মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার মাসখানেকের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী হত্যা মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ফাইল নষ্ট করে ফেলার অভিযোগ উঠলে সংসদের বিরোধী সদস্যরা এর সত্যতা জানতে চান সরকারের কাছে৷ এটা কি বিজেপির ‘গৈরিকীকরণ’-এর সংকেত?
ছবি: AP
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসার পর মহাত্মা গান্ধীর হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ফাইল নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে সংসদে গত ৯ই জুলাই৷ তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন৷ পরে ঐ বিবৃতি সংশোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, গত এক মাসে ১১ হাজারের বেশি সরকারি ফাইল নষ্ট করা হয় – তার মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর হত্যা মামলার মতো ঐতিহাসিক কোনো ফাইল নষ্ট করা হয়নি৷ দরকার পড়লে সেই ফাইল এবং সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ফাইল সরকার পেশ করতে রাজি আছে৷ মহাত্মা গান্ধী জাতির জনক৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান প্রশ্নাতীত৷ বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদী পার্টি সরকারে এসে নতুন করে ইতিহাস লেখার কোনো পরিকল্পনা করছে না৷
মহাত্মা গান্ধী’র সাথে আলাপচারিতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুছবি: AP
সরকারের তরফ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও আশঙ্কা এখনো দৃঢ়মূল, যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ সরকার তার শাসনকালের মধ্যে স্বাধীন ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করেছে৷ আর এই কারণেই গান্ধী হত্যায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা অন্যান্য মৌলবাদী হিন্দু সংগঠনগুলির ভূমিকার যেসব তথ্যপ্রমাণ সরকারি ফাইলে আছে, তলে তলে তা লোপাট করার পরিকল্পনা চলছে, এমনটাই সন্দেহ৷
উল্লেখ্য, মহাত্মা গান্ধীকে দিল্লির বিড়লা ভবনে প্রার্থনাসভায় যাবার মুখে গুলি করে হত্যা করেন আরএসএস-এর সদস্য নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুযারি৷ হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আরএসএস সদস্য নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয় ১৯৪৯ সালে৷ দিল্লির তিহাড় জেলে বসে লেখা গডসের চিঠিতে আছে, দেশভাগের পর হিন্দুদের অকথ্য দুঃখকষ্টের চেয়ে গান্ধীর কাছে বড় হয়ে ওঠে পাকিস্তানের স্বার্থ৷ চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রাপ্য অর্থ তাড়াতাড়ি মিটিয়ে দেবার দাবিতে তিনি অনশনে বসেন৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুকে সেই দাবির কাছে শেষপর্যন্ত নতি স্বীকার করতে হয়৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বিজেপির তাত্ত্বিক সংগঠন সঙ্ঘ পরিবারের নির্দেশে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতকে এক মৌলবাদী ‘‘হিন্দু রাষ্ট্রে‘‘ পরিণত করার রাজনৈতিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মোদীর বিজেপি সরকার, এমনটাই মনে করছে ধর্মনিরপেক্ষ সমালোচক মহল৷ তাঁদের মতে, বিজেপি সরকারের গৈরিকীকরণের অ্যাজেন্ডা এখানেই থেমে নেই৷ হাত পড়েছে স্কুল কলেজের সিলেবাসে ও পাঠ্যপুস্তকে৷ গ্রামেগঞ্জ তরুণ প্রজন্মের মাথায় গৈরিকীকরণের বীজ রোপণের উদ্দেশ্যে সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এটাকে বিজেপির নতুন সভাপতি অমিত শাহের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নীতি বলে মনে করছে অনেকে৷
স্বাধীনতা সংগ্রামকালেই আরএসএস-এর চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভারত এক সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে৷ কিন্তু এবার মোদী জমানায় নতুন সুযোগ এসেছে সঙ্ঘ পরিবারের ব্যর্থ অ্যাজেন্ডাকে পুনরুজ্জীবিত করার৷ তাতে ভারতের অতীত ইতিহাসকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়৷