মাওলানা শফী হত্যার তদন্ত শুরু, হেফাজতের কর্মসূচি নাই
১৩ জানুয়ারি ২০২১মঙ্গলবার ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে চট্টগ্রাম পিবিআই এর একটি দল৷ ওই দলের প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় পিবিআই এর পুলিশ সুপার ইকবাল আহমেদ জানান, তারা মঙ্গলবার ঘটনাস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন৷ হেফাজতের আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীসহ ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন৷ আরো জিজ্ঞাসাবাদ হবে৷ ২৫ জনের মধ্যে তিন-চারজন বিবাদী রয়েছেন৷ মাওলানা বাবুনগরীসহ বাকিদের সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷
মামলার অন্যতম বিবাদী এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকিদাতা হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি৷ ইকবাল আহমেদ জানান, ‘‘মামুনুল হকসহ ৩৬ জন বিবাদীকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷''
তবে তিনি জানান, মাওলানা শফীর লাশ তুলে ময়না তদন্তের প্রয়োজনীয়তা তারা দেখছেন না৷ আর মামলার আরজিতেও লাশ না তোলার আবেদন করা হয়েছে। তবে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে৷
"আদালত এই মামলার তদন্তে এক মাস সময় দিয়েছে৷ এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করার আশা করছেন তারা৷ তবে প্রয়োজন হলে সময় বাড়িয়ে নেবেন,‘' জানান তদন্ত কর্মকর্তা৷
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি জানান, তদন্তকারীরা মাওলানা বাবুনগরী ছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছেন, তারা যা জানতে চেয়েছেন তা জানানো হয়েছে৷ এই তদন্তে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে৷''
অবশ্য তিনি দাবি করেন, ‘‘মৃত্যুর আগের দুই বছরে আল্লামা শফীকে ১৬ বার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ মারা গেছেন এইরকম খবর বেশ কয়েকবার চাউর হয়েছে৷ ১০৪ বছর বয়সের একটা লোক তিনি অসুস্থ হয়েছেন, হাসপাতালে মারা গেছেন, ওনার ছেলেরা লাশ গ্রহণ করেছেন৷ এটা নিয়ে এই ধরনের কথা একটা ফলস কাজ৷’’
মাওলানা মামুনুল হক জানান তাকে এখনো কোনো নোটিশ বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়নি৷ জিজ্ঞাসাবাদে যা "সত্য” তাই বলবেন তিনি৷ তিনি বলেন," আল্লামা শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷ একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে৷ গোষ্ঠীগত স্বার্থ এবং হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বকে চাপে রাখতেই এই মামলা৷’’
তিনি অভিযোগ করেন, এখন তাকে দেশের কোথাও ওয়াজ মাহফিল করতে দেয়া হচ্ছে না৷ স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না৷ বলছে, উপরের নিষেধ আছে। তবে তার ব্যক্তিগত চলাফেরায় কোনো বাধা নেই বলে জানান তিনি৷
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজত মাঠে নামার পর তাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত চাঙ্গা করা হলেও এখন আবার তাতে ভাটা পড়েছে। মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন, ওইসব মামলার ব্যাপারে পুলিশ তাদের নেতা-কর্মীদের এখন কোনো ঝামেলা করছে না৷ কোনো তদন্তও চোখে পড়ছে না৷ তিনি জানান," স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ও কথা হচ্ছে৷ আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের বৈঠক হবে৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মূর্তি ইস্যুতে আমরা আর কোনো কর্মসূচি দেব না৷ আমাদের কাজ ছিলো সরকাররকে জানানো৷ আমরা মনে করি ভাস্কর্য আর মূর্তি একই৷ তবে আমরা মূর্তি ভাঙব না৷ এটা সরকারের কাজ। তারা করলে করতে পারেন।’’
হেফাজতের সাবেক আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফী মারা যান গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়৷ তার আগে তাকে মাদ্রাসার ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করতে হয়৷ তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়৷ আর তার শ্যালক মো. মইন উদ্দিন চট্টগ্রামের আদালতে হত্যা মামলা করেন ১৭ ডিসেম্বর৷