স্পেস জাঙ্ক বা মহাকাশ বর্জ্যর জন্য দুইবার স্পেস স্টেশনে ফিরে আসতে হলো সাত মহাকাশচারীকে।
বিজ্ঞাপন
অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের পরীক্ষা করে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ ভেঙে দেয় রাশিয়া। আর তারই বর্জ্যের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্র থেকে বেরিয়েও দুইবার ফিরে আসতে হয়েছে সাত মহাকাশচারীকে। এর মধ্যে চারজন অ্যামেরিকান, একজন জার্মান ও দুইজন রাশিয়ান।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার যে মহাকাশ-বর্জ্যের কারণে সাত মহাকাশচারীর এই অসুবিধা হয়েছে, সেটি আসলে একটি রুশ উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ। রাশিয়ার অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল সেই উপগ্রহটি ধ্বংস করেছে। তারপর এই বর্জ্য এখন মহাকাশচারীদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, সোমবার সকালেই রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বেপরোয়াভাবে ওই উপগ্রহ ধ্বংস করেছে। এর ফলে এক হাজার ৫০০টি তুলনামূলকভাবে বড় টুকরো এবং হাজার হাজার ছোট ছোট টুকরো মিলে এই মহাকাশ বর্জ্য এখন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহাকাশ কেন্দ্র গ্রিন জোনে
মহাকাশচারী ডুবরভ বলেছেন, ভেঙে ফেলা উপগ্রহের টুকরো উড়ে আসছিল। মহাকাশকেন্দ্রের বর্তমান কম্যান্ডার অ্যান্টন অ্যান্টন স্কাপলেরভ টুইট করে বলেছেন, ''বন্ধুরা, এখানে সব কিছু ঠিক আছে। আমরা কর্মসূচি মেনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।''
নভচারীদের বেতন, টয়লেট সম্পর্কে তথ্য
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএসে নভচারীদের জীবন কেমন? কীভাবে তারা টয়লেট করেন? তাদের কি ‘যৌনজীবন’ থাকে? কেমন বেতন পান তারা? এসব প্রশ্নের উত্তর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: NASA
অ্যালকোহল নিষিদ্ধ
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস-এ নভচারীদের জন্য অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ৷ কারণ অ্যালকোহলের মূল উপাদান ইথানলের কারণে কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ এমনকি অ্যালকোহল আছে এমন মাউথওয়াশ কিংবা আফটারশেভ লোশনও তারা ব্যবহার করতে পারেন না৷ ছবিতে দুজন নভচারীকে ‘ভদকা টিউব’ হাতে দেখা গেলেও তার ভেতরে আসলে আছে বিট স্যুপ৷
ছবি: NASA
মহাকাশে মৃত্যু
১৯৬৭ সালে মার্কিন এক নভচারী ৫০ মাইল উপরে স্পেসপ্লেন চালানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটে মারা যান৷ ১৯৬৭ ও ১৯৭১ সালে মারা যান চার সোভিয়েত নভচারী৷ এরপর ১৯৮৩ সালে চ্যালেঞ্জার স্পেস শাটল উড্ডয়নের ৭৩ সেকেণ্ডের মাথায় বিস্ফোরিত হলে সাতজন মারা গিয়েছিল৷ ২০০৩ সালে কলোম্বিয়া স্পেস শাটল পৃথিবীর অ্যাটমোস্ফিয়ারে ঢোকার পর বিস্ফোরিত হলে তখনও সাতজন মারা গিয়েছিলেন৷
ছবি: Thom Baur/AP/picture alliance
নভচারীরা টয়লেট করেন কীভাবে?
২০০০ সালে একটি স্পেস টয়লেটের নকশা করা হয়েছিল৷ সেখানে টয়লেট সিটে বসার পর ফিতা দিয়ে উরু বাঁধার ব্যবস্থা ছিল৷ কিন্তু সেটা তেমন ভালো কাজ করেনি৷ এরপর ২০১৮ সালে নাসা ভ্যাকুয়াম স্টাইলের এক টয়লেট বের করে যেখানে বসার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য টেনে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়৷ বাথরুমের বেশিরভাগ বর্জ্যই পুড়িয়ে ফেলা হয়৷ তবে প্রস্রাব রিসাইকেল করে খাওয়ার পানিতে পরিণত করা হয়৷ ভিডিও দেখতে উপরের + চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Long Wei/Costfoto/picture alliance
নভচারীদের বেতন কত?
