মহাকাশ থেকে আচমকা পতিত হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ
২৪ অক্টোবর ২০১১মহাকাশ বিজ্ঞানের যত প্রসার ঘটছে ততই এমন আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে, কোন দিন মহাকাশ থেকে কোন জঞ্জাল এসে কার মাথায় না পড়ে! যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি, কিন্তু ঘটবে না তেমন নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারছে না৷ এই যেমন জার্মানির উপগ্রহ রোসাট এর কথাই ধরা যাক৷ রোববার আচমকাই সেটি ঢুকে পড়লো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে৷ তবে জার্মানির মহাকাশ কেন্দ্র ডিএলআর বলেছে সেটি কোন মানুষের ওপর পড়ার সম্ভাবনা দুই হাজার ভাগের এক ভাগ৷ কিন্তু দিন দিন এমন ঘটনা আরও ঘটার আশঙ্কা বেড়ে চলেছে৷
গত মাসেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো৷ মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার বাতিল হয়ে যাওয়া উপগ্রহ আপার অ্যাটমোস্ফেয়ার রিসার্চ স্যাটেলাইট বা ইউএআরএস এর ভগ্নাংশ মহাশুন্য থেকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে৷ আগে থেকেই নাসা এই ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছিল৷ ফলে সকলেই সতর্ক ছিল৷ আর উপগ্রহটি আছড়ে পড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে, ফলে সেই যাত্রায় মানুষের জান মালের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷ বিজ্ঞানীরা জানান, বাসের সমান সাইজের সেই ভগ্নাংশের প্রায় দুই ডজন টুকরো প্রশান্ত মহাসাগরের ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে৷
ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়বে রোসাট
তবে এবারের ঘটনাটি ছিল আরও অনিশ্চয়তায় ভরা৷ গত সপ্তাহেই জার্মানির মহাকাশ কেন্দ্র ডিএলআর তাদের বাতিল উপগ্রহ রোসাট এর পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা জানিয়েছিলো৷ তারা এতটুকু বলতে পেরেছিলো যে সেটি ২২ কিংবা ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়বে৷ কিন্তু সেটি ঠিক কখন এবং কোথায় আছড়ে পড়বে সেটি তারা বলতে পারেনি৷ তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেটি আপাতত ইউরোপ, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে পড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই৷ সেটি এশিয়া বিশেষ করে চীনে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ জার্মান কর্তৃপক্ষ এখনও এই বিষয়ে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি৷
বিজ্ঞানীরা এখন খতিয়ে দেখছেন কীভাবে রোসাট ভূপৃষ্ঠে ফিরে এলো৷ তারা জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ২৮০ মাইল বেগে এটির ভগ্নাংশ মাটিতে আছড়ে পড়বে৷ রোসাট উপগ্রহটির আকার একটি মিনিভ্যানের সমান বলে জানা গেছে যার ওজন ছিল ২.৬৯ টন৷ তবে যে অংশটি ভূপৃষ্ঠের দিকে ছুটে এসেছে সেটির ওজন প্রায় ১.৮৭ টন বলে জানা গেছে৷ তীব্র গতির কারণে উপগ্রহটির বেশিরভাগই জ্বলে যাবে তবে বেশ কিছু টুকরো সেটি বায়ুমণ্ডল পার হয়ে মাটিতে চলে আসবে৷ তবে উপগ্রহটিতে থাকা টেলিস্কোপের তাপরোধক কাচটি জ্বলবে না বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷ সেটি আস্ত অবস্থাতেই পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা উপগ্রহটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন৷ ডিএলআরএর মুখপাত্র আন্দ্রেয়াস শ্যুট্জ জানিয়েছেন, তাদের হিসাব মতে রোসাট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগের আধ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মাইল অতিক্রম করেছে৷
রোসাটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে জার্মানির উপগ্রহ রোসাটকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়৷ উদ্দেশ্য ছিল মহাশুন্যে থাকা ব্ল্যাক হোল এবং নিউট্রন স্টারের ছবি তোলা৷ এছাড়া এক্স-রে'র উৎস খুঁজে বের করা৷ মিশন চলাকালে রোসাট ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩৭০ মাইল উপরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিলো৷ ১৯৯৯ সালে উপগ্রহটিকে ডি কমিশন্ড করা হয় অর্থাৎ তার মিশন বাতিল করা হয়৷ এরপর থেকে সেটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ তবে সেটির ওপর নজর রাখছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ এতগুলো বছর ধরে রোসাট দিকভ্রান্ত পথিকের মত মহাশুন্যে ঘুরে বেড়িয়েছে৷ গত জুন মাসেও রোসাট ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২০৫ মাইল ওপরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিলো৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেটি কোন না কোন ভাবে মধ্যাকর্ষণের বলয়ের মধ্যে চলে আসে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই