ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানিতে মাংসের দাম কিছুটা কম৷ তবে দেশটির বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ মাংসের উপর বাড়তি করারোপের প্রস্তাব করেছে৷
বিজ্ঞাপন
খামারিদের সুরক্ষা, মাংস খাওয়া কমিয়ে আনাসহ প্রাণীদের কল্যাণমূলক কাজের সুযোগ বাড়াতেই এ প্রস্তাব করেছে তারা৷ বর্তমানে মাংস কিনতে গিয়ে একজন ক্রেতা শতকরা সাত ভাগ মূল্য সংযোজন কর প্রদান করে৷ এ কর সাত ভাগ থেকে বাড়িয়ে শতকরা ১৯ ভাগ করার প্রস্তাব করেছে সোশ্যাল ডেমোক্রেট ও গ্রীন পার্টির কয়েকজন রাজনীতিবিদ৷
গ্রীন পার্টির কৃষিবিষয়ক মুখপাত্র ফ্রিড্রিশ ওস্টেনডর্ফ বলেন, ‘‘আমি মাংসের উপর কর বাড়ানোর পক্ষে কেননা এর ফলে প্রাণীকল্যাণে কাজ করা সুযোগ বাড়বে৷''
তবে শর্ত সাপেক্ষে করারোপের পক্ষে মত দিয়েছেন অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি৷ দলটির একজন রাজনীতিবিদ আলবার্ট স্টেগেমান বলেন মাংসের উপর কর বাড়ানোর পদক্ষেপটি হতে হবে গঠনমূলক৷ কর থেকে পাওয়া বাড়তি টাকা খামারিদের সুরক্ষায় ব্যয় করার শর্তও দিয়েছেন তিনি৷
বিশ্বব্যাপী নিরামিষভোজীদের সংখ্যা বাড়ার ফলে মাংসের চাহিদা কিছুটা কমে আসছে৷ মাংস শিল্পকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন্ডাই অক্সাইড নির্গমনকারী খাত বলে দোষারোপ করছে বিজ্ঞানীরা৷ মাংস ভোজনের হার কমাতে তাঁরা সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে৷ উল্লেখ্য, কট্টরপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর ডেমোক্রেসিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মাংসের উপর বাড়তি করারেপের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে৷
মাংস উৎপাদন খারাপ, নাকি ভালো?
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে ‘ভেগানিজম’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ ভেগানরা পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই মাংস বা পশু থেকে উৎপাদিত কোনো খাবার খান না৷ কিন্তু আসলে মাংস উৎপাদন এবং ভক্ষণ পৃথিবীর জন্য কতটা খারাপ?
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
শিল্পোন্নত দেশের মানুষ বেশি মাংস খায়
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ (মাথাপিছু) গড়ে মাংস খেয়েছে ৪১.৩ কেজি৷ অথচ ৫০ বছর আগে এর অর্ধেক মাংস খাওয়া হতো৷ গত বছর উন্নয়নশীল দেশে যেখানে মাথাপিছু ৩১.৬ কেজি মাংস খাওয়া হয়েছে, শিল্পোন্নত দেশে খাওয়া হয়েছে ৯৫.৭ কিলোগ্রাম৷
ছবি: China Photos/Getty Images
উৎপাদনে পানি খরচ
মাংস উৎপাদন একটি ব্যয়বহুল ব্যবসা৷ এতে অর্থ, সময় ও সম্পদ খরচ হয়৷ এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদনে ১৫,৪১৫ লিটার পানি লাগে৷ এক কেজি শুকরের মাংস উৎপাদনে লাগে ৬ হাজার লিটার পানি৷ অন্যদিকে সবজি, যেমন আলু উৎপাদনে ১ কেজিতে খরচ হয় ৩০০ লিটার পানি৷ অন্যদিকে ধান উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ হয় ২,৫০০ লিটার পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
গরু ও মুরগির খাদ্য
ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের উৎপাদিত প্রতি ৫ টন শস্যের মধ্যে ২ টন পোলট্রি বা মাছের খামারে যায়৷ অন্যদিকে, গুরুর মাংস উৎপাদনের জন্য এত খাদ্য ব্যয় হয় না৷ ঘাস খেয়েই এদের অনেকটা চাহিদা পূরণ হয়৷
ছবি: Norberto Duarte/AFP/Getty Images
উজাড় হচ্ছে বন
প্রাণী খাদ্যের জন্য বন উজাড় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ গাছ কেটে গরু চারণ ক্ষেত্র বা কৃষিক্ষেত্র বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে৷ সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
বিষাক্ত মিথেন
কার্বন নিঃসরণে কৃষির ভূমিকা রয়েছে ১১ থেকে ১৫ ভাগ৷ অন্যদিকে, গরুর ঢেঁকুর বা ‘গ্যাস’ থেকে যে মিথেন উৎপন্ন হয়, তা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২০ গুণ বিষাক্ত ও ক্ষতিকর৷