মহাকাশচারীদের শূন্যে ভাসতে দেখলে মনে কার না ঈর্ষা হয়! কিন্তু পৃথিবীতে থেকেই সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ পেলে কেমন হয়? বিশেষ বিমানে চড়লে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাধ্যাকর্ষণহীন হওয়া সম্ভব বৈকি৷
বিজ্ঞাপন
ওড়ার স্বপ্ন কার না থাকে? কিছু সময় ধরে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে যাত্রীরা সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ পেলেন৷ বিমানের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান থেকে মুক্তি পাওয়া গেল৷ সেই অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ সত্যি ভোলার নয়৷
‘রিডিউসড গ্র্যাভিটি এয়ারক্রাফট’ সেই অসাধ্য সাধন করতে পারে৷ যেমন এই এয়ারবাস এ থ্রিহান্ড্রেড-জিরো-জি বিমানটি৷ গতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, তার ফলে বেশিরভাগ যাত্রীর বমি হবার উপক্রম হয়৷ কিন্তু তার পরেই আনন্দে মনটা ভরে যায়, অনেকটা রোলার কোস্টারে চাপার মতো অভিজ্ঞতা৷ প্রকল্পের প্রধান উলরিকে ফ্রিডরিশ-এরও এমনটা মনে হয়েছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালে প্রথম বার রিডিউসড গ্র্যাভিটি এয়ারক্রাফট চড়েছিলাম৷ প্রকল্পের প্রধান হিসেবে সেই অভিজ্ঞতার অবশ্যই প্রয়োজন ছিল৷ তবে সেবার সাদা ঠোঙায় বমি করতে হয়েছিল৷ মাধ্যাকর্ষণহীনতার সেই অভিজ্ঞতা, মুক্তির স্বাদ, যে কোনো দিকে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল অনবদ্য৷ ফলে এভাবে বার বার ওড়ার লোভ সামলাতে পারি নি৷’’
আনুশেহ আনসারি: এক মহিয়সী মুসলিম নারী
১০ বছর আগে বিশ্বের প্রথম নারী মহাকাশ পর্যটক হয়ে সারা বিশ্বে শীর্ষ শিরোনাম হয়েছিলেন আনুশেহ আনসারি৷ প্রতি বছরের মতো আবারও শিরোনামে আসার সময় হয়েছে তাঁর৷ ২০০৬ সালে যে সেপ্টেম্বরেই মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন আনুশেহ!
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Frei
৪০তম জন্মদিনের পর
আনুশেহ আনসারির জন্ম ইরানের মাশাদ শহরে, ১৯৬৬ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর৷ ২০০৬ সালে তাঁর ৪০তম জন্মদিনের মাত্র পাঁচদিন পরই বিশ্বের প্রথম নারী পর্যটক হিসেবে মহাকাশ যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Marmur
নিজের টাকায় মহাকাশযাত্রা
১২ই সেপ্টেম্বর প্রায় দুই কোটি ডলার খরচ করে মহাকাশযানের যাত্রী হয়েছিলেন তিনি৷ খরচটা নিজেই দিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Frei
সেই নভোযান
কাজাখস্তানের বাইকোনুর স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করে নভোযান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Kochetkov
‘মাই ড্রিমস অফ স্টার্স’
১২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর- এই ১২ দিনের মহাকাশ যাত্রা নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে৷ গ্রন্থটির নাম, ‘মাই ড্রিমস অফ স্টার্স’৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
ইরান থেকে যুক্তরাষ্টে
ইরানে জন্ম নিলেও নিজের পরিবারের সঙ্গে ১৯৮৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান আনুশেহ৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Marmur
প্রকৌশলী আনুশেহ
যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন আনুশেহ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Kochetkov
সহযাত্রীদের সঙ্গে
আরো দুই মহাকাশযাত্রীর সঙ্গে আনুশেহ আনসারি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Ilnitsky
স্বামীর সঙ্গে
স্বামীর সঙ্গে আনুশেহ৷ মহাকাশযান কাজাখস্তানে ফিরে আসার পরই তোলা হয়েছিল ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Beck
পঞ্চাশ বছর পূর্তি
এ বছর ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আনুশেহ আনসারির৷ জীবনের অর্ধশত পূর্তির আগে অনেক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি৷ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর সাফল্য ঈর্ষনীয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Marmur
9 ছবি1 | 9
বিমানে চড়ার আগে প্রত্যেক যাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়৷ গা গুলানো বন্ধ করতে একটা ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়৷ মাধ্যাকর্ষণহীনতার সংক্ষিপ্ত সময়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কাজে মন দেওয়া বেশি জরুরি৷
