উন্নত মস্তিষ্কের কারণে মানুষ বাকি প্রাণীদের থেকে আলাদা৷ বিজ্ঞানীদের মতে, মাংস খাওয়া শুরু করে আদি মানুষ এমন বিস্ময়কর বিবর্তন সম্ভব করতে পেরেছে৷ আজকের যুগে প্রোটিনের বিকল্প উৎস অবশ্য মাংসের গুরুত্ব কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মানুষেরও ডাইনোসরের মতো দশা হতে পারে৷ কিন্তু আমরা এখনো টিকে আছি৷ প্রশ্ন হলো, ডাইনোসরদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কী? আসলে সেই প্রাণীর তুলনায় আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি উন্নত৷
বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এটা বড় একটা সুবিধা বটে৷ কিন্তু তার একটা উচ্চ মূল্যও রয়েছে৷ জীবাশ্মবিদ হিসেবে ফিলিপ গুনৎস বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, শরীরের মধ্যে মস্তিষ্কের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়৷ ফলে প্রজাতি হিসেবে এমন বড় মস্তিষ্ক সামলানোর সামর্থ্য থাকতে হবে৷ শরীরের মাত্র কয়েক শতাংশ দখল করলেও দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন ধরে মস্তিষ্ক আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ শক্তি শুষে নেয়৷’’
এমন শক্তি কোথা থেকে এলো? আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে আজকের অবস্থায় পৌঁছলো? জীবাশ্মবিদ হিসেবে ফিলিপ গুনৎস সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চান৷
মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের রহস্য উন্মোচন করতে আমাদের সবচেয়ে কাছের আত্মীয়, অর্থাৎ ‘গ্রেট এপ্স’ বলে পরিচিত বানরদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে৷ তুলনা করলেই বোঝা যাবে, এই বানর নিরামিষ খায়৷ আমাদের পূর্বপুরুষরাও প্রথমদিকে নিরামিষাশী ছিল৷
প্রায় ৩০ লাখ বছর আগে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে৷ লুসি নামের প্রথম যুগের মানুষ ঘনঘন না হলেও মাংস খেতে শুরু করে৷ বিশেষ খাঁজযুক্ত প্রাণীর হাড় থেকে সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ পাথরের হাতিয়ার দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা হাড় থেকে মাংস আলাদা করতো৷
তারপর ৩৫ লাখ বছর আগে মাংস খাবার প্রবণতা দ্রুত বেড়ে যায়৷ গুনৎস বলেন, ‘‘পরে মানুষ ধীরে ধীরে শিকার করতে শুরু করে বলে আমাদের বিশ্বাস৷ দলবদ্ধভাবে শিকার করে সাফল্য ও দক্ষতা আরও বেড়ে যায়৷ ফলে মানুষ আরো মাংস খাবার সুযোগ পায়৷ ফলে বাড়তি শক্তি উদ্বৃত্ত হতে থাকে৷ সে কারণে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক আরো বড় হয়ে ওঠে৷ অর্থাৎ এই বিবর্তন নিজস্ব ছন্দেই ঘটেছে এবং অবশেষে আমাদের শরীরের আকারের তুলনায় মস্তিষ্ক অত্যন্ত বড় হয়ে উঠেছে৷’’
৪৪ বছরে ৬০ শতাংশ বন্যপ্রাণী কমে গেছে
ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর নতুন প্রতিবেদন বলছে, গত ৪৪ বছরে ৬০ শতাংশ বন্যপ্রাণী কমে গেছে৷ এর জন্য তারা মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও মানব আচরণকে দায়ী করেছে৷
ছবি: DW/Bettina Thoma
লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬০ শতাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী মানুষের আচরণ ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ বিশ্বের ১৬ হাজার ৭০০ প্রাণীর ৪০০০ হাজার প্রজাতির উপর গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা৷
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর আন্তর্জাতিক মহাসচিব মার্কো ল্যাবার্টিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ এবং তার আরও খারাপ হচ্ছে৷ তবে ভালো খবর হল, আমরা জানি যে সত্যিই কী ঘটছে৷’’
ছবি: WWF/Adriano Gambarini
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশগুলোর৷ গত ৪৪ বছরে তাদের ৯০ শতাংশ বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/F. Neukirchen
কয়েক দশকের চেয়ে খারাপ অবস্থা
মাত্র কয়েকশ’ বছরে যে হারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, বর্তমান হার তার চেয়ে একশ থেকে হাজার গুণ বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpaWWF/Warwick Sloss
১০ হাজার বছর আগে ছিল ভিন্ন পরিস্থিতি
পরিসংখ্যানটা ভীতিকর বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার এক গবেষক, যিনি এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক৷ ১০ হাজার বছর আগে বন্যপ্রাণী বৃদ্ধির হার ছিল পুরো উলটো৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
প্রবাল হারিয়ে যাচ্ছে
সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং তা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলে জানালেন গবেষকরা৷ তাদের মতে, গত ৪০ বছরে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ প্রবাল বিনষ্ট হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
ভালো খবর
ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর পদক্ষেপের কারণে বাঘ, গ্রিজলি ভাল্লুক, নীল পাখনার টুনা এবং ঈগলদের সংখ্যায় উন্নতি হয়েছে৷ ল্যামবার্টিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি এ সব উদ্যোগ না নিতাম, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Azubel
7 ছবি1 | 7
শিকারের পদ্ধতি, কৌশল ও হাতিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়িয়ে মানুষ আরও উন্নত শিকারি হয়ে উঠেছিল৷ শিকার করে পাওয়া মাংসের সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের আকারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে৷
একটি তত্ত্ব অনুযায়ী কাঁচা শাকসবজি খাবার হজমের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের পাচনতন্ত্র খুব বড় ছিল৷ সেই প্রক্রিয়ায়ও অনেক শক্তির প্রয়োজন হতো৷ মাংস খেয়ে তারা সে তুলনায় অনেক সহজে অনেক বেশি শক্তি পেতো৷ পাচনতন্ত্র ধীরে ধীরে ছোট হতে লাগলো৷ ফলে উদ্বৃত্ত শক্তি মস্তিষ্কের বিবর্তন প্রক্রিয়া আরও তরান্বিত করলো৷ এভাবে আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনের ক্ষেত্রে মাংস গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠলো৷
তবে মাংসের ফ্যাট না প্রোটিন – ঠিক কোন উৎস থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই শক্তি এসেছিল, আজ তা বোঝা প্রায় অসম্ভব বলা চলে৷ ফিলিপ গুনৎস মনে করেন, ‘‘প্রোটিনই আজ আমাদের মস্তিষ্কের আকার এত বড় করে তুলেছে৷ বিশাল এই মস্তিষ্কের বিবর্তনের জন্য মূলত মাংস, বিশেষ করে প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে আমাদের বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়৷’’
আমাদের বিবর্তনের ক্ষেত্রে মাংস ছিল অপরিহার্য৷ তবে ৩০ লাখ বছর আগের তুলনায় আজ আমাদের হাতে আরও উচ্চ মানের ফলমূল, তরিতরকারি ও শস্য এসে গেছে৷ ফলে আমাদের মস্তিষ্কের সম্ভবত আর মাংস থেকে শক্তির প্রয়োজন নেই৷
ইয়েন্স হানে/এসবি
ডারউইনের ঐতিহাসিক কাজের দেড়শ’ বছর
২৪ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বই ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’ প্রকাশনার দেড়শ বছর৷ তাঁর অনবদ্য কাজের কিছু ঝলক দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব
আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার অন্যতম ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব৷ এতে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে৷ ডারউইন প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে প্রাণীর টিকে থাকার সংগ্রামের কথা বিশদ ও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
জীবনের সেরা ভ্রমণ
২২ বছর বয়সে চার্লস ডারউইন এইচএমএস বিগল নামের এক জাহাজে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বের হন৷ পাঁচ বছরব্যাপী এই সমুদ্র ভ্রমণে ডারউইন প্রকৃতি ও বিভিন্ন প্রাণী পর্যবেক্ষণ করে তার নমুনা সংগ্রহ করেন৷ পরবর্তীতে এটিই তার জীবনে অসাধারণ এক গবেষণার মূল পাথেয় হয়ে ওঠে৷ তরুণ ডারউইনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে জীবাশ্ম৷ এ কারণে বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং গাছের জীবাশ্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু করেন তিনি৷
ছবি: Mary Evans/picture-alliance
ভ্রমণের দিনপঞ্জি
গালাপাগোস দ্বীপে ফিঞ্চ পাখির বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন রকমের ঠোঁট চোখে পড়ে তার৷ ভ্রমণের পুরো সময়টাতে বিভিন্ন বিষয়ে নোট রেখেছিলেন তিনি৷ সবশেষে যা ১৭৫০ পৃষ্ঠায় দাঁড়ায়, পরে ‘জার্নাল অফ রিসার্চেস ইনটু দ্য জিওলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্ট্রি অফ দ্য ভেরিয়াস কান্ট্রিজ ভিজিটেড বাই এইচএমএস বিগল’ নামে প্রকাশ পায়৷ ভ্রমণের সময় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর হাড় ও কঙ্কাল নিয়ে এসেছিলেন লন্ডনে৷
ছবি: Ken Welsh/Design Pics/picture alliance
প্রাকৃতিক নির্বাচন
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি প্রাণী থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে৷ এই তত্ত্ব বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত৷ ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে৷ এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়৷
ছবি: Natural History Museum/dpa/picture-alliance
যোগ্যতমের বিজয়
টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াইয়ে প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়৷ অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়৷ এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়৷
লন্ডনের গির্জাগুলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়৷ কিন্তু তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে প্রশংসার সাথে গৃহীত হয় এটি৷ তবে প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়টি কম গ্রহণযোগ্যতা পায়৷ এ কারণে ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ বইটি ছয়বার সংশোধন করতে হয় ডারউইনকে৷
ছবি: ANDY RAIN/Epa/dpa/picture-alliance
মানুষের প্রাকৃতিক নির্বাচন
সব প্রজাতিই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডারউইনই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন৷ ১৮৭১ সালে তিনি লেখেন ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’৷ এ সময় তার ভাবনাগুলো বেশ সাড়া ফেলে এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়৷
ছবি: akg-images/picture alliance
বিজ্ঞানীদের তীর্থক্ষেত্র
বর্তমানে ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করেন৷ দ্বীপের ঐশ্বর্যময় জীববৈচিত্রকে রক্ষা করতে এখানে এখনো চার্লস ডারউইন গবেষণা কেন্দ্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে৷