1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌মহাভারতের কালে ইন্টারনেট!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৩ এপ্রিল ২০১৮

মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল!‌ বলেছেন ত্রিপুরার নবীন মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির বিপ্লব দেব৷ শোনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার হাসি আর থামছে না৷

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিপ্লব দেব (মাঝে)ছবি: Govt. of Tripura

‘‘মহাভারতের যুগে বোধহয় বিড়ি-সিগারেটও ছিল৷ এবং হনুমান নির্ঘাত সিগারেট খেতো৷ এবং ধূমপায়ীদের যেরকম বদঅভ্যেস, শেষ টান দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরোটা যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া, হনুমান নিশ্চিত তা-ই করেছিল৷ আর তার থেকেই লঙ্কাকাণ্ড হয়েছিল৷’’ নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন একালের অন্যতম খ্যাতিমান গল্পকার শমীক ঘোষ৷ কিন্তু কথা তো হচ্ছে মহাভারতের!‌ আর হনুমান তো রামায়ণের!‌ শমীকের প্রবল যুক্তি, যদি মহাভারতের সময় ইন্টারনেট থাকে, তাহলে হনুমানের থাকতে অসুবিধে কোথায়!‌ ডয়চে ভেলেকে বললেন শমীক৷

যদি মহাভারতের সময় ইন্টারনেট থাকে, তাহলে হনুমানের সিগারেট খেতে অসুবিধে কোথায়!‌: শমীক ঘোষ

This browser does not support the audio element.

একা শমীক নন, গোটা সোশ্যাল মিডিয়া এখন হেসে আকুল ত্রিপুরার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে নিয়ে৷ অসংখ্য রসিকতা এখন বাজারে ঘুরছে৷ কেউ বলছেন, সীতা নির্ঘাত কোনও কমজোরি মোবাইল নেটওয়ার্কের গ্রাহক ছিলেন৷ সে কারণে, যখন রাবণ সীতাকে হরণ করে নিয়ে যাচ্ছে, সীতার মোবাইল কিছুতেই সিগন্যাল ধরতে পারেনি৷ কেউ আবার বলছেন, লক্ষ্মণের অ্যান্টি ভাইরাস ফায়ারওয়াল যথেষ্ট ভালো ছিল না, এ কারণে রাবণ ভাইরাসের অ্যাটাক হয়েছিল!‌ আর মহাভারতে তো এ ধরনের গল্প বানানোর রসদ প্রচুর৷ কাজেই রসিকতা বন্ধ হচ্ছে না৷ একের পর এক নতুন চুটকি বাজারে আসছে৷

ত্রিপুরার রাজ্যপাল, একসময় পশ্চিমবঙ্গের ডাকসাইটে তার্কিক বিজেপি নেতা, খুবই পড়াশোনা করা পণ্ডিত মানুষ হিসেবে পরিচিত তথাগত রায় এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেছেন, উড়ন্ত যান থেকে দুর সংযোগ ব্যবস্থা এবং দূরদর্শন নিশ্চিভাবেই মহাভারতের কালে ছিল৷ কোনও ‘‌প্রোটোটাইপ’ না হলে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা হঠাৎ কীসের থেকে এরোপ্লেন, মোবাইল ফোন, বা টেলিভিশন, ইন্টারনেটের ধারণা পেলেন?‌

মহাভারত ঠিক করে পড়া না থাকার কারণেই এই ধরনের ভুল এবং বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ায়: শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ

This browser does not support the audio element.

ভুলটা ধরালেন লেখক-গবেষক শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, মহাভারত ঠিক করে পড়া না থাকার কারণেই এই ধরনের ভুল এবং বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ায়৷ মহাভারত নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করেছেন এবং এখনও করছেন শুদ্ধসত্ত্ব৷ বস্তুত তাঁর লেখা মহাভারতের একটি আধুনিক সংস্করণের চারটি খণ্ড ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে এবং যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে৷ তিনি জোর দিয়ে বলছেন, মূল মহাভারতে কোথাও লেখা নেই যে সঞ্জয়, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পাশে বসে দূরে ঘটতে থাকা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ধারাবিবরণী দিতেন!‌ বরং বলা আছে, সঞ্জয় মাঝে মাঝে ধৃতরাষ্ট্রের কাছে এসে যুদ্ধের সংবাদ দিয়ে যেতেন৷ ওসব দিব্যদৃষ্টিতে দূরে বসেই যুদ্ধ দেখা এবং ধারা বিবরণী দেওয়ার বিষয়টা পরে কোনওভাবে সংযোজিত হয়েছে৷ তবে এ-ও ঠিক যে, বিশ্ববিখ্যাত ইটালিয়ান শিল্পী-দার্শনিক লিওনার্দো দা ভিঞ্চির কল্পনায় আকাশযানের নকশা হওয়ার আগেই মহাভারতে রাজা-রাজড়া এবং দেবতাদের আকাশযানের কথা আছে৷ যেমন নারদ মুনি৷ তাঁর উড়ন্ত ঢেঁকিটি ঠিক যেন ব্যক্তিগত ব্যবহারের বিমান, যাতে চেপে তিনি যত্রতত্র যেতে পারেন৷ তবে শুদ্ধসত্ত্ব এ ব্যাপারেও নিশ্চিত যে, এসবই মহাভারত রচয়িতাদের কল্পনার উড়ান, যা একসময় অনেক বিস্তৃত, সুদূরে প্রসারিত ছিল৷

যেমন শুদ্ধসত্ব উল্লেখ করেছেন, পুরাণের আমলেও প্লাস্টিক সার্জারির মতো জটিল অস্ত্রোপচারের প্রচলন থাকার গুজবটির৷ সিদ্ধিলাভের দেবতা গনেশের মাথাটি যে হাতির মতো, সেটি আদতে প্রাচীন প্লাস্টিক সার্জারিরই নমুনা বলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির অনেক নেতাই দাবি করেন৷ কিন্তু শুদ্ধসত্ত্ব’র পাল্টা প্রশ্ন, এই দুরূহ অস্ত্রোপচার করতো কারা?‌ ব্রাহ্মণরা?‌ কিন্তু শাস্ত্রমতে ব্রাহ্মণদের মৃতদেহ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ!‌ এই প্রসঙ্গে শুদ্ধসত্ত্ব এনেছেন মহাভারতের জরাসন্ধ চরিত্রটির কথা, যে জন্মেছিল দ্বিখণ্ডিত হয়ে, কিন্তু জরা নামে এক রাক্ষসী স্নেহপ্রবণ হয়ে দেহখণ্ডদুটির সন্ধি করে তাকে বাঁচিয়ে তুলেছিল৷ তাহলে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, রাক্ষসীরা অস্ত্রোপচার করতে পারতো এবং সেটাও নিছক প্লাস্টিক সার্জারি নয়, মানবশরীরের ভিতরকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জুড়ে দেওয়ার মতো অভাবনীয় শল্যবিদ্যা আয়ত্বে ছিল রাক্ষসীদের৷

কাজেই রাজনৈতিক নেতারা বলেই খালাস, মহাভারত পড়ে দেখার দায় তাঁদের কারও নেই!‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