১৯৬৯ সালে চাঁদে যাওয়া অ্যাপোলো ১১ মিশনের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ব্যক্তিটি ছিলেন নীল আর্মস্ট্রং৷ তার বেতন ছিল বছরে ২৭ হাজার ৪০১ ডলার - বর্তমানের হিসেবে সেটা দাঁড়ায় প্রায় দুই লাখ নয় হাজার ১২২ ডলারে৷ বাংলাদেশি টাকায় সেটা বছরে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা৷ বর্তমানে যারা নাসায় নভচারী হিসেবে আছেন তাদের বেতন বছরে ৫৭ লাখ থেকে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার মতো৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বেতন ঠিক করা হয়৷
ছবি: NASA
নভচারীরা কি আগে মরেন?
মাথায় তরল জমা, রক্ত কমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে বলে আইএসএস থেকে ফেরার পরপর নভচারীদের চেহারা কিছুটা মলিন দেখায়৷ তবে মহাকাশ ভ্রমণের কারণে শরীরের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে কিনা সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ অবশ্য এটা জানা গেছে যে, আপেক্ষিকতার কারণে নভচারীরা পৃথিবীতে কয়েক মিলিসেকেণ্ড তরুণ হয়ে ফেরেন৷
ছবি: Bill Ingalls/NASA/epa/dpa/picture-alliance
মহাকাশে যৌনমিলন?
নাসা বলছে, মহাকাশে এখনও কোনো মানুষ যৌন মিলন করেনি৷ মার্কিন নভচারীরাও এই বিষয়ে কথা বলেননি৷ তবে ১৯৯২ সালে নাসার স্পেস শাটল ‘এন্ডেভার’-এ চড়ে মার্ক লি ও জ্যান ডেভিস দম্পতি আইএসএস-এ গিয়েছিলেন৷ সেটা তাদের হানিমুন ছিল৷ যদিও তাদের অভিজ্ঞতার তথ্য পাওয়া যায় না৷ মাইক্রোগ্র্যাভিটির কারণে নভচারীরা ওজনহীনতা অনুভব করায় তাদের এস্ট্রোজন হরমোন কমে যায়৷ আর এস্ট্রোজন কমের সঙ্গে যৌন মিলনের আকাঙ্খা কমার সম্পর্ক রয়েছে৷
ছবি: Bruce Weaver/AFP/Getty Images
নভচারীরা ঘুমান কীভাবে?
জার্মান নভচারী মাটিয়াস মাওরার দেখাচ্ছেন কীভাবে আইএসএস-এ নভচারীরা ঘুমান৷ দেয়ালের সঙ্গে লেগে থাকা স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে ঘুমাতে হয় তাদের৷ ফলে ঘুমানোর সময় ভেসে বেড়ানো কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা৷
ছবি: Zhang Yirong/Xinhua/picture alliance
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার স্পেস এজেন্সি জনিয়েছে, মহাকাশ কেন্দ্রটি গ্রিন জোনে আছে। যদি সত্যিই বড় বিপদের আশঙ্কা থাকতো, তাহলে মহাকাশচারীরা দ্রুত পৃথিবীতে ফিরে আসতেন।
রাশিয়ার সমালোচনা
অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিপদ এখনো কাটেনি। রাশিয়ার সমালোচনা করে তারা জানিয়েছে, রাশিয়া খুবই বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে। এর ফলে মহাকাশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা অসুবিধেজনক হয়ে পড়বে। অ্যামেরিকা তাদের বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাবে।
যুক্তরাজ্যও রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, রাশিয়া যেভাবে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল পরীক্ষা করেছে, তাতে মহাকাশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, তারা স্পেস মিসাইল পরীক্ষায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এর ফলে শুধু অ্যামেরিকা ও জার্মানির নয়, নিজের দেশের মহাকাশচারীদেরও বিপদ ডেকে এনেছিল রাশিয়া।