যেমন মাধ্যাকর্ষণহীনতার অবস্থায় মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তা পরীক্ষা করা হয়৷ যে সব মহাকাশচারী দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটান, তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি৷ এতকালের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখা গেছে, এই অবস্থায় মস্তিষ্কের সমন্বয়ের ক্ষমতার ক্ষতি হয়৷ অর্থাৎ পেশি ও মস্তিষ্কের মধ্যে সম্পর্কের ছন্দ বদলে যায়৷
বিমানের মধ্যে তোলপাড় কাণ্ড শুরু হতে চলেছে৷ এয়ারবাস বিমানটি এমন এক অঞ্চলে উড়ছে, যেখানে বেসামরিক বিমান চলাচল নিষিদ্ধ৷ গবেষক ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা সেই মাধ্যাকর্ষণহীনতার প্রথম পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ এবার শান্ত থাকা জরুরি৷
৬,০০০ মিটার উচ্চতা ও ঘণ্টায় ৮০০ কিলোমিটার গতিবেগে এসে বিমান তার কেরামতি শুরু করলো৷ আরও উপরে ওঠার সময় প্যারাবোলা বা অধিবৃত্ত অনুযায়ী উড়তে লাগলো সেটি৷ গ্রেডিয়েন্ট অ্যাঙ্গেল বা ঢালের মাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি হতেই বিমানটি শরীর ছেড়ে দিয়ে আকাশ থেকে নীচে পড়তে শুরু করলো৷ সেই মুহূর্তে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আর কার্যকর হলো না৷ প্রায় ২০ সেকেন্ড পর পাইলট আবার বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া পর্যন্ত এমন অবস্থা বজায় থাকলো৷
চীনের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচি
মহাকাশ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো স্থানে পৌঁছতে চায় চীন৷ ২০২২ সালে নিজস্ব স্পেস স্টেশন বানাতে চায় দেশটি৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. H. Young
ষষ্ঠবারের মতো
সোমবার (১৭ অক্টোবর, ২০১৬) সকালে চীন ৬ষ্ঠ বারের মতো তাদের মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠালো৷ ‘শেনজু-১১’ বা ‘পবিত্র তরী’ নামের একটি রকেট দুজন নভোচারীকে নিয়ে দুই দিন পর চীনেরই স্পেস ল্যাব ‘তিয়ানগং-২’-তে পৌঁছবে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. H. Young
অভিজ্ঞ মহাকাশচারী
জিং হাইপেং ও চেন ডং মহাকাশে থাকবেন ৩০ দিন৷ সেখানে তাঁরা অ্যারোস্পেস মেডিসিন ও অ্যাটোমিক স্পেস ক্লক নিয়ে গবেষণা করবেন বলে জানিয়েছে চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়া৷ নভোচারী জিং হাইপেংয়ের এটি তৃতীয় মিশন৷ মহাকাশে তিনি তাঁর ৫০ তম জন্মদিন পালন করবেন৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. H. Young
স্পেস ল্যাব ‘তিয়ানগং-২’
পৃথিবী থেকে ৩৯৩ কিলোমিটার উঁচুতে এই ল্যাবটি অবস্থিত৷ গত মাসে এটি চালু করা হয়৷ এর দৈর্ঘ্য নয় মিটার৷ ওজন ১৩ টন৷ ‘তিয়ানগং-২’ বা ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ-২’এ দুটি কেবিন আছে৷ একটি বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ অন্যটিতে রয়েছে সোলার প্যানেল, ইঞ্জিন, ব্যাটারি ইত্যাদি৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Xin
প্রথম স্পেস ল্যাব
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে চীন তাদের প্রথম স্পেস ল্যাব ‘তিয়ানগং-১’ মহাকাশে প্রেরণ করে৷ গত মার্চে এর মিশন শেষ হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সর্বাধুনিক রকেট
‘শেনজু-১১’ পাঠানো হয় ‘লং মার্চ-২এফ’ ক্যারিয়ার রকেট ব্যবহার করে৷ ৪৬৪ টন ওজন ও ৫২ মিটার দীর্ঘের এই রকেটটি গোবি মরুভূমির কাছে অবস্থিত ‘জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার’ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Y. Zhiyuan
উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচি
মহাকাশ বিষয়ে তাদের সক্ষমতা দেখাতে চাইছে চীন৷ তাই আগামী এপ্রিলে তারা প্রথমবারের মতো একটি স্পেস কার্গো পাঠাতে চাইছে৷ সেটিতে করে ‘তিয়ানগং-২’ স্পেস ল্যাবের জন্য জ্বালানি ও উপকরণ নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: Reuters
নিজেদের স্পেস স্টেশন চায় চীন
বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহাকাশে থাকা ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন’ বা আইএসএস (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এর কার্যক্রম ২০২৪ সালে শেষ হয়ে যাবে৷ চীন চাইছে ২০২২ সালের মধ্যে নিজেদের একটি স্পেস স্টেশন তৈরি করতে৷ তাহলে ২০২৪ সালের পর চীনের ঐ স্টেশনটিই হবে একমাত্র স্থায়ী স্পেস স্টেশন৷