মহাকাশে রকেট পাঠাতে বিনিয়োগ বাড়ালেও পিছিয়ে ইউরোপ
৮ এপ্রিল ২০২৫
এই অর্থ সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড আরো শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যকরণে ব্যয় হবে৷ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এমন উদ্যোগ৷
দক্ষিণ অ্যামেরিকার ফরাসি গায়ানাতে ইউরোপের একমাত্র স্পেসপোর্ট অবস্থিত৷ ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণাধীন এই অঞ্চল থেকে প্রতি বছর অল্প কিছু রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়৷
কিন্তু এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে চলেছে৷ কেন্দ্রটির কর্মকাণ্ডে গতি আনতে আড়াইশ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করা হচ্ছে৷ এখানে ২০২৬ সাল নাগাদ একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে৷
ফরাসি গায়ানায় মহাকাশ কেন্দ্রের পরিচালক ফিলিপ লিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আগামী বছর নয়টি এবং দীর্ঘ মেয়াদে বছরে ১৫টি বা তারও বেশি উড্ডয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি৷ আমরা নতুন একটি সাইট নির্মাণ করছি যেখানে মাইক্রো-লঞ্চার থাকবে৷ এসব বেসরকারি রকেটের ক্ষমতা কম, তবে প্রতিবছর সেগুলো বড় সংখ্যায় মহাকাশে পাঠানো সম্ভব৷''
লিয়ে মনে করেন এই সম্প্রসারণ প্রয়োজনীয়৷ এবং সেটা শুধু এজন্য নয় যে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করায় মস্কোর সঙ্গে মহাকাশ সহায়তা স্থবির হয়ে আছে৷ মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মতো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে প্রায় সবকিছু উপগ্রহের মাধ্যমে করা হচ্ছে - টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জলবায়ু সমীক্ষাসহ নানা কিছু করা হচ্ছে৷ ফলে মহাকাশ এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হয়েছে৷ আমাদের সেখানে নিজস্ব প্রবেশ পথ দরকার৷ একটি মহাকাশ বন্দর সেই লক্ষ্য পূরণ করে৷’’
বছরে উড্ডয়নের সংখ্যা বাড়লে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপ্রোপালশনের আরো রকেট মোটর সরবরাহ করতে হবে৷ কর্মী সংখ্যা তাই ৩৯ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷
ইউরোপ্রোপালশনের ডেপুটি প্রোডাকশন ম্যানেজার ক্যালোজেরো সাভোকা বলেন, ‘‘আমরা দুটি প্রোডাকশন লাইনে আমাদের সক্ষমতা বাড়াবো এবং আমাদের কর্মীদের আরো প্রশিক্ষণ দেবো৷ টার্নওভার ধরে রাখা আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা মোটর প্রতি খরচ কমাবো যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউরোপের রকেট প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকে৷’’
মহাকাশ কেন্দ্রে ব্যবসা বাড়লে স্থানীয় অর্থনীতিও উপকৃত হবে৷ ফরাসি গায়ানার জিডিপির ১৫ শতাংশের উৎস মহাকাশ বন্দরটি৷
ভবিষ্যতে আঠারোশ কর্মী মহাকাশকেন্দ্রে কাজ করবেন৷ বর্তমানে সংখ্যাটি পনেরশো৷
তবে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নতুন নির্মাণ কাজের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু করতে হবে৷
নভোস্পেসের প্রধান নির্বাহী প্যাকুম রিভিউম বলেন, ‘‘স্পেসএক্স বছরে অন্তত ১০০ রকেট উৎক্ষেপণ করে৷ আর সেখানে ইউরোপ বছরে দশটি রকেট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে৷ এটা তুলনা করার মতোও নয়৷ এবং অধিকাংশ মাইক্রো-লঞ্চার এখনো বাণিজ্যিক পর্যায়ে পৌঁছায়নি৷ সেগুলো প্রস্তুত নয়৷’’
তাছাড়া মহাকাশকেন্দ্রের আধুনিকায়ন শুধু অর্থনৈতিক কারণেই প্রয়োজন নয়৷
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মিশেল ডেবরেইন বলেন, ‘‘বর্তমানে অনেক প্রতিযোগী রয়েছে৷ যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব নীতি, রাশিয়া আর এখান থেকে উৎক্ষেপণ করছে না৷ ফলে আমাদের নিজস্ব মহাকাশবন্দর এবং কৌশল প্রয়োজন৷’’
তারা ছোঁয়ার এই বেড়ে চলা বৈশ্বিক প্রবণতায় ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার বদলে প্রতিযোগিতা বেশি দেখা যাবে৷
প্রতিবেদন: লিসা লুই/এআই