জার্মানির স্টুটগার্ট শহর, যেখানে মার্সিডিজ বেঞ্জ কোম্পানির অফিস৷ সেই ব্যস্তসমস্ত মহানগরীর মাটির তলায় কোটি কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানীয় জলের এক অফুরন্ত আধার রয়েছে, এ কথা ভাবতে পারেন?
বিজ্ঞাপন
যেন ব্রাজিলে অ্যামাজোন নদীর অববাহিকায় কোনো গহীন অরণ্য – অথচ এই জার্মানিতেই! স্টুটগার্টের মতো একটি বড় শহরের নীচে পশ্চিম ইউরোপের বৃহত্তম পানীয় জলের আধার লুকনো রয়েছে৷ শুধু যেখানে ফোয়ারাগুলো আছে, সেখান থেকে ঝরে এই অমৃল্য সম্পদ৷
১৯টি ঝরনা থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ২০ লাখ লিটারের বেশি পানি পাওয়া যায়৷ ভূতত্ত্ববিদ রাল্ফ লাট্যার্নজার এই পানি সম্পদের সুরক্ষাকে তাঁর জীবনের লক্ষ্য করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানকার বিশেষত্ব হলো এই বিপুল পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি, যা গত পাঁচ লাখ বছর ধরে এখানে বয়ে চলেছে৷ আমরা এই পানিকে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করি, তবে এই পানির নাকি নানা ধরনের রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে৷''
মাটির নীচে বিস্ময়কর শহর ‘কারিজ’
পারস্য উপসাগরে কিশ দ্বীপের নীচে আছে অবিশ্বাস্য এক শহর৷ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দ্বীপটি ভীষণ পরিচিত৷ এর নীচে আছে ১০ হাজার বর্গমিটারের একটি ভূ-গর্ভস্থ শহর৷ কারিজ নামে এই শহরটি ২৫০০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল৷
ছবি: bartarinha
বিশুদ্ধ পানির আধার
তখনকার অধিবাসীরা এটি নির্মাণ করেছিলেন পানি সংরক্ষণ ও বিশুদ্ধকরণের আধার হিসেবে৷ অনুর্বর এলাকাটিতে ঐ শহরটি ছিল তাদের বাঁচার অন্যতম উপকরণ৷ চাষবাসও করা হতো ঐ পানি দিয়ে৷
ছবি: nasimeqaen
নির্মাণ কাল
২৫০০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল শহরটি৷
ছবি: nasimeqaen
দীর্ঘ কুয়া
১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে কুয়া৷
ছবি: khabaronline
বিশুদ্ধকরণের তিন স্তর
কুয়ায় জমানো পানি স্বয়ক্রিয়ভাবে ফিল্টারে চলে যেত, সেখানে তিন স্তরের ফিল্টারে পরিশোধন হতো৷
ছবি: khabaronline
প্রথম স্তর
তিনটি স্তরের প্রথমটি প্রবালের, যেখানে বড় বড় পদার্থ আটকে যায়, শুষে নেয় পানির অম্লতা৷
ছবি: bartarinha
দ্বিতীয় ধাপ
দ্বিতীয় স্তরটি মাটির তৈরি, ছোট ছোট পদার্থগুলো এখানে আটকা পড়ে৷
ছবি: khabaronline
শেষ স্তর
তৃতীয় ও শেষ স্তরটি ‘মার্ন’ নামে বিশেষ এক ধরনের মাটির তৈরি, যেটাতে সূক্ষ্মতর পদার্থ আটকে যায়৷
ছবি: khabaronline
বিভিন্ন স্তরের পানির ব্যবহার
এক একটি স্তরের পানি ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো৷
ছবি: khabaronline
সুড়ঙ্গের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ
ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গও রয়েছে এখানে৷ ছোট ছোট নৌকায় করে সর্বর্নিম্ন স্তরে থাকা বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করা যেতো৷
ছবি: khabaronline
হারিয়ে যাওয়া শহর
সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, আর শহরটি হারিয়ে গেছে৷ তবে আধুনিক প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, তখনকার ঐ পানি বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তি বেশ ভালো ছিল৷
ছবি: khabaronline
পুনরাবিষ্কার
১৯৯৯ সালে ঐ এলাকায় একটি শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের সময় শহরটি পুনরাবিষ্কার করা হয়৷
ছবি: bartarinha
হারিয়ে যাওয়া শহর সংস্কার
তাই শহরটি ভেঙ্গে ফেলার বদলে ডেভেলপাররা পুরোনো শহরটিকে সংস্কার করে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: khabaronline
টানেল সংস্কার
ঐতিহাসিক প্রবাল প্রাচীরগুলো এখনো থাকলেও টানেলের কিছু অংশ ধসে পড়েছিল, যা সংস্কার করা হয়েছে৷
ছবি: bartarinha
পুরোনো-নতুনের মেলবন্ধন
পুরোনো শহরটিকে ঠিক রেখেই রেঁস্তোরা, চায়ের দোকান, অ্যাম্ফিথিয়েটার, সম্মেলন কেন্দ্র এবং গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে৷ এ যেন পুরোনো ও নতুনের মেলবন্ধন৷
ছবি: bartarinha
পর্যটন স্থান
ভূ-পৃষ্ঠের ১৬ মিটার নীচে অবস্থিত শহরটি দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান প্রচুর পর্যটক৷
ছবি: nasimeqaen
15 ছবি1 | 15
স্বাস্থ্যকর
