মহামারির সুযোগে ধনী হয়েছেন আরও ধনী। বিশ্বের প্রথম ১০ জন ধনী ব্যক্তি আরও বেশি অর্থের মালিক হয়েছেন করোনাকালে। অক্সফ্যামের সমীক্ষা বলছে, দারিদ্র্য এবং অসমতা বৃদ্ধির ফল লাভজনক হয়েছে তাদের জন্য।
বিজ্ঞাপন
দারিদ্র্যবিরোধী এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মত, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য গোটা বিশ্বকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জুকারবার্গ এবং বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন।
১০ ধনী ব্যক্তির মিলিত সম্পদ এই সময়ে ৭০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ দৈনিক বেড়েছে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার৷ অথচ, মুদ্রার অন্য পিঠ দেখলে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ পড়ে গেছেন গরিবের তালিকায়।
ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভার্চুয়াল বৈঠকে উঠে এসেছে চরম এই বৈষম্যের কথা। অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে, জাতিগত বৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য বেড়েছে। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের দূরত্বও বাড়িয়েছে এই মহামারি।
এই রিপোর্টে উল্লিখিত ১০ জন ধনী ব্যক্তি হলেন টেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন, ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ, মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও বিল গেটস এবং স্টিভ বলমার, ওরাকলের সাবেক সিইও ল্যারি এলিসন, মার্কিন বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট এবং ফরাসি অভিজাত গোষ্ঠীর এলভিএমএইচের প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট।
রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, আচমকা নয়, খুব সুনির্দিষ্টভাবে এই বৈষম্য ঘটেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের সময় সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাবানদের জন্য কাঠামোগত নীতি বাছাই করা হয়। গরিব মানুষ, নারী, জাতিগত বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীরা এর ভুক্তভোগী।
অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের এক্সিকিউটিভ অধিকর্তা গাব্রিয়েলা বুচের জানান, এই বৈষম্য রীতিমতো আপত্তিকর। এই বৈষম্যের হিংসাত্মক ভুলগুলোকে পাল্টা আঘাত করে সংশোধন করা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। লোভ, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপায়ে সুযোগসন্ধানী মনোবৃত্তি সবটা ধরা পড়েছে মহামারি আবহে। এই চরম অসাম্য অর্থনৈতিক হিংসার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
২০২০ সালের ছবিঘর
করোনা যাদের টাকার পাহাড়
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মহাসংকটে৷ তবে এই পরিস্থিতিতেও কেউ হয়েছেন বিলিয়নিয়ার, আবার কেউ এগিয়ে চলেছেন বিলিয়নিয়ার থেকে ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে৷ তাদের নিয়েই এ ছবিঘর...
ছবি: Dennis Tan Tine/Star Max//AP/picture alliance
যিনি হবেন প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার
অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস আগে থেকেই বিশ্বের সেরা ধনী৷ তবে করোনা সংকটের সময় তার কোম্পানির ব্যবসা এত ফুলে-ফেঁপে উঠেছে যে এই ধারা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হবেন তিনি৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বেজোসের মোট সম্পদের দাম ১৯৩ বিলিয়ন ডলার (১৬১ বিলিয়ন ইউরো)৷
ছবি: Pawan Sharma/AFP/Getty Images
মাস্কের পোয়াবারো
বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের সিইও এলন মাস্কেরও এখন পোয়াবারো৷দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া এই অ্যামেরিকান উদ্যোক্তা সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় বিল গেটসকে পিছনে ফেলেছেন৷ এলন মাস্কের মোট সম্পদের দাম এখন ১৩২ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Getty Images/M. Hitij
রাতারাতি বিলিয়নিয়ার ইউয়ান
করোনার সময়ে ভীষণ কাজে লাগছে জুম অ্যাপ৷অনলাইন ক্লাস, ইন্টারভিউ, টকশোসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে এই অ্যাপের সহায়তায়৷ জুম অ্যাপের মালিক এরিক ইউয়ানের মোট সম্পদের দাম এখন ১৯ বিলিয়ন ডলার৷হ্যাঁ, জেফ বেজোসের ১৯৩ বিলিয়ন এবং এলন মাস্কের ১৩২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় তা খুবই কম, কারণ চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাড়ি জমানো ইউয়ানের জুম পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ২০১৯ সালে, অর্থাৎ মাত্র এক বছর আগে৷
ছবি: Kena Betancur/Getty Images
ফোলিকে করোনার ‘উপহার’
করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি এড়াবেন কী করে? কেন ব্যায়াম করুন, ইনডোর সাইকেল চালান! করোনা সংকট শুরুর পর থেকে অনেকেই তা করছেন৷ আর তাই ইনডোর সাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান পেলোটনের শেয়ার বিক্রি তিনগুণ বেড়ে গেছে৷ সেই সুবাদে রাতারাতি বিলিয়নিয়ার হয়ে গেছেন পেলোটনের সিইও জন ফোলি৷
ছবি: Mark Lennihan/AP Photo/picture alliance
এক জার্মানের ক্যানাডা ‘জয়’
কোবলেন্ৎসে জন্ম নেয়া টোবিয়াস ল্যুটকে জার্মানি থেকে ক্যানাডায় গিয়েছেন ২০০২ সালে৷তখন মাত্র ২১ বছর বয়সে বাড়ির গ্যারেজে শুরু করেছিলেন ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা৷ তার প্রতিষ্ঠান শপিফাই করোনা সংকটে হাজার হাজার মানুষকে অনলাইন দোকান খুলতে সহায়তা করেছে৷ ফলে ক্যানাডার ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল এন্টারপ্রাইজ’ হয়ে গেছে শপিফাই এবং ফোলির মোট সম্পদের দাম দাঁড়িয়েছে নয় বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Wikipedia/Union Eleven
ভ্যাকসিন কপাল খুলেছে যার
জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর সাহিনের সম্পদের দাম রাতারাতিই বেড়ে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে৷ কেন এমন হলো? কারণ, বায়োনটেকের উদ্ভাবন করা ভ্যাকসিন৷
ছবি: BIONTECH/AFP
হ্যালোফ্রেশ খোলা আছে তাই
করোনার কারণে জার্মানির সব রেস্তোরাঁ যখন বন্ধ, তখন টাটকা খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করে হ্যালোফ্রেশ৷বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এরিক রিশটারেরও কপাল খুলে যায় তাতে৷ এই কয়েকমাসেই তিনি নাকি বিলিয়নিয়ার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে৷
ছবি: Bernd Kammerer/picture-alliance
সবচেয়ে ধনী নারী
জেফ বেজোসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও অ্যামাজনের শেয়ার ছাড়েননি ম্যাকেঞ্জি স্কট৷ সে কারণেই বেজোসের সাবেক স্ত্রী এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী৷ তার সম্পদের দাম ৭২ বিলিয়ন ডলার৷ করোনা একদিকে অ্যামাজনের মালিক, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জেফ বেজোসকে আরো ধনী করেছে, অন্যদিকে তার সাবেক স্ত্রী-কেও দিয়েছি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী হওয়ার সুযোগ৷
ছবি: Dennis Tan Tine/Star Max//AP/picture alliance