জার্মানিতে সামনে ইস্টারের ছুটি আসছে৷ অন্য বছরগুলোতে এই সময় দুই সপ্তাহের স্কুল ছুটি থাকায় অনেকে ভ্রমণে বের হন৷ কিন্তু এবার সেটা করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
‘‘মহামারি কোনো ছুটি নেয় না,’’ বুধবার বলেন তিনি৷ ম্যার্কেল বলেন, ইস্টারের ছুটির সময় মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটায়, একদিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য কোথাও বেড়াতে যায়৷ কিন্তু ‘‘এ বছর সেটা অন্যরকম হতে হবে,’’ যোগ করেন তিনি৷
জার্মানিতে চলাফেরায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সময়সীমা ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলর৷
বর্তমান সময়সীমা ৫ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু ম্যার্কেল বলেন, ‘‘চলাফেরায় সীমাবদ্ধতার বিষয়টি এখনই শিথিলের চিন্তা করা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে৷ এখন সেটা করলে পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যাবে৷ আমাদের যা অর্জন করতে হবে তার চেয়ে এখনও অনেক দূরে আছি আমরা৷’’
জার্মানিতে বর্তমানে দুজনের বেশি একসঙ্গে বাইরে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ তবে পরিবারের সদস্য কিংবা একই ঘর বা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের জন্য এই সংখ্যা প্রযোজ্য নয়৷
এছাড়া জনসম্মুখে একে অপরের চেয়ে অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে৷
জার্মানির জীবনযাত্রায় করোনার প্রভাব
জার্মানিতে করোনার সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছে৷ যার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে আনতে হচ্ছে নানা পরিবর্তন৷ দর্শকহীন ফুটবল ম্যাচ বা ফ্লাইট বাতিল, অনুষ্ঠান বা মেলা স্থগিত কিংবা গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়া, সবই হচ্ছে করোনার প্রভাবে৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
খাদ্য সহায়তা বন্ধ
জার্মানিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন ধরে লোকজন নিত্যপণ্য কেনা শুরু করে৷ টিনজাত খাবার এবং টয়লেট পেপারের তাক তো খালিই থাকছে৷ এ অবস্থায় দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Matzka
ফাঁকা স্টেডিয়াম
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভিড় এড়িয়ে চলা৷ যে কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে৷ স্বাস্থ্য ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ‘ বিবেচনা করে খালি স্টেডিয়ামে জার্মান ফুটবল লীগের ম্যাচ আয়োজন করতে ক্লাব ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg
একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল
করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর জার্মানিতে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হচ্ছে৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাইপৎশিশ বইমেলা, মুজিকম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
এখনো খোলা স্কুল
ইটালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ জার্মান সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ যদিও দেশটির অন্তত ১০০টি স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বাডেন-ভ্যুটের্নবের্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতের কথা ভাবছেন৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon/F. Hoermann
এশীয়রা বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন
চীনের উহান নগরীতে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়৷ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ করোনা আতঙ্কে পশ্চিমা দেশগুলোতে লোকজন শুধু চীন নয় বরং এশীয় রেঁস্তোরা ও দোকান এড়িয়ে চলছেন৷ এশীয় চেহারার কারণে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ লাইপৎশিশে বুন্দেস লিগার ম্যাচ দেখতে যাওয়া একদল জাপানিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
এয়ারলাইন ব্যবসায় ভাটা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে; বিশেষ করে এয়ারলাইনগুলোর৷ জার্মানির এয়ারলাইন লুফথান্সার ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের প্রায় ১৫০ উড়োজাহাজ বসে আছে, বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১০০র বেশি ফ্লাইট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
গাড়ি উৎপাদনে ধস
ডিসেম্বরের শেষ দিকে উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর জানুয়ারি থেকে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ আছে৷ জার্মানির গাড়ি উৎপাদন শিল্পেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/J. Meyer
পর্যটক নেই
জার্মানির পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন৷ সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৭৬ শতাংশের বেশি হোটেল ও রেঁস্তোরা তাদের বুকিং বাতিল হওয়ার কথা জানিয়েছে৷ আয়ও একইভাবে হ্রাস পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Wurtscheid
সীমান্তে পরীক্ষা
