‘মহাসেন’-এর জন্য মহাপ্রস্তুতি
১৫ মে ২০১৩উপকূলে আঘাত হানার সময় ‘মহাসেন'-এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ১৩৪ কিলোমিটারে ওঠানামা করবে বলে খবর৷ তখন প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷ ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন'-এর আঘাতে জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার৷ উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোর ডিসিদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে এর মধ্যেই৷ আশেপাশের লোকজনকেও নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার জন্য সতর্ক রাখা হয়েছে৷ এছাড়া, উপকূলীয় ১২টি জেলায় ৫০ হাজারের মতো প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে৷
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, শ্রীলঙ্কার তৃতীয় শতকের রাজা মহাসেনের নামেই এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘মহাসেন'৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে৷ মঙ্গলবার সকাল থেকে তা উত্তর দিকে অগ্রসরমান৷ ঝড়ের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, এটি বুধবার দুপুরের পর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে৷ এখন ধীরে ধীরে এর গতি বাড়ছে৷ উপকূলের ৪/৫ শ' কিলোমিটার কাছাকাছি এসে এটি আরো তীব্র হতে পারে৷ এদিকে, কক্সবাজারসহ আশেপাশের এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে৷ আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মহাসেন দুর্বল হয়ে পড়বে৷ স্বাভাবিকভাবেই এতে ক্ষয়ক্ষতি কমবে৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বেতারসহ সব ধরনের প্রচারমাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে৷ ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ পূর্ববর্তী কাজ করে যাচ্ছেন৷ সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আশেপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ প্রয়োজন হলেই তাদের সরিয়ে নেয়া হবে৷ তবে সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী৷
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সাংবাদিক আবদুল গফুর টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, টেকনাফ উপকূলে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ রেডিও টেলিভিশনের খবরের দিকেই সবার মনোযোগ৷ পাশাপাশি টেলিফোনে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করছেন সবাই৷ টেকনাফে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে৷ ওদিকে, উপজেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে৷ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তাদের কি কি করণীয়, তা নিয়েও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান গফুর৷
সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রশাসকরা জানিয়েছেন, উপকূলের কাছাকাছি বসবাসকারী নাগরিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে থাকার উপযোগী করা হয়েছে৷ দুর্যোগকালে এবং পরবর্তী সহায়তার জন্য রেড ক্রিসেন্ট, বিভিন্ন এনজিও ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে৷ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হাসানুজ্জামান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের জাহাজগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ এছাড়া, তাদের অন্য সবকিছুও প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় ‘গিরি'ও ‘নীলম' তীব্রতা পেয়েও বাংলাদেশের উপকূলে আসেনি৷ দু'টি ঝড়ই মিয়ানমার ও ভারতের ওপর দিয়ে বয়ে যায়৷ তবে সর্বশেষ বাংলাদেশ উপকূলে ২০০৯ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর তীব্রভাবে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা'৷ এর আগে ‘রেশম' আঘাত হানে ২০০৮ সালের ২৫শে অক্টোবর, ‘নার্গিস' ২৭শে এপ্রিল এবং ‘সিডর' ২০০৭ সালের ১১ই নভেম্বর৷
আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, প্রতিবছর এই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা থাকে৷