1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাসড়কগুলো টোল আদায়ের উপযুক্ত নয়

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশের মহাসড়কগুলো টোল আদায়ের উপযুক্ত নয়৷ আর টোল আদায় করা হলে তা যাত্রীদের পকেট থেকেই দিতে হবে, যানজটের তীব্রতা বাড়বে, নষ্ট হবে সময়৷ পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এমনই মনে করছেন৷

Fabrikarbeiter Bekleidungsfabrik Bekleidung Bangladesch Protest
ছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi

মহসড়কে টোল বসিয়ে সরকার আর্থিকভাবে কতটা লাভবান হতে পারবে সেই প্রশ্নও তুলেছেন একজন৷

গত মঙ্গলবার অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাসড়কে টোল বসানোর প্রস্তাব দেন৷ বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘‘সেতুতে এখন আমরা টোল আদায় করি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেতুতে যেহেতু টোল নেওয়া হয়, এখন থেকে মহাসড়কেও টোল নিতে হবে৷ সরকার আপাতত ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে টোল নেওয়ার উপযোগী মনে করছে৷ টোল থেকে পাওয়া টাকা একটি একাউন্টে রেখে তা সড়কের সংস্কারে ব্যয় করা হবে৷''

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমাদের মহাসড়কগুলো তো টোল আদায়ের জন্য উপযুক্তই না। কারণ যেসব মহাসড়কে টোল তোলা হয় সেখানে যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। যেসব মহাসড়কে টোল তোলা হয় সেখানে পাশাপাশি দুই স্তরের রাস্তা থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মহাসড়কগুলোর সঙ্গে অসংখ্য সংযোগ সড়ক রয়েছে। এখন আপনি কত জায়গা থেকে টোল তুলবেন? যেমন ধরেন ঢাকা-মাওয়া সড়ক যেটা হচ্ছে, সেখানে টোল তোলা সম্ভব। এখানে একটি প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য বিকল্প একটি সড়কও আছে। সারা বিশ্বেই সরকার জনগণকে সড়কে কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে। কোন সড়কে টোল নেওয়া হলে, কেউ যদি টোল না দিয়ে যেতে চান তার জন্য বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সারা বিশ্বেই এটা আছে। আমেরিকাতে ২১ সড়কে টোল তোলা হয়, মালয়েশিয়ায় ৩৭ সড়কে টোল নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কেউ টোল না দিতে চাইলে তাদের জন্য বিকল্প সড়কও আছে। যারা উন্নত সড়কটি ব্যবহার করবেন, তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন এই কারণে টোলও দেবেন।''

শামছুল হক

This browser does not support the audio element.

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৬ জুন টোল নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের টোল  ৪০০ টাকা, জাতীয় মহাসড়কের ৩০০ টাকা, আঞ্চলিক ২০০ টাকা জেলা সড়ক ১০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বাংলাদেশ সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের ২০১৮ সালের হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ৩২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার ১২৯টি যানবাহন এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ২৩৫টি যানবাহন চলাচল করে।

মেঘনা ও গোমতি সেতুর টোল আদায় করে কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, দুই সেতুতে প্রতিদিন গড়ে ৩২ থেকে ৩৩ হাজার যানবাহন দুই দিক মিলিয়ে পার হয়। প্রতিদিন এই দুই সেতু থেকে ৯৫ থেকে ৯৭ লাখ টাকা টোল উঠে। এই সেতুতে ৬৫ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত টোল আছে। চট্টগ্রাম যেতে এই সেতু দু'টি পার হয়েই যেতে হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক খান ডয়চে ভেলেকে বলছেন, ‘‘এমনিতেই মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণে গাড়ি ঠিকমত চলতে পারে না৷ এর মধ্যে টোলঘর বসালে প্রতিবন্ধকতা আরো বাড়বে৷ যানজটের পরিমাণও বেড়ে যাবে৷ সরকার আর্থিকভাবে কিছু টাকা পেলেও গাড়ির তেল আর মানুষের সময়ের যে অপচয় হবে তা টোল থেকে পাওয়া অর্থের চেয়েও অনেক বেশি৷