ইটালি ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে৷ সোমবার পর্যন্ত সেখানে ১১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ যার প্রেক্ষিতে জার্মান সীমান্ত দিয়ে আসা গাড়ির যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করেছে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
9 ছবি1 | 9
গির্জার প্রার্থনাও এসব বাধানিষেধের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন ম্যার্কেল৷
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এসব সিদ্ধান্ত জানান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ ঐ আলোচনায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক না করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে৷
তবে নার্সিং হোম ও অক্ষম মানুষরা যেখানে থাকেন সেখানে মাস্কের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য় সরকারগুলো কাজ করছে বলে জানান ম্যার্কেল৷
জার্মানির প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ায় সুপারমার্কেটে যাওয়ার সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷
এছাড়া জার্মানির ইয়েনা শহর কর্তৃপক্ষ আগামী ৬ এপ্রিল থেকে প্রকাশ্যে ও সুপারমার্কেটে যাওয়ার সময় মাস্ক কিংবা মাস্ক হিসেবে শাল ও স্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক করেছে৷
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আগামী ১৪ এপ্রিল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ম্যার্কেল৷
জার্মানির সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের হিসেবে দেশটিতে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৫২২ জন৷ একদিনে সেই সংখ্যা বেড়েছে ছয় হাজার ১৫৬ জন৷
এছাড়া এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৮৭২ জন৷ আগের দিনের চেয়ে সংখ্যাটি ১৪০ জন বেশি৷
জেডএইচ/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
২০১৮ সালের ছবিঘর দেখুন...
আঙ্গেলা ম্যার্কেল: এক বিজয়ীর নাম
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুকৌশলে কাবু করা বা হটিয়ে দেয়ার কাজটি খুব ভালো পারতেন তিনি৷ প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা তো আছেই, নিজ দলেরও প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করতেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
কোলকেই পেছনে ফেলে
সিডিইউ নেতা সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল হাতে ধরে ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় পদ দেন, ম্যার্কেলের উত্থানে ভুমিকা রাখেন৷ ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর দলের তহবিল নিয়ে একটি ঘটনা দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তখন ম্যার্কেল সাহস করে বলেন যে, কোলকে ছাড়াই সিডিইউ’র এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ দল ম্যার্কেলের পক্ষেই দাঁড়ায়৷ কোলকে ছাড়াই এগিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
হটে গেলেন গ্যুন্টার হ্যারমান ও্যটিঙার
রাজনীতিতে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া মানে কিন্তু সবসময় জোর খাটানো নয়৷ যেমনটি তিনি করেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সিডিইউ নেতা গুন্টার ওয়েটিঙ্গারের সঙ্গে৷ দলে তাঁর এই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০১০ সালেই তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনে বড় চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন, যদিও ইউরোপের রাজনীতিতে ওয়েটিঙ্গারের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
হারিয়ে গেলেন রোল্যান্ড কখ
দালাই লামার সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য কখ অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও চালিয়েছেন প্রচারণা৷ হেসে রাজ্যে দলের ম্যার্কেলবিরোধী অংশের একজন বলেই তাঁকে গণ্য করা হতো৷ কখ এ-ও ভেবেছিলেন যে, বার্লিন থেকে চাকরির জন্য তাঁকে ডাকা হবে৷ তাঁর কোনো ভাবনাই হালে পানি পায়নি৷ বরং নিজেই মিলিয়ে গিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ – দুর্ভাগা প্রেসিডেন্ট
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ৷ জনপ্রিয়তার কারণে ২০০৫ সালের নির্বাচনে সিডিইউ থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন৷ কিন্তু পরে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমর্থন দেন৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন এলে তিনি ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ হর্স্ট ক্যোলারের হঠাৎ পদত্যাগের পর তিনি নির্বাচিত হন৷ অবশ্য পরে দুর্নীতির দায়ে সেই চাকরিও হারাতে হয়৷ মামলাও খেতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস – ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয়
সাবেক ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদ সদস্য ফ্রিডরিশ ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কিন্তু সিডিইউ নেতা ম্যার্কেল তাঁকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হন, যা তিন বছর পর চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়তে তাঁকে সহায়তা করে৷