1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহামারি মোকাবেলায় ধর্মীয় গোষ্ঠীও ভূমিকা রাখতে পারে

২৩ অক্টোবর ২০২০

ডয়চে ভেলে ও আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘করোনা মোকাবেলায় ধর্ম' শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবেলায় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও ভূমিকা রাখতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতেও আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব৷

DW Talkshow mit Article 19
ছবি: DW/Article 19

ডয়চে ভেলে বাংলার প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক একেএম শামসুজ্জামান, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আজিজুন নাহার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খান ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ৷

আলোচকরা বলেন, বক্তৃতা ও বার্তা দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে করোনার মতো মহামারি মোকাবেলায় ধর্মীয় নেতারা ভূমিকা রাখতে পারেন৷

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক একেএম শামসুজ্জামানছবি: DW/Article 19

‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে পারে, সিটি কর্পোরেশন বাজার বন্ধ করে দিতে পারে, কিন্তু মসজিদ বন্ধ করার অধিকার তো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নেই,'' বলেন মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খান৷ ‘‘এই জায়গাটাতে আমরা কাজ করেছি, নৈতিক শিক্ষা ও উৎসাহ দিয়ে এবং সচেতনার মাধ্যমে৷''

বাংলাদেশে করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ৷ সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় চার লাখ মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত প্রথম বিশটি দেশের একটি বাংলাদেশ৷ করোনার কারণে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মতো ধর্মীয় আচার আচরণেও পরিবর্তন আনতে হয়েছে৷ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে কোনো বড় জমায়েত হয়নি৷

ধর্মীয় পোস্টার ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা

করোনার শুরুতে মানুষ আতঙ্কিত ছিলেন, দ্বিধান্বিত ছিলেন৷ তাই তখন স্বাস্থ্যবিধির সঠিক প্রয়োগ ঠিকভাবে করা যায়নি বলে মন্তব্য করেন একেএম শামসুজ্জামান৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্চের ৮ তারিখ যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, তখন বা তার এক দুই সপ্তাহ পর যখন প্রথম রোগী মারা যান, তা কিন্তু সবাইকে স্পর্শ করেছে৷'' সবাই  যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আজিজুন নাহারছবি: DW/Article 19

‘‘শুরুতে গ্রামের মানুষ ভয় পেয়ে আরো বেশি মসজিদে আসা শুরু করে দিয়েছিলেন,'' বলেন মুফতি ওয়ালীয়ুর৷ ‘‘চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা সফল হয়েছি প্রথমত কোরআনের আয়াত দিয়ে৷ সফল হয়েছি রাসুল (সা.) হাদিস দিয়ে৷ সফল হয়েছি পরবর্তীতে মহামারির সময় সাহাবা একরামদের যে ভূমিকা বা নির্দেশনা দিয়ে৷'' 

মহামারির সময় কেমন আচরণ করতে হবে, সে সংক্রান্ত ইসলামের নবির নির্দেশনা সম্বলিত একটি পোস্টার দেখিয়ে তিনি বলেন, করোনার সময় কয়েকজন ইসলামিক বক্তা ভুল বার্তা ছড়াচ্ছিলেন৷ যখন এই বার্তা তাদের সামনে তুলে ধরা হয়, তখন তারা চুপ হয়ে যান৷ এসব বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় বলে জানান তিনি৷

‘‘সারাদেশে তিন লাখের মতো মসজিদকে ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে৷ এক ঘণ্টার মধ্যে সব মসজিদে আমরা এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারি,'' বলেন মুফতি ওয়ালীয়ুর৷ বার্তা পাঠানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় বলে জানান তিনি৷ 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খানছবি: DW/Article 19

নানা মতের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে করোনা মোকাবেলায় একটি কমিটিও করা হয়েছে বলে জানান ওয়ালীয়ুর৷

সামনে থেকে লড়েছেন নারীরা

করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সবাই যখন ভীত ও আতঙ্কিত, তখন নারীরা সামনে থেকে কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন আজিজুন নাহার৷ বিশেষ করে চিকিৎসা খাতে নারীদের অবদান উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন তিনি৷

‘‘করোনার সময় আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ৭০ ভাগ নারী সরাসরি কাজ করেছেন৷ এই রকম একটা ক্রান্তিকালে যখন সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে, ঘর থেকে বের হচ্ছে না, সেই সময় এই নারীরা সামনে থেকে এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন,'' বলেন আজিজুন৷ তিনি ইসলামের ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন যে, বহু আগে থেকেই যুদ্ধের সময় চিকিৎসা খাতে মুসলিম নারীদের অবদান রাখার উদাহারণ আছে৷

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথছবি: DW/Article 19

‘‘আমাদের নারীরা করোনার সময় যে ভূমিকা পালন করেছেন, এ রকম উদাহরণ ১৪০০ বছর আগেও ছিল,'' বলেন তিনি৷

করোনার সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘরের বাইরে কাটাতে হয়েছে৷ হাসপাতালে ও হোটেলে থেকেছেন তারা৷ এ সময় পরিবার ও সমাজ থেকে তেমন কোনো বাধা আসেনি বলে মনে করেন বক্তারা৷

‘‘নার্সিং পেশায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অনেক আছেন৷ আমি বলবো না, তাদের ধর্মের কথা বলে আটকানো হয়েছে,'' বলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ৷

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে যে মাত্রায় রক্ষণশীল বলে মনে করা হয়, ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজালে আছে বলে মনে করা হয়, সেটি যদি আপনি বিবেচনায় আনেন, তাহলে নারীরা আমি বলবো বিপ্লব করে ফেলেছে৷''

আরো বেশি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে

অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের এহসান পরিবারের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়৷ শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের শরীরে যখন হাত পর্যন্ত দেননি অনেকে, তখন তারা একশ'রও বেশি লাশ দাফন করেন৷ এমনকি ভিন্ন ধর্মের মানুষেরও লাশ সৎকারে সহযোগিতা করেন৷ আলোচকরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের এমন সব উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং কিছু কিছু উদ্যোগকে ধর্মের নামে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টার সমালোচনা করেন৷

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনছবি: DW/Article 19

‘‘ধর্মীয় ব্যাপারে কখনো কখনো বিতর্ক আসে,'' বলেন কাজল দেবনাথ৷ ‘‘তবে বিতর্কটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি৷ শুভশক্তির জয় হয়েছে, অশুভ শক্তি বা প্রপাগাণ্ডা সেগুলো ম্যানেজ করে উৎরে যেতে পেরেছি৷''

আজিজুন নাহার বলেন, কোনো কোনো উদ্যোগকে কেউ কেউ সমালোচিত করার চেষ্টা করলেও এরা সমর্থনও পেয়েছেন অনেক৷

‘‘মানবতার প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার জায়গা থেকে এরা এগিয়ে এসেছেন৷ শেষ পর্যন্ত ভালো উদ্যোগের সমর্থন কিন্তু সমাজ থেকেই চলে আসে,'' বলেন তিনি৷

করোনা মোকাবেলায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আরো মানুষকে এক ছাতার নীচে আনা এবং নৈতিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে আরো কার্যকরীভাবে এমন মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মত দেন বক্তারা৷

অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় এবং ডয়চে ভেলে বাংলার ফেসবুক পাতায় প্রচারিত হয়৷ ডয়চে ভেলে ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটির অর্থায়ন করে জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তর৷

পুরো ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