জাপানি গবেষকরা এমন কিছু অতি ক্ষুদ্র রোবট পরীক্ষায় সক্ষম হয়েছেন যেগুলো সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করে ক্যানসার সেলের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম৷
বিজ্ঞাপন
এসব রোবট তারা ভবিষ্যতের কোনো প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে চান৷
পরবর্তী মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভবত সিনথেটিক পলিমার, প্রোটিন, জিনগত ও জৈব উপাদানে তৈরি অতি ক্ষুদ্র রোবট ব্যবহার করা হবে৷ সেগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে সম্ভাব্য ক্ষতিকর ভাইরাস পার্টিকেল ধ্বংসের পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়তে ইমিউন সেলকে প্রশিক্ষণও দিতে পারবে৷
এ রকম চিকিৎসা অনেকের কাছে কোনো সাইফাই মুভির কাহিনি মনে হতে পারে৷ তবে বিষয়টি এখন বাস্তবে প্রয়োগেরও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ অন্তত কাজুনরি কাটাওকা তা-ই মনে করেন৷
জাপানের ইনোভেশন সেন্টার অব ন্যানো মেডিসিন (আইসিওএনএম)-এর এই গবেষক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ‘ইন-বডি হসপিটাল’-এর ধারণা নিয়ে গত নয় বছর ধরে কাজ করছি৷ একটি ন্যানো মেশিনের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে চিকিৎসা কর্মকাণ্ড পরিচালনা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য৷
যেখানে করোনা, সেখানেই রোবট আর ড্রোন
জানালায় এসে কথা বলছে ড্রোন। পুলিশের নির্দেশে উড়ে যাচ্ছে যেখানে দরকার। রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, সুপার মার্কেটসহ অনেক জায়গায় করোনা ভাইরাসকে রুখতে রোবটও কাজ করে চলেছে বিরামহীনভাবে। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/China Daily
ড্রোন বলছে, সাবধান!
মালয়েশিয়ার পুলিশ করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার কথা বলতে পাঠিয়েছে তাকে। রাজধানী কুয়ালালামপুরের এই ঘরটির সামনে এসে সে কথাই বলছে ড্রোন। মন দিয়ে ড্রোনের কথা শুনছেন এক গৃহিণী।
ছবি: Reuters/Lim Huey Teng
শিক্ষার্থীর বেশে রোবট
করোনা ভইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। জাপানের রাজধানী টোকিওর এক অনুষ্ঠানে তাই সদ্য স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীরা আসতে পারেননি। তাদের জায়গায় গাউন পরে দাঁড়িয়েছে রোবট।
ছবি: Reuters/BBT UNIVERSITY
রোবট যখন ফটোগ্রাফার
ইটালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ছবি তুলে বেড়াচ্ছে রোবট। রোগীদের চিকিৎসায় খুব কাজে লাগছে সেই ছবি। কম্পিউটারের স্ক্রিনে রোবটের তোলা ছবি দেখছেন এক স্বাস্থকর্মী।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
সচেতন রোবট
করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে একজন সচেতন মানুষের যা যা করা উচিত, সবাই মিলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়া উচিত, সুপার মার্কেটে সেই কথাগুলো বলছে মানুষের আদলে গড়া এক রোবট। জার্মানির লিন্ডিয়ার শহরের এক সুপার মার্কেট থেকে তোলা ছবি।
ছবি: Reuters/W. Rattay
সংবাদ সম্মেলনে রোবট
বেজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে সাংবাদিকদের দেখানো হচ্ছে হাসপাতলে রোবট কিভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়তা করে। 'নকল মানুষ' সামনে রেখে রোবটই তা দেখাচ্ছে।
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
শহর জীবাণুমুক্ত করছে ড্রোন
চিলির তালকাহুয়ানা শহরে জীবাণুনাশক ছিটাতে আর মানুষের দরকার হয় না। লকডাউন মেনে মানুষ থাকছে ঘরে আর শহরময় উড়ে উড়ে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/J. Luis Saavedra
খাবার পরিবেশনে
চীনের সাংহাই শহরের এক রেস্তোরাঁয় চাহিদামতো খাবার পরিবেশন করছে রোবট।
ছবি: Reuters/Aly Song
সিঁড়ি বেয়ে ওঠে স্প্রেয়ার!
