ঘূর্ণিঝড় মহাসেন চরম আতঙ্ক ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বাংলাদেশ৷ বেশ দুর্বল হয়েই মহাসেন বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে৷ তবে এতেও উপকূলীয় জেলাগুলোতে অন্তত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
পূর্বাভাস ছিল মহাসেন আঘাত হানবে কক্সবাজারে৷ কিন্তু ঘটলো উল্টো ঘটনা৷ বৃহস্পতিবার ভোর ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে বরগুনার খেপুপাড়ার মেঘনা মোহনা থেকে৷ তখন ঝড়ের গতিবেগও ছিল ঘণ্টায় ১০০ কি.মি.৷ সেই আঘাতে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও পিরোজপুরের মতো উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ভোলার চরফ্যাশান উপজেলার মোজাম্মেল হোসেন জানান যে, তাঁরা আতঙ্কে সারা রাত ঘুমাননি৷ তার ওপর সকালে শুরু হয় প্রবল বাতাস এবং বৃষ্টি৷ তিনি জানান, তাঁদের এলাকার গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ি ঝড়ের তাণ্ডবে টিকতে পারেনি৷ ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও৷
আতঙ্ক ছড়ালেও দুর্বল ছিল মহাসেন
মহাসেন নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয় গোটা বাংলাদেশে৷ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক৷ তবে স্থলভাগে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুর্বল হয়ে যায় মহাসেন৷ তাসত্ত্বেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন এলাকায়৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
মহাসেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তৈরি হয় ব্যাপক আতঙ্ক৷ তবে স্থলভাগে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুর্বল হয়ে গেছে মহাসেন৷ তা সত্ত্বেও বার্তা সংস্থা এপির হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৪৫ ব্যক্তি৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন অনেকে
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কবল থেকে রক্ষা পেতে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন৷ বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ঝড় আঘাত হানার আগে দশ লক্ষের বেশি মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়ে সরে যায়৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, সরকারি ভবন
মহাসেন থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল এমনকি সরকারি ভবনে৷ কক্সবাজার অঞ্চলে অনেকে হোটেলেও উঠেছেন৷ আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ কেউ আবার সঙ্গে গৃহস্থালীর জিনিসপত্র, এমনকি গবাদি পশু নিয়ে এসেছে৷
ছবি: Reuters
বৃহস্পতিবার ভোরে আঘাত
বৃহস্পতিবার ভোরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী অঞ্চল খেপুপাড়ায় প্রথম আঘাত হানে মহাসেন৷ সেসময় এটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার৷ এরপর সেটি উপকূল ধরে চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে যায় এবং কক্সবাজারে আঘাত হানে৷ সামগ্রিকভাবে মহাসেন উপকূলে পৌঁছে দুর্বল হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP
প্রস্তুত নৌ ও বিমান বাহিনী
মহাসেনকে ঘিরে ব্যাপক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার৷ ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালাতে নৌবাহিনীর ২২টি জাহাজ ও বিমানবাহিনীর ১৯টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: ChinaFotoPress via Getty Images
প্রস্তুত মেডিক্যাল টিম
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক জানান, উপকূলবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১,৩২৭টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ বাতিল করা হয়েছে চিকিত্সকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি৷ প্রস্তুত আছেন রেড ক্রিসেন্টের ৪২,৬৭৫ জন প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মীও৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
ঘূর্ণিঝড় নতুন নয়
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশে নতুন নয়৷ এর আগে ১৯৯১ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় ১৩৯,০০০ মানুষ৷ সেসময় কয়েক কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে৷ ২০০৮ সালে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা ১৩০,০০০৷ তবে মহাসেন তীব্রতার বিচারে নার্গিসের সঙ্গে তুলনীয় নয়৷ ‘ক্যাটেগরি ১’ মাত্রার সাধারণ ঘূর্ণিঝড় এটি৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
ভারতে সতর্কতা
বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের মতো পরিস্থিতি না হলেও ভারতের কিছু অঞ্চলের জেলেদেরকে অন্তত ৩৬ ঘণ্টা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলেছে সেদেশের সরকার৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
মসজিদে আশ্রয়
মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন একটি মসজিদে৷ তাদের সাধারণ আবাসনগুলো বেশ দুর্বল৷ মিয়ানমার সরকারের বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা এমনিতেই দুর্বল৷ এরকম ঘূর্ণিঝড় তাদের আরো বেশি অসহায় করে দেয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
জাতিসংঘের উদ্বেগ
জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে৷ বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গীন হয়ে পড়তে পারে৷ তাই ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে উপদ্রুত অঞ্চলে দ্রুত উদ্ধার এবং ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনা জরুরি৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
এছাড়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সোহেল আহমেদ জানান যে, পানির তোড়েও অনেক ঘড়বাড়ি ভেসে গেছে৷ কোনো কোনো এলাকা ভেরি বাঁধ ভেঙে পানির নীচে তলিয়ে গেছে৷ আর মোবাইল ফোনের টাওয়ার এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায়, অনেক এলাকা যোগাযোগ ও বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে৷
পটুয়াখালীর সাংবাদিক জাহিদ হোসেন পিন্স জানান, পটুয়াখালী, ভোলা এবং বরগুনায় ১১ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ তাঁরা ঘর ও গাছ চাপা পড়ে মারা যান৷ তিনি জানান, এই জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়৷
এদিকে সবচেয়ে আতঙ্কের জনপদ কক্সবাজার বলতে গেলে নিরপদই আছে৷ দুপুরের দিকে দুর্বল মহাসেন নোয়াখালি হয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অতিক্রম করে৷ কক্সবাজারে দুপুরের পর দেখা যায় ঝলমলে রোদ৷ তবে ওইসব এলাকায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে৷
ওদিকে রাজধানী ঢাকায় রাত থেকেই প্রবল বৃষ্টিতে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে৷ শুধু নিম্নাঞ্চল নয়, রাজধানীর প্রধান সড়কও পানির নীচে চলে যায়৷ স্বাভাবিকভাবেই এত নগরবাসীকে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়৷
বিকেলে দুর্বল মহাসেন বাংলাদেশ অতিক্রম করে মিয়ানমারে চলে যায়৷ দেশের সমুদ্র, নৌ ও বিমানবন্দর আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে৷ নামিয়ে ফেলা হয়েছে বিপদ সংকেত৷
মহাসেনের গতিপথ নিয়ে ঢাকার আবহাওয়া দপ্তর যে ভুল তথ্য দিয়েছিল, তা এখন আর তারা স্বীকার করতে চাইছে না৷ ঢাকা অফিসের আবহাওয়াবিদ এবং পরিচালক মো. শাহ আলম ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন যে, তারা বলেছিলেন মহাসেনের গতিপথ হবে বরগুনা পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের দিকে৷ আর সেরকমটাই হয়েছে৷ সংবাদ মাধ্যম ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে কক্সবাজারে আঘাত করবে বলে জানিয়েছিল৷ তবে একুশে টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক আরিফ রেজা মাহমুদ বলেন, তারা আবহাওয়া দপ্তরের পাঠানো বুলেটিন অনুযায়ী খবর প্রচার করেছেন৷ শাহ আলম বলেন, প্রবল বৃষ্টির কারণে উপকূলে আঘাতের আগেই মহাসেনের তীব্রতা কমে দুর্বল হয়ে যায়৷ তাই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক কম৷