1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাসমাবেশ বনাম শান্তি সমাবেশ: শনিবারের আগেই আতঙ্ক

২৬ অক্টোবর ২০২৩

বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে নেতাদের কথা আর পুলিশি তৎপরতায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেশি৷ আর আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মাঠে নেমে গেছে৷

বিএনপির সমাবেশ (ফাইল ফটো)
বিএনপির সমাবেশ (ফাইল ফটো)ছবি: Mortaza Rashed/DW

যদিও সমাবেশ আরো একদিন পর শনিবার৷ বিএনপির  তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী সমাবেশে অংশ নিতে এরই মধ্যে ঢাকা চলে এসেছেন৷

এখন সংকট চলছে বিএনপির সমাবেশের জায়গা নিয়ে৷ বিএনপি নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশের সব প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ কিন্তু পুলিশ তাদের সেখানে সমাবেশ করতে দিতে চায় না৷ বিকল্প জায়গার প্রস্তাব চেয়ে পুলিশ বিএনপিকে চিঠি দিয়েছে৷ কিন্তু বিএনপি জবাবে নয়া পল্টনেই সমাবেশ করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে৷  পুলিশ আওয়ামী লীগকেও চিঠি দিয়েছে বিকল্প জায়গা জানতে৷ তারা এখনো জবাব দেয়নি৷ আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করতে চায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে৷ জানা গেছে, বিএনপির অবস্থান বুঝে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে৷

আশঙ্কা করা হচ্ছে সমাবেশের আগে মূল জটিলতা হবে বিএনপির নয়া পল্টন নিয়ে৷ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এবার গত ডিসেম্বরের মতো ছাড় দেবে না৷ তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড়৷ বড় জোর শেষ পর্যন্ত তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে পারেন৷ শহরের আশপাশ যেমন, গোলাপবাগ মাঠ- এধরনের জায়গায় তারা সমাবেশ করবে না৷ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তারা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এমনও হতে পারে তারা শেষ পর্যন্ত কোনো দলকেই সমাবেশের অনুমতি নাও দিতে পারেন তারা৷

পুলিশ  ঢাকায় বিএbপি নেতা কর্মীদের  বিরুদ্ধে আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে৷ বুধবার রাতে তারা বিএনপির ২৭ জনকে আটক করেছে৷ গত এক সপ্তাহে পুলিশ সারাদেশ থেকে বিএনপির তিন হাজার ৬২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ৷ মামলা করা হয়েছে  ৪০০৷ ঢাকায় বিএনপির একাধিক নেতার বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ৷

এদিকে মহাসড়ক এবং ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে৷ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অংশে বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের তল্লাশি অভিযান শুরু হয়৷ বিকেলের দিকে পোস্তোগোলা এলাকায়  র‌্যাব অভিযান চালায় বলে জানা গেছে৷ তাদের এই তল্লাশি অভিযান সমাবেশের দিন পর্যন্ত চলবে৷ র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক  কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, "সমাবেশের সময় যাতে  নাশকতার জন্য কেউ কোনো অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহন করতে না পারে সেজন্য ২৮ অক্টোবর ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসাবে র‌্যাব৷”

‘ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে’

This browser does not support the audio element.

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের  যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান,"আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য দুই দলকেই তাদের সমাবেশের জায়গা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছি৷ তবে বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে৷ তারা বলেছে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ স্বেচ্ছসেবক থাকবে, তারা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করবে৷ আওয়ামী লীগ এখনো কিছু জানায়নি৷ দুই দলের সঙ্গেই আমাদের আলাপ আলোচনা চলছে৷ আমরা তো কারুর শত্রু না৷ আমরা একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে চাই৷ তবে এখন পর্যন্ত কোনো দলকেই আমরা সমাবেশের অনুমতি দেইনি৷”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," আমরা ফুল প্রুফ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি৷ শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা সৃষ্টি হতে দেব না৷”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযানের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন,"আমরা রাজনৈতিক কারণে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করছি না৷”

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, "আমরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করব৷ এর আগেও আমরা এখানে সমাবেশ করেছি৷ কখনোই শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি৷ শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সমাবেশ হয়েছে৷ এবারো হবে৷”

তিনি বলেন,"ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে৷ জেলা উপজেলায় নেতা-কর্মীরা বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না৷ তাই তারা আগেই ঢাকা চলে এসেছেন৷ এখন পুলিশের ভয়ে ঢাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায়ও থাকতে পারছেন না ৷ তবে এইসব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আমরা সফল সমাবেশ করব৷”

তৃণমূলে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে ২৮ সেপ্টেম্বর সমাবেশে অংশ নেয়ার নির্দেশনাই আছে৷ এরপর কী কর্মসূচি হতে পারে তা জানানো হয়নি৷ নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল এবং জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের কথা রয়েছে৷ বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না৷ তারা চায় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় আছে৷

বিএনপির মহাসমাবেশকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ তারা মনে করে সমাবেশের পরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিতে পারে৷ টানা কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে৷ এজন্য তারা আগেই মাঠ দখলে রাখার কাজ শুরু করেছে৷  বৃহস্পতিবার বিকেলে দলটি ঢাকার  বিভিন্ন ওয়ার্ডে শান্তি সমাবেশ করেছে৷ তাদের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠেই থাকতে বলা হয়েছে৷ শুক্রবার থেকে ঢাকার  গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নেয়ার কথা রয়েছে৷ তারা সমাবেশের দিন পর্যন্ত এই অবস্থান ধরে রাখবেন৷ আর বায়তুল মোকররম দক্ষিণ গেটের সমাবেশেও ব্যাপক নেতা-কর্মীর সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, কোনো কারণে পুলিশ কোনো দলকেই ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে অবস্থান নিতে না পারে তার প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছেন৷ তাদের পরিকল্পনা হলো যেকোনো উপায়ে ঢাকা শহর তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা৷

‘আমরা কোনোভাবেই অশান্তি সৃষ্টি করতে দেবো না’

This browser does not support the audio element.

এদিকে ঢাকার ওয়ার্ডগুলোতে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও কাজ করছেন৷ তারা পুলিশকে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছেন৷  এলাকায় নতুন এবং অপরিচিত মুখ দেখলে পুলিশকে খবর দিচ্ছেন৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, "আজ ( বৃহস্পতিবার) থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে গেছেন৷ ২৮ তারিখ  শান্তি সমাবেশ করে তারা ঘরে ফিরবেন৷ আমরা কোনোভাবেই অশান্তি সৃষ্টি করতে দেব না৷ বিএনপি বলেছে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে৷ তাহলে তো ভালো৷ কিন্তু তারা যদি নাশকতা করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিরোধ করব৷”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "পুলিশ  শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য আমাদের শান্তি সমাবেশের জায়গা পরিবর্তনের অনুরোধ করেছে৷ আমরা সেটা বিবেচনা করব৷ তবে বিএনপি যদি নয়াপল্টনে সমাবেশ করে তাহলে আমরা বায়তুল  মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটেই শান্তি সমাবেশ করব৷”

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরাও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করবে৷ জামায়াতে ইসলামী মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিলেও পুলিশ তাদের কোনো সমাবেশেরই অনুমতি দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে৷

সবমিলিয়ে ঢাকায় মানুষের মধ্যে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ বৃহস্পতিবার ঢাকায় যানবাহন চলাচল ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম৷ রাস্তায় মানুষজন কম দেখা গেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