যে কাজ রোবট করতে পারে, তার স্থানে মানুষ পাঠানো স্রেফ জনগণের টাকার অপচয়, এমনটা মনে করেন যুক্তরাজ্যের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রিস৷
বিজ্ঞাপন
যাদের পকেটের জোর বেশি ও মহাকাশে ঘুরে আসার ইচ্ছে রয়েছে, সেই সব ধনকুবেরদের জন্যেই তোলা থাক মহাকাশের রহস্য উদঘাটন, বলেন যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল মার্টিন রিস৷
ব্রিটেনের হাউস অফ লর্ডসের সদস্যরা লর্ড স্পিকারের ‘কর্নার' পডকাস্ট অনুষ্ঠানে মার্টিন রিস বলেন, ‘‘মানুষবাহী মহাকাশযানের বিষয়টি টাকা ব্যয়ের দিক থেকে সার্থক কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান৷ ৫০ বছর আগে যে কাজ করতে মানুষ লাগতো, আজ সেই কাজ রোবট করতে পারছে৷ ফলে, মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর যৌক্তিকতা দিন দিন কমছে৷''
বর্তমানে, অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল পদটি পুরোপুরি সরকারি পদ নয়, বরং কিছুটা সাম্মানিক৷ রাজপরিবারকে পরামর্শ দেবার জন্য ১৬৭৫ সালে এই পদটি চালু করেন রাজা দ্বিতীয় চার্লস৷ সেই থেকে এই পদকে আলোকিত করেছেন দেশের নামী বিজ্ঞানীরা৷
‘অতি উচ্চমাত্রার ঝুঁকি' নিতে যে ব্যক্তিরা প্রস্তুত, তাদের উচিত মহাকাশ যাত্রার জন্য পকেটের টাকা খরচ করা৷ শুধু জনগণের দেওয়া করের ওপর এমন যাত্রা করা উচিত নয় বলে মনে করেন রিস৷
যুক্তরাজ্যের মহাকাশ যাত্রা যেমন
যুক্তরাজ্যের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এত দিন যাত্রীসহ প্রকল্পের তুলনায় মহাকাশ গবেষণার দিকে বেশি জোর দিতেন৷ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সোয়ুস টিএম-১২ মিশনে যোগদানের পর, হেলেন শারমান মহাকাশে পা রাখা প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক হিসাবে নিজের নাম লেখান৷
তার ২৪ বছর পর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির দলের সদস্য হয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস-এ পৌঁছান আরেক ব্রিটিশ নাগরিক, টিম পিক৷
নাসার একাধিক প্রকল্পের জন্য মহাকাশে উড়ে যাওয়া চারজন মার্কিন নাগরিকেরও জন্মস্থান এই যুক্তরাজ্য৷
আরো যা বললেন অ্যাস্ট্রোনমার রয়্যাল
১৯৯৫ সালে এই পদে নিযুক্ত হন মার্টিন রিস৷ ইলন মাস্ক যেভাবে রকেট ও বৈদ্যুতিক গাড়ির দুনিয়ায় সাফল্য এনেছেন, তার প্রশংসা করলেও মাস্কের মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়ার প্রস্তাবের সাথে সহমত নন তিনি৷
রিস বলেন, ‘‘নাসার জন্য সাশ্রয়ী রকেট বানানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য বড় সংস্থা বা বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর চেয়ে সে অনেক ভালো কাজ করেছে৷ তার বানানো রকেটগুলির পুনর্ব্যবহার সম্ভব৷ ফলে মহাকাশে কিছু অনেক কম খরচে পাঠানো যাবে৷''
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)
চাঁদে নামার এত চেষ্টা কেন?
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে বুধবার চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে ভারত৷ কিন্তু বড় মহাকাশ শক্তিগুলো চাঁদে নামতে এত মরিয়া কেন?
ছবি: ISRO via REUTERS
চাঁদের তথ্য
পৃথিবী থেকে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাঁদ৷ পৃথিবীর আবহাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ সবকিছুর উপর চাঁদের প্রভাব আছে৷ ধারণা করা হয়, সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে একটি বিশাল কিছুর ধাক্কা লেগে চাঁদ তৈরি হয়েছিল৷ চাঁদে যখন পূর্ণ সূর্য থাকে তখন তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে যায়৷ আর অন্ধকারের সময় তাপমাত্রা মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়৷
ছবি: MARTIN BERNETTI/AFP
পানি
২০০৮ সালে ভারতের চন্দ্রযান-১ মিশন প্রথম চাঁদে পানির অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিল৷ মানুষের জীবনধারণের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ৷ এছাড়া এটি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের উৎস- যা রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে৷
ছবি: NASA/Zuma/picture alliance
হিলিয়াম-৩
হিলিয়ামের একটি আইসোটোপ হচ্ছে হিলিয়াম-৩৷ পৃথিবীতে হিলিয়াম খুব বিরল৷ কিন্তু এই উপাদানটি চাঁদে ১০ লাখ টনের বেশি আছে বলে নাসা জানিয়েছে৷ পরমাণু চুল্লিতে হিলিয়াম-৩ ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু এটি তেজস্ক্রিয় না হওয়ায় বিপজ্জনক বর্জ্য তৈরি হয় না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি৷
ছবি: RAMI AL SAYED/AFP
রেয়ার আর্থ মেটাল
স্মার্টফোন, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়৷ চাঁদে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডসহ অন্যান্য রেয়ার আর্থ মেটাল আছে বলে বোয়িংয়ের এক গবেষণায় জানা গেছে৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
চাঁদ খনন কীভাবে সম্ভব?
বিষয়টি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷ খনন করতে হলে চাঁদে কোনো এক ধরনের অবকাঠামো স্থাপন করতে হবে৷ চাঁদের পরিবেশের কথা বিবেচনায় ধারণা করা যায়, খননের বেশিরভাগ কাজটি রোবট দিয়ে করতে হবে৷ আর চাঁদে পানি থাকায় মানুষও হয়ত টানা কয়েকদিন সেখানে থাকতে পারবে৷
ছবি: ingimage/IMAGO
আইন কী বলে?
এই বিষয়টিও স্পষ্ট নয় এবং অনেক ফাঁক আছে৷ জাতিসংঘের ১৯৬০ সালের আউটার স্পেস ট্রিটি বলছে, কোনো দেশ চাঁদের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারবে না এবং সব দেশের লাভের উদ্দেশ্যে মহাকাশে গবেষণা করা যেতে পারে৷ তবে আইনজীবীরা বলছেন, বেসরকারি কোনো কোম্পানি চাঁদের কোনো একটি অংশের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Christian Lehner/PantherMedia/imago images
১৯৭৯ সালের চুক্তি
ঐ সালে সই হওয়া মুন এগ্রিমেন্ট-এ বলা হয়েছে চাঁদের কোনো অংশ ‘কোনো রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকারি বা বেসরকারি সংস্থা, জাতীয় সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থা বা কোনো প্রাকৃতিক ব্যক্তির সম্পত্তি হবে না৷’’ তবে বড় কোনো মহাকাশ শক্তি এই চুক্তি অনুমোদন করেনি৷
ছবি: Seung-il Ryu/NurPhoto/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ
২০২০ সালে দেশটি আর্টেমিস অ্যাকর্ড ঘোষণা করেছিল৷ উদ্দেশ্য, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন মেনে চাঁদে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলা৷ কিন্তু চীন ও রাশিয়া এই চুক্তিতে যোগ দেয়নি৷