মহানবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে ‘শিশু যৌন নিপীড়ক' ও ‘সন্ত্রাসী' আখ্যা দেয়া নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিক খেয়ার্ট ভিল্ডার্সকে টুইটারে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছে সে দেশের ১৪৪টি মসজিদ নিয়ে গঠিত এক সংগঠন৷
বিজ্ঞাপন
‘দ্য টার্কিশ ইসলামিক কালচারাল ফেডারেশন' (টিআইসিএফ) নামের ঐ সংগঠন অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে ভিল্ডার্সকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে৷
টুইটার এই আবেদনে সাড়া না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন টিআইসিএফ সংগঠনের আইনজীবী এয়দার কোজে৷
টিআইসিএফ বলছে, ভিল্ডার্সের কয়েকটি টুইট সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে৷ এছাড়া টিউনিশিয়া, পাকিস্তান, মরক্কো ও ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশের আইনও ভঙ্গ করেছে বলে মনে করছে সংগঠনটি৷
কোজে বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী ঘৃণা ছড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টুইটারকে ব্যবহার করছেন ভিল্ডার্স৷ এর অর্থ হচ্ছে, শুধু ভিল্ডার্স নয়, টুইটারকেও ঐ দেশগুলোতে শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে৷''
উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসের ডানপন্থি দল ‘ফ্রিডম পার্টি'র নেতা ভিল্ডার্স ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক টুইটে মহানবিকে ‘শিশু যৌন নিপীড়ক, গণ হত্যাকারী, সন্ত্রাসী ও পাগল' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷
এদিকে, টুইটারে তাঁকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগকে ‘পাগলামি' বলে সোমবার এক টুইট করেছেন ভিল্ডার্স৷
মহানবিকে নিয়ে চলচ্চিত্র, মুসলিম বিশ্বে আলোড়ন
ইরানে তৈরি হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র৷ মুসলিম বিশ্বে এ ছবি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোড়ন৷ ইরানে খুব জনপ্রিয়তা পেলেও ইরানের বাইরে ছবির প্রচার বন্ধ করা, এমনকি হলেও ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷
ছবি: mohammadmovie.com
ব্যয়বহুল ছবি
৩৯ বছর আগে ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)- কে নিয়ে নির্মিত আরেকটি চলচ্চিত্র ইসলামি বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল৷ ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ছিল, ‘মুহাম্মদ, মেসেঞ্জার অফ গড’৷ সিরীয়-অ্যামেরিকান পরিচালক মুস্তাফা আক্কাদ সেই ছবির জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার ২০ গুন খরচ করে এবার নির্মাণ করা হয়েছে ‘মুহাম্মদ’৷ ১৭১ মিনিটের এ ছবির নির্মাণ ব্যয় ৩৬ মিলিয়ন ইউরো বা ৪০ মিলিয়ন ডলার!
ছবি: mohammadmovie.com
কেন এই ছবি?
ছবির পরিচালক ইরানের মাজিদ মাজিদি৷ মহানবিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণ জানাতে গিয়ে এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘‘ কিছু লোকের কারণে ইসলাম ধর্মের এক ধরণের উগ্রতা, হিংস্রতা, সন্ত্রাসের ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে৷ কিন্তু ইসলাম আসলে এমন নয়৷ ইসলামের নাম ব্যবহার করে যেসব জঙ্গি সংগঠন নৃশংসতা, বর্বরতা করছে, ইসলামের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই৷ আমি চেয়েছি ইসলাম যে শান্তি, বন্ধুত্ব, ভালোবাসার ধর্ম সেটা তুলে ধরতে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
ইরানের হলগুলোতে দর্শকের ঢল
তেহরানের রাস্তার পাশে দেখুন ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ছবির কত বড় বিজ্ঞাপন! শুধু বিলবোর্ডে নয়, ইরানের অধিকাংশ দর্শকের হৃদয়েও স্থান করে নিয়েছে ৭ বছর সময় নিয়ে গড়ে তোলা এই চলচ্চিত্র৷ ইরানের বেশিরভাগ দর্শক প্রশংসাই করছেন ছবিটির৷ হলগুলো উপচে পড়ছে দর্শকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
আছে এ আর রহমানের সুরের জাদু
শুধু বড় বাজেটের ছবিই নয়, বড় বড় শিল্পী, কলা-কুশলীদের ছবিও ‘মুহাম্মদ’ (সা.)৷ পরিচালক মাজিদ মাজিদি সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনবারের অস্কার বিজয়ী সিনেমাটোগ্রাফার ভিত্তোরিও স্তোরারোকে৷ সংগীত পরিচালনার কাজটি করেছেন ভারতের এ আর রহমান৷ দুবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী রহমানের সংগীত দর্শকদের স্বপ্নাবিষ্ট করে রাখায় বড় ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: AP
কী আছে ছবিতে?
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘটনাবহুল জীবন থেকে শুধু শৈশবের অংশটাকেই তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে৷ প্রথমে ইরানে মুক্তি পেলেও ছবিটি ইতিমধ্যে বাইরে দেখানোও শুরু হয়েছে৷ মন্ট্রিয়ল চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি৷ওপরে ছবির শুটিংয়ের একটি দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Foghani
মহানবির মর্যাদা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ
মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় নবির মর্যাদা রক্ষার্থে ছবিটি ইরানের ‘ফজর উৎসব’-এর প্রতিযোগিতার অংশ হয়নি৷ প্রতিযোগিতার বাইরে রেখে দেখানো হয় ছবিটি৷
ছবি: mohammadmovie.com
সমালোচনা, নিষিদ্ধ করার দাবি
‘মুহাম্মদ’ শিয়া মুসলমানদের মাঝেই সমাদৃত হচ্ছে৷ সুন্নিরা এ ছবি নিষিদ্ধ করার দাবিও করেছেন৷ ‘‘শরিয়তে নবিদের যে কোনো ধরনের উপস্থাপন নিষিদ্ধ’’ -এই যুক্তিতে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়৷ তবে পরিচালক মাজিদ মাজিদির পরিকল্পনা জানিয়েছেন, এই ছবি আসলে তাঁর ‘ট্রিলজি’-র অংশ, অর্থাৎ মুসলমানদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আরো চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা আছে তাঁর৷