জার্মান ভোটারেরা দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে বিশাল পরিবর্তন এনেছেন৷ বড় দুই দলের প্রভাবকে ইতিহাসের পাতায় বন্দি করেছেন - অন্তত এখন পর্যন্ত৷ এই পরিবর্তন দরকার ছিল বলে মনে করেন ডিডাব্লিউর প্রধান সম্পাদক মানুয়েলা কাসপার-ক্লারিজ৷
বিজ্ঞাপন
পরিবর্তন এসেছে৷ জার্মান ভোটারেরা জানিয়ে দিয়েছেন শেষ মহাজোট সরকারের ক্ষুদ্র আপোস দিয়ে আর কাজ হবে না৷ এখন জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটালাইজেশন ও জার্মানির প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণের মতো বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সময়৷
এসব কাজ শুধুমাত্র ছোট দলগুলোর সঙ্গে মিলে করা সম্ভব৷ পরিবেশবাদী সবুজ দল ও ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল ছাড়া এবার কিছু করা যাবে না - এবং এটা ভালো বিষয়৷
সবুজ দলের এবার বেশি ভোট পাওয়ার মানে হচ্ছে জার্মান ভোটাররা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত৷ সে কারণে জোট সরকার গঠনের আলোচনায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে অংশ নিতে পারবে তারা৷
ব্যবসাবান্ধব দল এফডিপিকেও জোট সরকারের আলোচনায় নিতে হবে৷ তারা সবুজ দলের কিছু ইচ্ছায় বাগড়া দিতে পারে৷
জার্মান নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
রোববারের জার্মান নির্বাচনে শীর্ষ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷ আর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিডিইউ/সিএসইউ৷ বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশের পর দলগুলোর সমর্থক ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Maja Hitij/Getty Images
এসপিডির আনন্দ
রোববার জার্মানির সময় সন্ধ্যা ছয়টায় বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পর সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে৷ কারণ গতবারের চেয়ে এবার তাদের ভোট বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ৷ তবে তখনও এসপিডি শীর্ষ দল হতে যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত ছিল না৷ সোমবার সকাল হওয়ার আগেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ সাময়িক সরকারি ফল অনুযায়ী ২৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা, যা সিডিইউ/সিএসইউ দলের চেয়ে প্রায় দুই শতাংশ বেশি৷
ছবি: Maja Hitij/Getty Images
শলৎস চ্যান্সেলর হতে চান
এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎস দলের ফলাফলে খুশি৷ তিনি নিশ্চিত যে তারই চ্যান্সেলর হওয়া উচিত৷ তিনি বলেন, অনেক ভোটারই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা ‘সরকারে পরিবর্তন’ চান৷
ছবি: Lisa Leutner/AP/picture alliance
সিডিইউতে শোক
ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিডিইউ/সিএসইউ৷ সাময়িক সরকারি ফলে দেখা যাচ্ছে দলটি এবার মাত্র ২৪.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ গতবারের চেয়ে প্রায় নয় শতাংশ কম৷
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
হার মানতে নারাজ লাশেট
এমন ফলের পর সিডিইউ/সিএসইউর চ্যান্সেলর প্রার্থী লাশেট বলেছেন, ‘‘ইউনিয়নকে ভোট দেয়া মানে বাম নেতৃত্ব গঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া৷ সে কারণে আমরা সিডিইউ/সিএসইউর নেতৃত্বে সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাব৷’’
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
সবুজ দলের রেকর্ড ফল
ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে এবার পরিবেশবাদী সবুজ দল৷ সাময়িক সরকারি ফল বলছে তারা এবার ১৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ ফলে তাদের ছাড়া জোট সরকার গঠন এবার প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
এফডিপি কিছুটা ভালো করেছে
গতবারের চেয়ে এবার প্রায় এক শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল৷ এবার তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ১১.৫ শতাংশ৷ ফলে তারা কিছুটা খুশি৷ সবুজ দলের মতোই নতুন জোট সরকারে তাদের প্রয়োজন হতে পারে৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
বাম দলে হতাশা
সাময়িক সরকারি ফল বলছে এবার মাত্র ৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম দল৷ দলের প্রধান সুজানে হেনিশ-ভেলজো বলছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই বাজেভাবে হেরেছি৷’’
ছবি: Cathrin Mueller/REUTERS
এএফডিও কিছুটা হতাশ
গতবার তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট (১২.৬ শতাংশ) পেয়েছিল অভিবাসনবিরোধী এই দলটি৷ এবার ১০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছে তারা৷ দলের উপনেতা বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্শের (মাঝে) মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে এই ফলে তারা কিছুটা হতাশ৷ তবে দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা টিনো ক্রুপালা (ডানে) এই ফলকে ‘সলিড’ বলছেন৷ সঙ্গে এটাও যোগ করেছেন, ‘‘অবশ্যই হার ব্যথাও দেয়৷’’
ছবি: Ronny Hartmann/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফল করা সিডিইউ/সিএসইউ এবার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হলেও তারাও নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করতে পারে৷ এর আগে গত কয়েক দশকে তিনবার এমন ঘটনা ঘটেছে যে, যিনি চ্যান্সেলর হয়েছেন তিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলের ছিলেন না৷
ম্যার্কেল২.০
নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের ভোট ছিল মাত্র ১২ শতাংশ৷ সেই অবস্থা থেকে দলকে শীর্ষ দলে পরিণত করেছেন চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাশ শলৎস৷ বর্তমান মহাজোট সরকারে অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করা শলৎসকে অনেকে ম্যার্কেল ২.০ মনে করেন৷ কারণ ম্যার্কেলের মত তিনিও বেশি আবেগ না দেখিয়ে কাজের কাজটি করে থাকেন৷
সাময়িক সরকারি ফল বলেছে এবার এসপিডির নেতৃত্বে সবুজ ও এফডিপি দলের সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশি৷ কিন্তু সবুজ ও এফডিপি দলের মতো দুটো দলের সঙ্গে এ সংক্রান্ত আলোচনা সহজ হবে না৷ কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও কর আরোপ এই দুটি বিষয়ে ঐ দুই দলের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে৷
অর্থাৎ নতুন সরকার কেমন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে৷ তবে ভোটারেরা জানিয়ে দিয়েছেন তারা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নীতির ধারাবাহিকতা চান না৷ গত কয়েক দশকের তুলনায় সিডিইউ ও এসপিডির মতো বড় দলগুলোর ক্ষমতা ও প্রভাব অনেক কমে গেছে৷
জার্মানির রাজনীতি আরও রঙিন হয়ে উঠবে৷ ভবিষ্যতের বড় ইস্যুগুলো জলবায়ুবান্ধব ও আধুনিক নীতি দিয়ে মোকাবিলা করার এখনই সময়৷