই সব ‘জাংক' থেকে মুক্তি দিতে চান৷ কারণ তাঁর আশঙ্কা, এরপর আর স্যাটেলাইট সংকেত পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাবে না৷ ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে না, জিপিএস ন্যাভিগেশন ঠিকমতো না চলায় গাড়ি ভুল রাস্তায় চলে যাবে৷
এই সমস্যার সমাধান করতে একেবারে আটঘাট বেঁধে আসরে নেমেছেন ওকাডা৷ সিঙ্গাপুরে ‘অ্যাস্ট্রোস্কেল' নামের কোম্পানি খুলেছেন তিনি৷ তিনি একা নন, মহাকাশে বেসরকারি উদ্যোগের জোয়ার এসেছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘নিউস্পেস ইন্ডাস্ট্রি'৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার অনুমান অনুযায়ী, মহাকাশে এই মুহূর্তে ৫ লক্ষেরও বেশি জঞ্জালের টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে৷ বিকল স্যাটেলাইট থেকে মারবেল আকারের লেন্স কভার – কী না নেই সেই তালিকায়! আরও লক্ষ লক্ষ আবর্জনা আছে – যেগুলি এতই ছোট, যে তার হিসাব রাখা অসম্ভব৷ প্রবল বেগে ধেয়ে চলেছে এই সব ছোট-বড় বস্তু৷ সংঘর্ষ ঘটলে যে কোনো মহাকাশযানকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে এগুলি৷
তবে আশার আলো হলো, এই জঞ্জাল অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়ায় না৷ কোনো না কোনো সময় বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে জ্বলে উঠে ছাই হয়ে যায়৷ এই প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে এখনো পর্যন্ত অনেক প্রস্তাব শোনা গেছে৷ যেমন বিশেষ বিদ্যুৎ তরঙ্গের মাধ্যমে মহাকাশ জঞ্জালের গতি কমিয়ে সেগুলিকে দ্রুত বায়ুমণ্ডলের উপর ফেলার কথা শোনা গেছে৷ টাংস্টেন ধুলার মাধ্যমে জঞ্জাল ঝেঁটিয়ে মহাকাশে ঠেলে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন কিছু বিজ্ঞানী৷ তবে এত বড় কর্মযজ্ঞের ব্যয়ভার বহন করতে কোনো সংস্থা এগিয়ে আসেনি৷
এই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে চায় ‘অ্যাস্ট্রোস্কেল' কোম্পানি৷ তারা এমন এক প্রযুক্তি প্রস্তুত করছে, যার ব্যয় কম এবং অনেক বেশি বাস্তবধর্মী৷ এর আওতায় একটি বড় মহাকাশযান কক্ষপথে পাঠানো হবে, যার মধ্যে থাকবে ছয়টি ছোট যান৷ সেগুলি ২০০ বড় জঞ্জালের টুকরোর সংস্পর্শে এসে সেগুলিকে বায়ুমণ্ডলের দিকে ঠেলে দেবে৷ সম্ভব হলে বিকল স্যাটেলাইট মেরামত করে তার আয়ুও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করবে এই সব যান৷
ওকাডার এই উদ্যোগ নিয়ে সংশয় কম নেই৷ প্রথমত মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই৷ আর্থিক বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে, তাও স্পষ্ট নয়৷ আইনগত কিছু জটিলতাও এমন প্রচেষ্টার পথে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে৷ সবচেয়ে বড় কথা, ‘বিজনেস মডেল' হিসেবে এই উদ্যোগ কতটা সফল হতে পারে? নিন্দুকদের জবাব দিতে ওকাডা আপাতত জাপানের ‘পোকারি সোয়েট' নামের এক সফট-ড্রিংক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছেন৷ বিজ্ঞাপনের চমক হিসেবে চাঁদের বুকে সেই ড্রিংকের ‘পাউডার সংস্করণ' পাঠিয়ে ‘অ্যাস্ট্রোস্কেল' কোম্পানি যে অর্থ আয় করবে, তা দিয়ে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ শুরু করতে চান ওকাডা৷