চীনের লুসিয়াং হেনান প্রদেশের এক ভবনে জীবাণুনাশক ছিটাতে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে এগিয়ে চলেছে স্প্রেয়ার।
ছবি: Reuters/China Daily
রংমিস্ত্রি রোবট
করোনা ভাইরাসের কারণে ফ্রান্সও এখন বিপর্যস্ত। সব মানুষকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। অনেক কাজেই নামতে হয়েছে রোবটকে। করোনায় মৃতদের জন্য বানাতে হচ্ছে নতুন নতুন কফিন। কফিনে রং করছে এক রোবট।
ছবি: Reuters/G. Fuentes
মাস্ক লাগবে?
ভারতের কোচি শহরে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে রোবট। ট্রে-তে আছে মাছ আর স্যানিটাইজার। যার দরকার নিয়ে নিন!
ছবি: Reuters/Sivaram V
বিকল্প স্বাস্থ্যকর্মী
ইতালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসায় সহায়তা করছে রোবট।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
পরম বন্ধু
করোনা-সংকটে সবচেয়ে বিপদে আছেন প্রবীণরা। রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, একাকিত্বের যন্ত্রণাও তাদের জন্য বেশি অসহনীয়। বেলজিয়ামে এমন মানুষদের জন্য ঘরে ঘরে বিনামূল্যে রোবট পাঠাচ্ছে একটি কোম্পানি। রোবটগুলোর কাজই হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলানো।
ছবি: Reuters/Y. Herman
পুলিশ এবং ড্রোন
ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশের পেকানবাউ শহরে
জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজও করতে হচ্ছে পুলিশকে। অবশ্য পুলিশ কাজটা নিজে করছে না। রিমোট হাতে নিয়ে শুধু নির্দেশ দিচ্ছে আর সেই নির্দেশ মেনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/R. Muharrman
'বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক'
বেজিংয়ের করোনায় সংক্রমিত রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতো নানা উপদেশ দেবে এই রোবট। কিভাবে, কোন ইশারায় কী বোঝাতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছেন ফাইভ জি প্রযুক্তির রোবটটি তৈরি করা কোম্পানির কর্মীরা।
ছবি: Reuters/China Daily
14 ছবি1 | 14
‘‘অসংখ্য স্বনির্ভর যন্ত্র শরীরের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হবে, যেগুলো অস্বাভাবিক কিছু আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবে এবং রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসা করবে,’’ বলেন তিনি৷
জাপানে চিকিৎসা খাতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণা এতকাল ক্যানসারকেন্দ্রিক ছিল৷ দেশটিতে ১৯৮১ সাল থেকে এখন অবধি মৃত্যুর অন্যতম কারণ ক্যানসার৷ পঞ্চাশ বা তার চেয়ে বেশি বয়সি জাপানিরা সাধারণত ক্যানসারে আক্রান্ত হন৷
কাটাওকা বলেন, ‘‘ন্যানোস্কেল মাইসেলস এত ছোট যে সেগুলো সহজেই ক্যানসার সেলে প্রবেশ করতে পারে এবং বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই প্রযুক্তির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে৷’’
করোনা মহামারির কারণে গবেষকরা এখন এসব অতি ক্ষুদ্র রোবট ভবিষ্যতে নতুন কোনো প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায় কিনা সেই গবেষণা করছেন৷ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর সাতোসি উচিডা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ম্যাক্রোমলিকুলার ড্রাগস এবং বায়োলজিক্যাল কম্পাউন্ড, যা প্রোটিন এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সেগুলো করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে অপেক্ষাকৃত ভালো প্লাটফর্ম গড়তে পারে৷ আমাদের ন্যানোমেশিনগুলো প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিড শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গে পৌঁছে দিতে পারবে৷’’
যেহেতু প্রোটিন এবং নিউক্লিওটাইড সরবরাহের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, সেগুলো ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় নিয়ে গবেষণা বছরখানেকের মধ্যেই শুরু হবে বলে মনে করেন উচিডা৷
জুলিয়ান রয়েল/এআই
থ্রিডি প্রিন্টারে করোনা প্রতিরোধের সরঞ্জাম
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে বিশ্বজুড়ে প্রয়োজনীয় মাস্ক ও সুরক্ষার সরঞ্জামের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে উঠছে৷ জার্মানির এক ব্যক্তি থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে এমন সরঞ্জাম তৈরি করছেন৷
ছবি: Dirk Thelen
ব্যাটম্যানের বদলে মাস্ক
জার্মানির যে এলাকা করোনা সংক্রমণের কারণে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে, সেই হাইন্সব্যার্গের কাছেই থাকেন ডিয়র্ক টেলেন৷ থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে ব্যাটম্যানের মতো কমিক চরিত্রের আবক্ষ মূর্তি তৈরি করা তাঁর শখ৷ সংকটের সময় সেই শখই হয়ে উঠেছে মুশকিল আসান৷
ছবি: Dirk Thelen
সংক্রমণ এড়াতে ফেস শিল্ড
ডিয়র্ক টেলেনের পাঁচটি থ্রিডি প্রিন্টার ও ২টি লেজার যন্ত্র দিনরাত কাজ করে চলেছে৷ বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীদের জন্য তিনি ফেস শিল্ড তৈরি করে চলেছেন৷ দিনে একশো মাস্ক তৈরি হচ্ছে৷ স্ত্রী বারবারা নিজে বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী৷ তিনিই স্বামীকে এই আইডিয়া দিয়েছিলেন৷ করোনা সংকটের ফলে কাজ হারিয়ে ডিয়র্ক আপাতত নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন৷ বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী ও বাসিন্দারা ধন্য ধন্য করছেন৷
ছবি: Dirk Thelen
ওয়ার্কশপে চরম ব্যস্ততা
ডিয়র্ক টেলেনের কাজের ঘরে চরম ব্যস্ততার পরিবেশ৷ চার সপ্তাহে প্রায় ৭০০ ফেস শিল্ড তৈরি করেছেন তিনি৷ ২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় একটি ফেস শিল্ড তৈরি করতে গড়ে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় লাগে৷ প্রথম মাস্কটি তৈরি করে স্ত্রীর সঙ্গে পরীক্ষা করে সেটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন তিনি৷
ছবি: Dirk Thelen
ফেস শিল্ডের চাহিদা বাড়ছে
দেখতে অনেকটা ওয়েল্ডিং-এর সুরক্ষা মাস্কের মতো হলেও ফেস শিল্ডের মাধ্যমে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব৷ সরাসরি ত্বকের উপর চাপ না থাকায় অস্বস্তিও হয় কম৷ তবে কিছুটা ফাঁক থেকে যাওয়ায় সব ক্ষেত্রে এর ব্যবহার চলে না৷ গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক কোম্পানি কর্মীদের সুরক্ষার জন্য ডিয়র্কের কাছে এমন সরঞ্জামের অর্ডার দিয়েছে৷ এমন আরও অর্ডার আসছে৷
ছবি: Dirk Thelen
পারিশ্রমিক না চাইলেও খরচ কম নয়
এই কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না৷ শুধু উপকরণের খরচ উঠে এলেই তিনি সন্তুষ্ট৷ বিদ্যুতের বিল নিয়ে তাঁর অবশ্য কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ পাঁচটি থ্রিডি প্রিন্টার সবসময়ে চালু থাকলে মোটা অঙ্কের মাসুল গুনতে হয় বৈকি৷ বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে চিঠি লিখে তিনি ভালো কাজের জন্য কিছুটা ছাড়ের আবেদন করেছেন৷
ছবি: DW/M. Jordanova-Duda
সংক্রমণ এড়াতে সরঞ্জামের গুরুত্ব
হাঁচিকাশি, নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ তাই ভালো করে হাতধোয়ার পাশাপাশি মুখ ঢাকার নানা সরঞ্জামও কার্যকর হতে পারে৷ তবে এমন মাস্ক জীবাণুমুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও জরুরি৷ ডিয়র্ক টেলেনের স্ত্রী জানিয়েছেন, ফেস শিল্ড পরলে বৃদ্ধাশ্রমে ডিমেন্সিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের রোগীদের চিনতে অসুবিধা হয় না৷ মাস্কে মুখ ঢাকা থাকলে এমন মানুষ বিহ্বল হয়ে ওঠেন৷