ঝরনার পানিতে এমন অনেক খনিজ ও রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা এই পানিকে বিশেষভাবে স্বাস্থ্যকর করেছে৷ নলের মাধ্যমে সেই ভূগর্ভস্থ পানি বিভিন্ন ফোয়ারা ও সুইমিং পুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – সম্পূর্ণ প্রকৃতিদত্ত পানি, যা-তে কোনো ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক যোগ করা হয়নি৷ হাজার হাজার বছর ধরে এভাবে এই পানি রোগ লাঘব বা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷
ভূতত্ত্ববিদ রাল্ফ লাট্যার্নজার বললেন, ‘‘প্রস্তরযুগের মানুষ ও তার অনেক পরে রোমানরা এই সব ঝরনার কাছে তাদের বসতি স্থাপন করেছে ও ঝরনার জলে স্নান করেছে৷ আজ পর্যন্ত এটা এক অফুরন্ত সম্পদ৷ ''স্টুটগার্টের ঝরনাগুলো রোগ নিরাময়ের উৎস হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত৷ রসায়নবিদরা নিয়মিতভাবে পানির নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখেন, পানিতে অপরিষ্কার কিছু আছে কিনা৷ বৃষ্টির সঙ্গে যে পানি ২০ বছর আগে মাটিতে পড়েছে, তা আজ কলের মুখ দিয়ে বের হচ্ছে৷ রাল্ফ লাট্যার্নজার জানালেন, ‘‘নিয়মিতভাবে এই পানির নবায়ন হয়৷ তা সত্ত্বেও তা সুরক্ষা করা আবশ্যক, কেননা আগামী প্রজন্মের মানুষদেরও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন পড়বে৷''
জলের নাম জীবন৷ এখানে সেই পানি নিজে থেকেই মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে, পৃথিবীর সর্বত্র যা হয় না৷ তাই তাকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার৷
মাছের জন্য লিফট, সিঁড়ি, ট্রেন!
কখনও ভেবে দেখেছেন নদীর যে অংশে বাঁধ দেয়া আছে সেই অংশটি মাছ পার হয় কীভাবে? ছবিঘরে থাকছে সেই উত্তর৷
লিফট
ছবিতে বাঁধের ডানপাশে যে স্থাপনাটি দেখতে পাচ্ছেন সেখানে মাছের জন্য লিফটের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে মাছ উপর থেকে নীচে কিংবা নীচ থেকে উপরে যেতে পারে৷ জার্মানি এক কোম্পানি এই লিফট তৈরি করে ‘জার্মান ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে৷
ছবি: Baumann Hydrotec
যেভাবে কাজ করে
বাঁধের নীচে স্থাপিত একটি চেম্বারের মধ্যে থাকা কন্টেনারের মধ্যে মাছ প্রবেশ করার পর ঢাকনা বন্ধ হয়ে যায়৷ এরপর চেম্বারের মধ্যে পানি প্রবেশ করতে থাকলে কন্টেনারটি উপরের দিকে উঠতে থাকে৷ এভাবে সম্পূর্ণ উপরে উঠে যাওয়ার পর ঢাকনাটি খুলে গেলে মাছ বের হয়ে যায়৷
ছবি: Baumann Hydrotec
লিফট কেন দরকার
কারণ অনেক মাছই আছে যেগুলো ডিম পাড়তে কিংবা খাবারের সন্ধানে অনেক পথ পাড়ি দেয়৷ যেমন স্যামন মাছ ডিম পাড়ার উপযুক্ত জায়গার সন্ধানে শত শত কিলোমিটার দূরে যায়৷ এই চলার পথে মনুষ্যসৃষ্ট কোনো বাধা পেরোতে মাছের লিফট প্রয়োজন হয়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
কিন্তু ব্যবস্থা না থাকলে?
ছবিতে যে বাঁধটি দেখতে পাচ্ছেন সেখানকার নীচের অংশে কোনো মাছ পৌঁছানোর পর যদি লিফট না পেয়ে সামনে যেতে না পারে তাহলে কী হতে পারে? উপর থেকে পানি যে বেগে পড়ছে তার প্রভাবে কি মাছ মরে যেতে পারে না?
ছবি: Getty Images/Jeff T. Green
মাছের জন্য ট্রেন!
১৯৪৪ সালে যখন দক্ষিণ কোরিয়ার হওয়াচন বাঁধ তৈরি হয় তখন তার কারণে মাছেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ চলার পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল৷ এর সমাধান করা হয় মাছের জন্য মনোরেল তৈরি করে৷ এর মাধ্যমে মাছকে বাঁধের এক স্তর থেকে আরেক স্তরে পৌঁছে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap News
ইউরোপের সবচেয়ে বড়
জার্মানির হামবুর্গে এলবে নদীতে মাছেদের জন্য প্রায় সাড়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে মোট ৪৫টি পুল রয়েছে, যেগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত৷ চলার পথে মাছেদের এই পুলগুলো ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়৷ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ হাজার মাছ এই পথ পাড়ি দেয়৷
ছবি: dapd
ঘুরানো সিঁড়ি
লিফট বা মনোরেল ছাড়াও অনেক জায়গায় মাছেদের জন্য এমন ঘুরানো সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এর সুবিধা হলো, এতে মাছেদের আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lübke
জার্মানির কিল শহরে
উত্তর জার্মানির কিল শহরের একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে মাছেদের জন্য এই ঘুরানো সিঁড়ি স্থাপনা করা হয়েছে৷ এটি ২০০ মিটার দীর্ঘ৷ আর এতে ৩৬টি পুল আছে৷