পৃথিবীর টান কাটিয়ে উপরে ওঠা এবং বহাল তবিয়তে আবার ঘরে ফেরা যে কতটা কঠিন, টেলিভিশনের পর্দায় মহাকাশযাত্রার দৃশ্য দেখে সেটা বোঝা কঠিন৷ একাধিক চ্যালেঞ্জ ও বিপদের আশঙ্কা আজও ঝুঁকির কারণ হয়ে রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মহাকাশে মানুষ পাঠানো যত সহজ, তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা ততই কঠিন৷ এর কারণ কী?
বাস্তবে বিষয়টি অনেক জটিল৷ মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও সেখান থেকে ফেরার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একেবারে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বিপদ জড়িয়ে রয়েছে৷ পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করার সময় রকেটকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাঁধনমুক্ত হতে হয়৷ বিশাল পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে ‘রিকয়েল প্রিন্সিপল' কাজে লাগিয়ে রকেট সেই কাজ করে৷
রকেট আসলে অনেকটা বাতাস ছাড়তে থাকা বেলুনের মতো ধেয়ে যায়৷ তবে রকেটের কিন্তু বেলুনের মতো শূন্যে বন বন করে ঘোরার অবকাশ নেই৷ নড়াচড়া করতে পারে এমন সুইভেলিং ইঞ্জিন এবং থ্রাস্টার রকেটকে সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে যায়৷ বিশেষভাবে তৈরি এক ন্যাভিগেশন সিস্টেম দিকনির্ণয় করে৷ তা সত্ত্বেও বার বার দুর্ঘটনা ঘটে৷ যেমন ২০১৪ সালে উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আন্তারেস নামের এক রকেটে আগুন ধরে যায়৷ ফলে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে রসদ পাঠানোর যানটিও ধ্বংস হয়ে যায়৷
জটিলতায় ভরা মহাকাশযাত্রা
03:24
মহাকাশচারীদের ক্যাপসুল পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে গেলেও আইএসএস পর্যন্ত পৌঁছানো বড় চ্যালেঞ্জ৷ বোর্ড কম্পিউটার ইঞ্জিন নিখুঁতভাবে চালু করে ক্যাপসুলটিকে সবার আগে আরও উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং আইএসএস-র সঙ্গে যানটির গতির সামঞ্জস্য নিশ্চিত করে৷ সামান্য ত্রুটি হলেই সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে৷ জরুরি অবস্থা দেখা দিলে মহাকাশচারীদের সরাসরি সেই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হয়৷
এবার পৃথিবীতে ফেরার পালা৷ মহাকাশচারীদের নিয়ে স্পেস ক্যাপসুল আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর ঘণ্টায় ২৮,০০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে যায়৷ ফলে সবার আগে সেটির গতি কমাতে হয়৷ যথেষ্ট দূরত্ব থাকতে থাকতে গতি কমাতে ইঞ্জিন চালু করা হয়৷ এভাবে কক্ষপথ ত্যাগ করা যায়৷
টম ক্রুজকে পেছনে ফেলে রুশ অভিনেত্রীর মহাকাশ যাত্রা
হলিউড, টম ক্রুজ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার- সবাইকেই পেছনে ফেলে দিলো রাশিয়া৷ অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কোর মহাকাশ যাত্রা শুরুর পর তাই ক্রেমলিনের ঘোষণা, ‘‘মহাকাশে আমরাই অগ্রপথিক৷’’ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Sergei Savostyanov/TASS/dpa/picture alliance
‘প্রথম’ হতে চেয়েছিলেন ক্রুজ
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছিল, হলিউডের একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করতে স্পেসএক্সের রকেটে চড়ে মহাকাশে যাবেন অভিনেতা টম ক্রুজ৷ জানানো হয়েছিল চলচ্চিত্রটির নাম এবং কাহিনি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ছবি: Imago
রাশিয়ার তুরুপ
কিন্তু টম ক্রুজের সেই ছবির নাম ঠিক হওয়ার আগে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে কাজও শুরু করে দিলো রাশিয়া৷ মঙ্গলবার ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’ নামের একটি ছবির শুটিং করতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন রাশিয়ার অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কো৷
ছবি: Sergei Savostyanov/TASS/dpa/picture alliance
আবার এগিয়ে গেল রাশিয়া?
মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিযোগিতা চলছে স্মৃতি হয়ে যাওয়া সেই ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ সময় থেকে৷ দু দেশেরই বড় কিছু অর্জন রয়েছে৷ মহাকাশে প্রথম স্যাটেলাইট এবং প্রথম মানুষ পাঠিয়েছিল রাশিয়া৷ তবে চাঁদে প্রথম সফল অভিযানটা যুক্তরাষ্ট্রের৷ চাঁদে প্রথম পা রাখা মানুষের নাম তাই নিল আর্মস্ট্রং৷ এবার স্পেস স্টেশনে শুটিং করা প্রথম অভিনয় শিল্পী হতে চলেছেন রাশিয়ার ইউলিয়া পেরেসিল্ড৷
ছবি: Roscosmos Space Agency via A/picture alliance
ইউলিয়ার মহাকাশ যাত্রা
মঙ্গলবার কাজাখস্তানের কাছের বাইকনুর নভোযান উড্ডয়ন কেন্দ্র থেকে ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং ক্লিম শিপেঙ্কোকে নিয়ে রওনা দেয় রাশিয়ার সয়ুজ এমএস-১৯ মহাকাশযান৷ মস্কোর সময় বুধবার ৩টা ১২ মিনিটে তাদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
ছবি: Ramil Sitdikov/Sputnik/dpa/picture alliance
১২ দিনের কর্মযজ্ঞ
মহাকাশে ১২ দিন থাকবেন ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং ক্লিম শিপেঙ্কো৷ সঙ্গে দুজন পেশাদার নভোচারীও থাকছেন এই অভিযাত্রায়৷ ওপরের ছবিতে ইউলিয়া এবং শিপেঙ্কোর সঙ্গে ‘কসমোনট’ আন্তন শ্কাপলারভ৷
ছবি: Roscosmos Space Agency/AP/picture alliance
চিকিৎসক ইউলিয়া
টম ক্রুজের ছবির নাম ঠিক করতে দেরি হলেও রুশ পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তার ছবির নাম ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’৷ ছবিতে এক চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করবেন ইউলিয়া৷ একজন নভোচারীর প্রাণ বাঁচাতে মহাকাশ স্টেশনে যেতে হয় তাকে। যাওয়ার পরের ঘটনাগুলোরই চিত্রায়ন হবে ১২ দিনে৷
ছবি: Sergei Savostyanov/TASS/dpa/picture alliance
ক্রেমলিনের বক্তব্য
মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন,‘‘মহাকাশে আমরাই অগ্রপথিক৷ হ্যাঁ, অন্যরাও আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে, এখানে যে সদর্থে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে তা ঠিক। এ ধরনের ফ্লাইট আমাদের অর্জনকে জনপ্রিয় করে৷ মহাকাশ নিয়ে মৌলিক চিন্তার জন্যও এটা সুখবর।”
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
7 ছবি1 | 7
ক্যাপসুলের অপ্রয়োজনীয় অংশ ফেলে দেওয়া হয়৷ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় আদর্শ গতি নিশ্চিত করতে হয়৷ সেইসঙ্গে সঠিক অ্যাঙ্গেলও জরুরি৷ ক্যাপসুলের গতি অত্যন্ত কম হলে এবং অ্যাঙ্গেল বেশি সমতল হলে যানটি পাথরের মতো সমুদ্রে আছড়ে পড়বে এবং আবার মহাকাশের দিকে ছিটকে যাবে৷
অন্যদিকে গতিবেগ খুব বেশি হলে এবং ওড়ার পথ বেশি খাড়া হলে মহাকাশ ক্যাপসুলের হিট শিল্ডের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ দেখা যাবে৷ ভেতরে মহাকাশচারীরা আগুনে পুড়ে যাবেন৷ কারণ বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ক্যাপসুলটিকে জোরে ব্রেক করানো হয়৷ সেই ঘর্ষণের ফলে প্রবল উত্তাপ সৃষ্টি হয়৷ ২,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সামলাতে হয়৷ তারপর প্যারাশুট খুলে গেলে যানের গতি আরও কমতে থাকে৷
মাটির কাছাকাছি আসার ঠিক আগে রাশিয়ার স্পেস ক্যাপসুলের বিশেষ ইঞ্জিন চালু হয়ে যায়৷ তখন ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বেগে যানটি নিরাপদে ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করতে পারে৷
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসাকে শেষ পর্যায়ে ব্রেকের বিষয়ে ভাবতে হয় না৷ কারণ মার্কিন স্পেস ক্যাপসুলগুলি পানির উপর নামে৷ ফলে সংঘাতের আশঙ্কা থাকে না৷