পরিবহন মালিকেরাও বলছেন, তারা টোল দিতে রাজি। কিন্তু তার আগে রাস্তাগুলো টোল নেওয়ার মতো উন্নত করা হোক। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এখন যে সড়ক তাতে এমনি গাড়ি চলে না, তারপর টোলঘর বসানো হলে গাড়ির গতি আরো কমে যাবে। ঈদের সময় রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ থাকে। পাশাপাশি আর্থিকভাবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো। সরকার তো আমাদের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে সেই ভাড়াই নেই। অতিরিক্ত টোল দিতে হবে মালিকদের উপরই চাপ পড়বে।''

রমেশ চন্দ্র ঘোষ

This browser does not support the audio element.

তবে রমেশ চন্দ্র ঘোষের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন মোজাম্মেল হক খান। তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিবহন মালিকরা নেন না। তারা অরেক বেশি টাকা নেন। কারণ পথে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এখন টোলের টাকাও যাত্রীদের কাছ থেকে উঠানো হবে। এই টোলের ফলে যাত্রীদের অর্থ অপচয় হবে, সময় অপচয় হবে। ফলে যাত্রীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।'

টোল থেকে আদায় হওয়া টাকার কত অংশ সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে সেই প্রশ্ন তুলে মোজাম্মল হক বলেন, সরকার নিজেরা টাকা ওঠালে সেখানে দুর্নীতির কারণে নয়-ছয় হয়৷ আবার ইজারা দিলে খাতিরের লোকজনকে নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হয়৷ ফলে সরকারি কোষাগারে খুব বেশি টাকা জমা পড়ে না৷ অন্যদিকে টোল প্লাজা পার হতে যদি প্রতিটি গাড়ির পাঁচ মিনিট করেও সময় লাগে তাহলে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫ লাখ মিনিট সময় মানুষের জীবন থেকে চলে যাবে৷ এই এক লাখ গাড়িতে তো অনেক মানুষ চড়েবন৷ এর পাশাপাশি টোল আদায়ের সময় গাড়ির যে তেল পুড়বে সেসব বিবেচনায় নিলে কিন্তু আর্থিকভাবে খুব একটা লাভ হবে না৷''

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৫৯৫ কিলোমিটার৷ আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো জাতীয় মহাসড়ক থেকে জেলা শহর বা প্রধান নদীবন্দর ও স্থলবন্দরকে সংযুক্ত করে৷ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১০টি জোনের মহাসড়ক নেটওয়ার্কে আঞ্চলিক সড়ক আছে ১২৬টি৷ এই মহাসড়কের দৈর্ঘ্য চার হাজার ২৪৭ কিলোমিটার৷ আর জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার৷

 বাংলাদেশে দুটি মহাসড়কে বর্তমানে টোল ব্যবস্থা চালু আছে৷ সিরাজগঞ্জ-নাটোর সড়কের বনপাড়ায় এবং ঢাকা-সিলেট সড়কের আউশপাড়ায় টোল আদায় করা হয়৷ এই দুটি টোল প্লাজায় প্রতিটি গাড়ি থেকে গড়ে ৫০ টাকা করে টোল পাওয়া যায়৷ ইজারাদারের মাধ্যমে টোল তোলা হচ্ছে৷

সবগুলো সড়কে টোল বসানো হলে সেই টাকা তুলবে এ প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (টোল ও এক্সেল অধিশাখা) শফিকুল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব সময় টোল সরকারের পক্ষ থেকে উঠানো হয় না, এটা ইজারার মাধ্যমেও তোলা হয়৷ একটি নীতিমালার ভিত্তিতেই টোল নির্ধারণ হয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