মহাকাশচারী অ্যান ম্যাকক্লেইনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢোকার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে৷
মহাকাশে প্রথম অপরাধে অভিযুক্ত মার্কিন মহাকাশচারী অ্যান ম্যাকক্লেইনছবি: AFP/STR
বিজ্ঞাপন
মহাকাশে ঘটা প্রথম কোনো অপরাধ এটি৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা- নাসা এখন ঘটনাটির তদন্ত করছে৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অ্যান ম্যাকক্লেইনের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছিলো৷ এর মধ্যেই স্পেস স্টেশন থেকে এই অপরাধ করেন ম্যাকক্লেইন৷
ম্যাকক্লেইনের স্ত্রী সামার ওয়ার্ডেন মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা৷ ওয়ার্ডেন জানিয়েছেন, ম্যাকক্লেইন চুরি করে তার খরচের হিসাব দেখছেন বুঝতে পেরে তিনি ‘হতভম্ব'৷
পরিচয় চুরির অভিযোগ
ম্যাকক্লেইনের বিরুদ্ধে পরিচয় চুরি করার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওয়ার্ডেন৷ তবে ম্যাকক্লেইনের দাবি, তিনি ভুল কিছু করেননি৷ এর আগেও ওয়ার্ডেনের সম্মতিতেই তিনি তাদের আয়-ব্যয়ের ‘যৌথ' হিসেবের তথ্য দেখেছেন বলেও দাবি ম্যাকক্লেইনের৷
ম্যাকক্লেইনের আইনজীবী রাস্টি হার্ডিন জানিয়েছেন, তার মক্কেল ‘বেআইনি কিছু করার অভিযোগ অস্বীকার' করেছেন এবং তদন্তে ‘সব ধরনের সহযোগিতা' করছেন৷ তাকে এরই মধ্যে স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফিরিয়েও আনা হয়েছে৷
মহাকাশের প্রথম অপরাধ, আইন কী?
মহাকাশে কোনো দেশের সীমানা নেই৷ ফলে সেখানে কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে, তার বিচার কোন আইনে হবে, সে নিয়ে আগ্রহ রয়েছে অনেকেরই৷ কিন্তু এমন আশংকা ও চিন্তা ভাবনা অনেক আগে থেকেই মহাকাশ সংস্থাগুলোর মাথায় ছিল৷
মহাকাশে নারী
মহাকাশে নারীদের পাড়ি জমানোর ঘটনা এখন মোটেও অবাক করা কিছু নয়৷ তবে যোগ্যতা সত্ত্বেও নাসার অভিযানে যোগ দিতে মার্কিন নারীদের কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Itar-Tass/S. Baranov
প্রথম নারী
রাশিয়ার দক্ষ প্যারাসুটবিদ ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম নারী, যিনি মহাকাশে পাড়ি জমান৷ দিনটি ছিল ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন৷ মহাকাশযান ‘ভোস্তক-৬’ এ চেপে তিনি ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ এরপর আবার কোনো নারী পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে যেতে সময় লেগেছিল ২০ বছর৷ স্ভেতলানা সাভিৎস্কায়াও রুশ নাগরিক৷ ১৯৮২ সালে সোয়ুজ টি-৭ অভিযানে যান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Itar-Tass/S. Baranov
মহাকাশে যাওয়ার অনুমতি দিল না নাসা
১৯৭৮ সালে নাসা শ্যানন লুসিড, মার্গারেট সেডন, ক্যাথরিন সুলিভান, জুডিথ রেসনিক, আনা ফিশার এবং সালি রাইডকে তাদের প্রথম নারী মহাকাশ অভিযাত্রী হিসেবে নির্বাচন করে৷ ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে বেশ কয়েকজন অভিযাত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পাস করেন৷ কিন্তু সামরিক বিমান চালনা পরীক্ষা সম্পন্ন না করায় তাঁদেরকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি৷ অবশ্য ঐ পরীক্ষায় অংশ নেয়ারই সুযোগ ছিলনা নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/Cover Images/NASA
প্রথম মার্কিন নারী
১৯৮৩ সালে প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে মহাকাশে পাড়ি জমান সালি রাইড৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩২ বছর৷ চ্যালেঞ্জার মিশনে তিনিই প্রথমবারের মতো যান্ত্রিক হাত ব্যবহার করে মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ করেন৷ পরের বছর আবারও তিনি এই মিশনে যান৷ ১৯৮৭ সালে নাসা ত্যাগ করেন৷ বাকি জীবন মেয়েদের গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশন বিদ্যা শেখানোর জন্য ব্যয় করেন৷ ক্যানসারে আক্রান্ত জয়ে এই অভিযাত্রী ২০১২ সালে মারা যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
ডাক্তার থেকে মহাকাশ অভিযাত্রী
ছবিটির কেন্দ্রে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তাঁর নাম চিয়াকি মু্কাই৷ পেশায় ডাক্তার হলেও তিনিই জাপানের প্রথম নারী অভিযাত্রী৷ মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে শরীরের পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা চালান তিনি৷ এজন্য ১৯৯৪ আর ১৯৯৮ সালে দুইটি অভিযানে অংশ নেন, যা জাপানিদের জন্যেও প্রথম৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
ভারতের প্রথম নারী
কল্পনা চাওলা৷ প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী, যিনি মহাকাশে পাড়ি জমানোর সুযোগ পান৷ তাঁর প্রথম অভিযানটি ছিল ১৯৯৭ সালে৷ সূর্যের ভূ-পৃষ্ঠ নিয়ে গবেষণার জন্য একটি স্যাটেলাইট স্থাপনে এটি পরিচালিত হয়েছিল৷ ২০০৩ সালে কলম্বিয়া মহাকাশ অভিযাত্রায় অংশ নেন কল্পনা৷ যেটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পথে বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
মহাকাশে ইরানের নারী
৩২ বছর বয়সেই তিনি শিল্পপতি হিসেবে অনেক টাকার মালিক বনে যান৷ কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি৷ ২০০৬ সালে আনুশেহ আনসারি প্রথম ইরানি বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে মহাকাশে যান৷ শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম নারী যিনি ব্যক্তি উদ্যোগে মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
মহাকাশে ৬৬৬ দিন
মহাকাশে পাড়ি জমানোর অনেক রেকর্ডই মার্কিন জৈব-রসায়নবিদ পেগি হুইটসনের দখলে৷ ২০০২ সাল থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে ৬৬৬ দিন তিনি পৃথিবীর বাইরে কাটিয়েছেন, যা কোনো নারীর জন্য সর্বোচ্চ৷ ২০০৭ সালে প্রথম নারী কমান্ডার হিসেবে মিশনের দায়িত্ব পান তিনি৷ ২০১৭ সালে একটি অভিযাত্রা থেকে ২৮৯ দিন পর তিনি ফিরে আসেন ভূপৃষ্ঠে৷ ৫৭ বছয় বয়সি হুইটসনের জন্য সেটি ছিল সবচেয়ে বেশি বয়সি নারী হিসেবে মহাকাশ যাত্রা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
7 ছবি1 | 7
মহাকাশ স্টেশনের মালিকানায় রয়েছে পাঁচটি দেশ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ক্যানাডা. জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ যে দেশের মহাকাশচারী অপরাধে জড়িত হবেন, সেদেশের আইনেই তার বিচার করার বিধান রাখা হয়েছে৷
মহাকাশে ইউরোপকে একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ফলে ইউরোপের কোনো ‘মহাকাশ অপরাধীর' বিচার ইউরোপীয় আইনেই হবে৷ তবে চাইলে কোনো ইউরোপীয় দেশ তার নিজস্ব আইনেও তার মহাকাশচারীর বিচার করতে পারবে৷ মহাকাশে সংগঠিত অপরাধের জন্য রাখা হয়েছে প্রতাবর্তনের ব্যবস্থাও৷ ফলে যে দেশের অপরাধী, সে দেশ চাইলেই মহাকাশচারীকে নিজের দেশে ফেরত নিয়ে বিচার করতে পারবে৷
ম্যাকক্লেইনের সঙ্গে পরিচয়ের পর সন্তানের জন্ম দেন ওয়ার্ডেন৷ ম্যাকক্লেইন ছেলেটিকে দত্তক নিতে চাইলেও ওয়ার্ডেন শুরু থেকেই তাতে বাধা দিয়ে আসছেন৷ এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ এখন ওয়ার্ডেন বিচ্ছেদের পক্ষে মহাকাশ থেকে করা ম্যাকক্লেইনের অপরাধটিকেও শক্ত যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন৷
কিন্তু এটা প্রমাণ করা ওয়ার্ডেনের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে৷ একটা ডিভোর্স মামলার তদন্তের জন্য নাসা তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় থাকা কম্পিউটার ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দিবে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন৷