আজকাল মাইক্রোওয়েভ ওভেন ছাড়া রান্নাঘর ভাবাই যায় না৷ চটজলদি খাবার গরম থেকে শুরু করে কিছু রান্নাও তাতে করা চলে৷ কিন্তু এই যন্ত্রটি শরীর-স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে কি? বিশেষজ্ঞরা এর নানা দিক তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির প্রায় ৭০ শতাংশ সংসারেই রান্নাঘরে মাইক্রোওয়েভ ওভেন রয়েছে৷ বাকি ৩০ শতাংশ এই রহস্যময় রশ্মি সম্পর্কে অত্যন্ত সন্দিহান৷ মাইক্রোওয়েভ ওভেন কি সত্যি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন সারা ড্রিসেন৷ জার্মানির আখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে তিনি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ বা ক্ষেত্রের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে সব গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাইক্রোওয়েভ ওভেন মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, এমন কোনো গবেষণার ফলাফলের কথা আমার জানা নেই৷ তবে মনে রাখতে হবে, মাইক্রোওয়েভ ওভেনের তরঙ্গ নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমিত রাখতে হয়৷ সেই নিয়ম মানা হচ্ছে, সেটা ধরে নিয়েই মূল্যায়ন করা হয়৷’’
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ও তার ক্ষতিকারক দিক নিয়ে বেশ কিছুকাল ধরে তর্কবিতর্ক চলে আসছে৷ মূলত মোবাইল ফোন বা হাই-ভোল্টেজ ইলেকট্রিক তারের কারণে ইলেকট্রিক স্মগ নিয়েই চর্চা হয়৷ এর ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলছে৷ সারা ড্রিসেন বলেন, ‘‘তফাত হলো, টেলিফোন করার সময় কানে মোবাইল একটানা ধরে রাখতে হয়৷ ফলে অনেক সময় ধরে এই মাইক্রোওয়েভের প্রভাব থাকে৷’’
জার্মানদের ঘরোয়া কিছু টুকিটাকি টিপস
মাইক্রোওয়েভ, ফুলদানি, ইস্তিরি ইত্যাদি পরিষ্কারের জন্য হাত বাড়াতে হয় অস্বাস্থ্যকর রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত লিকুইড বা পাউডারের দিকে৷ অথচ রান্নাঘরেই রয়েছে আলু, সিরকা, বা বেকিং পাউডার, যা ঝকঝকে করে তুলতে পারে এই জিনিসগুলোকে৷
ছবি: picture-alliance / Helga Lade Fotoagentur GmbH, Ger
মাইক্রোওয়েভ ও লেবু
মাইক্রোওয়েভ পরিষ্কার রাখার খুব সহজ উপায় অনেকটা এ রকম: একটি ছোট কাঁচের বাটিতে পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে ৭৫০ ওয়াটে পাঁচ মিনিট চালিয়ে রাখুন৷ তারপর একটি অল্প ভেজা কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে ফেলুন৷ দেখবেন মাইক্রোওয়েভের ভেতরটা কী সুন্দর ঝকঝক করছে৷ এমনকি খাবারের কোনো গন্ধ বা মসলার দাগও যাবে উধাও হয়ে৷
ছবি: AP
ইস্তিরি এবং টুথপেস্ট
কাপড়ের ইস্তিরি বা ‘আয়রন’ করার যন্ত্রটি আস্তে আস্তে কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে যায় অথবা তাতে মরচে পড়ে যায়৷ তখন আর সেটা দিয়ে আগের মতো সুন্দর ইস্তিরি করা যায় না৷ তাই এমনটা হলে ইস্তিরিতে আলতো করে টুথপেস্ট লাগিয়ে ধীরে ধীরে ঘষতে থাকুন৷ দেখবেন আবারো আগের মতো মসৃণ হয়ে গেছে এবং কেমন সুন্দর ইস্তিরি হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/ASA/Sampics
ঘরের গন্ধ দূর করবে সিরকা
ঘরে ধূমপান বা রান্নার গন্ধ দূর করতে যা করবেন: একটি স্পঞ্জ সিরকার মধ্যে ডুবিয়ে একটি পাত্রে রেখে, সেই পাত্রটি ঘরের একপাশে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন৷ দেখবেন আর কোনো গন্ধই থাকবে না৷ এছাড়া গন্ধ দূর করতে পানিতে সিরকা মিশিয়ে কিছুক্ষণ গরম করলে একই ফল পাওয়া যায়৷ শিশু বা ছোট বাচ্চাকে ধূমপান বা রান্নার গন্ধ থেকে দূরে রাখতে সিরকা বেশ উপকারী৷
ছবি: Colourbox
কাপ, কেটলি, থার্মোফ্লাস্ক এবং বেকিং পাউডার
কফি বা চা তার দাগ রেখে যায় কাপ, কেটলি বা ফ্লাস্কে – যা দেখতে ভালো তো লাগেই না, উল্টো সেই দাগ লাগা পাত্রে চা পানে কেমন যেন অরুচি হয়৷ তাই দাগের ওপর দু’চামচ বেকিং পাউডার এক বা দু’ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন এবং পরে গরম পানি দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলুন৷ দেখবেন নিজের কাপ, কেটলি বা ফ্লাস্কটিকে আর চিনতেই পারছেন না!
ছবি: picture-alliance/dpa
ফুলদানিতে চাল
তাজা ফুল কয়েকদিন ফুলদানিতে থাকার পর দানিটি কেমন যেন অপরিষ্কার হয়ে যায়, যা ভালোভাবে পরিষ্কার করা বেশ শক্ত, বিশেষ করে ফুলদানির গলা যদি সরু হয়৷ তাই পুরনো ফুল ফেলে দেওয়ার পর, ফুলদানিতে কয়েকটি চাল ও গরম পানি দিয়ে একটু ঝাকালেই আপনার সখের ফুলদানিটি আবার সুন্দর পরিষ্কার হয়ে যাবে৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে মরা ফুল ও পাতার গন্ধও৷
ছবি: DW/S. Dickel
পা-পোশ এবং লবণ পানি
জুতো জোড়া ভালো করে মুছে ঘরে ঢোকার জন্য দরজার সামনেই পাপোশ রাখা হয়৷ এতে ঘরে চট করে বাইরের ময়লা জীবাণু ঢুকতে পারে না৷ বলা বাহুল্য এই পাপোশ খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায়৷ তাই মাঝে মাঝে পানিতে খানিটা লবণ মিশিয়ে সেই পানি পাপোশের ওপর দিয়ে রাখুন, মাত্র কয়েক মিনিট৷ তারপর সেটা ভালো করে ধুয়ে ফেললে পরিষ্কার তো হবেই, হবে জীবাণুমুক্তও৷
ছবি: Fotolia/denlitya
আলুর কাণ্ড
রাধুনীরা সকলেই জানেন যে, পেয়াজ ও রসুন কাটার পর হাতে একটা কেমন গন্ধ থেকে যায়৷ খুব সহজ উপায়েই কিন্তু এই গন্ধ দূর করতে পারেন৷ রান্না ঘরে কাটাকাটির কাজ শেষ হলে একটি আলু দু’ভাগ করে কেটে দুই হাতে একটু ঘষে নিন, ব্যাস গন্ধ বিদায়!
ছবি: International Potato Center
আলুর ঝিলিক
রুপার চামচ, কাটাচামচ, কেটলি, প্লেট বা ফুলদানি – যাই হোক না কেন তার চকচকে ভাব ফিরিয়ে আনতে চান? কোনো অসুবিধা নেই৷ বড় একটা হাড়িতে কয়েকটি ছোট আলু ঢেলে পানিটা সেদ্ধ করুন৷ তারপর ফুটন্ত পানি থেকে আলুগুলো তুলে নিয়ে ঐ আলুর পানিতে রুপার জিনিসগুলো এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন৷ সব শেষে সাধারণ পানিতে সেগুলো ধুয়ে আস্তে আস্তে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন৷ দেখবেন কেমন চকচক করছে!
ছবি: Imago/Westend61
8 ছবি1 | 8
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের ভয় থাকলে মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানো উচিত৷ মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ঝুঁকি সে তুলনায় অনেক কম বলে মনে হয়৷ তাছাড়া খাবার মোটেই কলুষিত হয় না৷ একমাত্র এক্সরে বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সেটা করতে পারে৷ কারণ তাদের বিকিরণ ‘আয়নাইজিং’৷ সারা ড্রিসেন বলেন, ‘‘মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ হিসেবে আয়নাইজিং বিকিরণ করে না৷ আমরা বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্রের কথা বলি, বিকিরণ নয়৷’’
পরের প্রশ্ন হলো, মাইক্রোওয়েভে রান্না করা খাবার কি স্বাস্থ্যকর? এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ভোক্তা সুরক্ষা তথ্য পরিষেবার প্রতিনিধি উটে গম৷ এই প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষভাবে খাদ্যপণ্য সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে৷ উটে গম বলেন, ‘‘নির্ভর করছে, কোন খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা হচ্ছে৷ যন্ত্রটিকে আলাদা করে খারাপ বা ভালো বলা চলে না৷’’
কিন্তু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে তাজা খাদ্য রান্না করলে কী ঘটে? যেমন ব্রকোলি৷ ইন্টারনেটে স্পেনের এক গবেষণার খবর ছড়িয়ে পড়ছে, যাতে দাবি করা হয়েছে যে মাইক্রোওয়েভে ব্রকোলির ফাইটোকেমিক্যাল প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফল মারাত্মক হতে পারে৷ উটে গম বলেন, ‘‘ফাইটোকেমিক্যাল ক্যানসার থেকে শরীরকে রক্ষা করে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ তাই স্বাভাবিক কারণেই খাবারের মধ্যে তাকে অক্ষত রাখার চেষ্টা হয়৷ তাজা ফল বা শাকসবজির মধ্যে ফাইটোকেমিক্যাল ও রং থাকে৷’’
মাইক্রোওয়েভে রান্না করার প্রক্রিয়াকে রন্ধনশিল্পে মোটেই কদর করা হয় না৷ রান্নার বদলে শুধু খাবার গরম করার ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ ভালো ও সহজ প্রক্রিয়া বটে৷ অর্থাৎ বলা যেতে পারে, যে ছোট সংসারে মাইক্রোওয়েভের ব্যবহার মেনে নেওয়া যায়৷ কিন্তু আদর্শ স্বাদ পেতে হলে ঠান্ডা খাবার খাওয়াই ভালো৷
ইসাবেল হ্যার্টভেক-স্ট্যুকেন/এসবি
জার্মানদের খাবারদাবার
জার্মানরা কী খেতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন? জার্মান খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ফরমায়েশি একটি জরিপে তার উত্তর আছে৷ পাওয়া যাবে ২০১৬ সালের পুষ্টি বিবরণে৷
ছবি: Colourbox
পিৎসা
জার্মানরা পিৎসা খেতে খুব ভালোবাসেন: এদেশের মানুষদের প্রিয় খাদ্যের তালিকায় পিৎসা বাদ পড়তে পারে না – জরিপে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা পিৎসা ভালো লাগে বলেছেন, তা সে রেস্টুরেন্টের হোক আর ডিপ ফ্রিজেরই হোক৷ জার্মান খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় ফরসা সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে জার্মানদের খাদ্যাখাদ্য নিয়ে জরিপ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷
ছবি: Colourbox
স্যালাড
উত্তরদাতাদের ১৫ শতাংশ স্যালাডের নাম করেছেন৷ আধুনিক কুইজিনে স্যালাড ছাড়া খাওয়াদাওয়ার কথা ভাবাই যায় না৷ অনেকে তো মেইন কোর্স হিসেবেই স্যালাড খান৷ জার্মানরা আরো স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে পড়ায় স্যালাড খাওয়ার ধুম বেড়েছে৷
ছবি: Colourbox
মাছ
জার্মানদের ১৬ শতাংশ যে মাছ খেতে ভালোবাসেন, তাই বা কে জানতো! ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নাকি অতি স্বাস্থ্যকর, মাছে যা আছে৷ এ থেকে শরীরের রোগজীবাণু প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে৷
ছবি: Colourbox
সবজি
জার্মানরা খুব সবজি খাচ্ছেন – এবং বকাঝকা ছাড়াই৷ ১৮ শতাংশ বলেছেন, শাকসবজি তাদের প্রিয় খাবার৷ কিরকম হেল্থ কনশাস দেখুন! শাকসবজিতে কত রকমের অ্যান্টিঅক্সিডান্ট, প্রোটিন, অন্যান্য পুষ্টিকর পদার্থ আছে, যা কিনা হার্টের অসুখ রুখতে সাহায্য করে৷
ছবি: Colourbox
আলু
আলু আর মাংস হলো জার্মানির ট্র্যাডিশনাল খাবার৷ সবজির মতোই, ১৮ শতাংশ উত্তরদাতা আলুকে ফেলেছেন তাদের প্রিয় খাদ্যের পর্যায়ে৷ আলু পেট ভরায়, অথচ ক্যালরি কম৷ প্রথাগত জার্মান খাওয়া মানেই মাছ-মাংস, সবজি ও আলু৷
ছবি: Colourbox
নুডলস
স্প্যাগেটি আর পাস্তা রানার্স-আপ হয়েছে বলা চলে – ৩৫ শতাংশ জার্মান এই সব নুডল ডিশ খেতে ভালোবাসেন, যদিও বেশি নুডল খেলে মেদ জমার আশঙ্কা থাকে৷
ছবি: Colourbox
মাংস
জার্মানরা ঘোরতরভাবে মাংসাশী৷ উত্তরদাতাদের ৮৩ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা সপ্তাহে একাধিক বার মাংস খেয়ে থাকেন৷ মহিলাদের মাংসপ্রিয়তা দৃশ্যত পুরুষদের চেয়ে কম: পুরুষদের ৪৭ শতাংশের মাংস না হলে চলে না, মহিলাদের ক্ষেত্রে যা কিনা শুধু ২২ শতাংশ৷