খাদ্য অখাদ্য
২৯ এপ্রিল ২০১২সুপারমার্কেটগুলো থেকে আপনি যখন প্যাকেটজাত মাংস কেনেন,তখন কি একবারও মনে হয় ওই প্রাণীগুলোর কথা? মনে হয় – কোথায়, কেমন, কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে এই সব গরু, খাসি বা শুকরগুলো?
হয়তো আপনার-আমার মতো আরো অনেকেই ভাবে না মানুষের খাদ্য হয়ে যাওয়া জন্তুগুলোকে নিয়ে৷ কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে আরেকটু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবেছেন জার্মানির বার্লিন শহরের ডেনিস বুচমান নামের এক যুবক৷
খামারে গাদাগাদি করে বেড়ে উঠা পশুগুলোর কোনো স্বাভাবিক জীবন নেই৷ দিনের পর দিন তারা দেখে না সূর্যের আলো৷ তাদের গায়ে লাগে না মুক্ত হাওয়া৷ এমনকি পশুরা যাতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে না পারে, এ জন্য জার্মানির কিছু কিছু খামারে ফেলে দেয়া হয় শূকরের দাঁত ও লেজ৷ এভাবেই খামারের চার দেয়ালে বেড়ে ওঠার পর পশুগুলোকে জবাই করে মাংসের প্যাকেট হিসেবে চালান দেয়া হয় দোকানে দোকানে৷
খামারে পশু পালন ও জবাই এর এ পুরো প্রক্রিয়াটিরই বিরোধী ডেনিস৷ তিনি চান, পশু বিষয়ে মানুষের আরেকটু সচেতনতা বাড়ুক৷ কেবল চারদেয়ালে বন্দি করে না রেখে প্রাণীগুলোকে ছেড়ে দেয়া হোক মাঠে৷ সেগুলো মাঠে খেলে, গায়ে রোদ লাগিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক৷
প্রাণীদের প্রতি সহমর্মিতার এ মানসিকতা থেকেই ডেনিস গড়ে তুলেছেন শূকরের একটি খামার৷ যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবগুলো বেড়ে ওঠে৷ জার্মান ভাষায় ‘মাইনে ক্লাইনে ফার্ম' বা বাংলায় ‘আমার ছোট্ট খামার' নামের এ খামারের নামে রয়েছে একটি ওয়েবসাইটও৷ শূকরগুলো মাঠে দৌড়াচ্ছে, খেলছে – এই জাতীয় সব ছবি দেয়া আছে ওয়েবসাইটটিতে৷
ডেনিস বলেন, ‘‘মানুষ যেন বেশি সচেতন হয় কিন্তু কম মাংস খায়, সে উদ্দেশ্যেই গড়ে তুলেছি ‘আমার ছোট্ট খামার' নামের এই প্রকল্প৷''
কম মাংস খাওয়ার কথা শুনে আবার ভাবেন না যে, প্রাণী হত্যা বন্ধ করার পক্ষে কাজ করছেন ডেনিস৷ মানুষ যে সব মাংস খাচ্ছে – তা কতোটা ভালো, নিরাপদ ও জৈবিক এবং মানুষ যে প্রাণীগুলো খাচ্ছে, সেগুলোর বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিয়েই মূলত ডেনিসের চিন্তা-ভাবনা৷
তবে, ডেনিসের এই ব্যাপারটিকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন জার্মান প্রাণী সুরক্ষা সংস্থার নির্বাহী প্রধান৷ খামারে অতি অমানবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক পরিবেশে পশুর বেড়ে ওঠার পক্ষে কাজ করাটা অত্যন্ত মানবিক৷ পশু খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হবার পথে এটিকে একটি উন্নয়ন হিসেবেও দেখছেন তিনি৷
প্রতিবেদন: সিনামন নিপ্পার্ড/আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন