1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাওলানা সা'দকে দূরে রেখেই বিশ্ব ইজতেমা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাকায় এলেও হেফাজত ও কওমীপন্থিদের চাপের মুখে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না না ভারতের মাওলানা সা'দ৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, তিনি তাবলিগের কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করবেন৷ শুক্রবার থেকে টঙ্গির তুরাগের তীরে তিন দিনের ইজতেমা শুরু হচ্ছে৷

Biswa Ijtema Bangladesch
ছবি: REUTERS

তাবলিগ  জামায়াত হলো সারাবিশ্বে মুসলামানদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াতি কাজের একটি প্রাচীন সংগঠন৷ এর প্রতিষ্ঠাতা ভারতের প্রয়াত মাওলানা ইলিয়াস আহমেদ৷ তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার আদর্শের অনুসারী ছিলেন৷ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গির তুরাগ নদের তীরে প্রতি বছর তাদের বাৎসরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যা বিশ্ব ইজতেমা নামে পরিচিত৷ এই ইজতেমায় বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলিগের  মুসল্লিরা অংশ নেন৷

গত ২০ বছর ধরে ভারতের মাওলানা সা'দ কান্ধলভিসহ তিনজন শীর্ষ নেতা যৌথভাবে তাবলিগ জামায়াতের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন৷ একক কোনো নেতৃত্ব নেই৷ গত বছর থেকে বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদ্রাসাপন্থিরা মাওলানা সা'দ-এর ইজতেমায় আসার বিরোধিতা করে আসছেন৷ এবার তার চরম প্রকাশ ঘটে৷ বুধবার তারা তার আসা ঠেকাতে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা অবরোধ করে৷ সা'দ পুলিশ পাহারায় দুপুরের পর বিমান বন্দর থেকে কাকরাইল মসজিদে যান৷ পুলিশ তার নিরাপত্তার জন্য মসজিদ ঘিরে রাখে৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হেফাজত ও কওমীপন্থিরা অবস্থান নেন প্রেসক্লাব ও কাকরাইল মসজিদের আশপাশে৷ তারা ঘোষণা দেন, সা'দকে ইজতেমায় যেতে দেবেন না এবং তাকে ভারতে ফিরে যেতে হবে৷ তাদের অভিযোগ ইসলাম নিয়ে কিছু ‘বিতর্কিত' মন্তব্য করেছেন মাওলানা সা'দ৷

পরিস্থতি নিয়ে বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন সা'দবিরোধী ও পক্ষের মাওলানারা৷ বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংবাদ মাধ্যমকে জানান,‘‘মাওলানা সা'দ ইজতেমা মাঠে যাবেন না৷ ইজতেমা চলাকালে তিনি কাকরাইল মসজিদে থাকবেন, পরে সুবিধাজনক সময়ে দেশে ফিরে যাবেন৷''

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘‘মাওলানা সা'দ-এর বক্তব্য নিয়ে তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ও আলেমদের মধ্যে  মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল৷ এই বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে৷ উভয়পক্ষ এ সমঝোতা প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন৷''

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ইজতেমার বিষয়ে সরকার কখনোই হস্তক্ষেপ করেনি, এবারও করবে না৷ ইজতেমার নিরাপত্তায় সব ধরনের সহযোগিতা বরাবরের মতো এবারও দেয়া হবে৷''

‘এবার এলেও তাকে আমরা ইজতেমায় অংশ নিতে দেবো না’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এ ইস্যুকে ঘিরে যারা রাস্তা-ঘাটে নেমেছিলেন, আশা করছি তারাও আজ ফিরে যাবেন৷ আর মাওলানা সা'দ যে মন্তব্য করেছেন, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আলেমরা নিজেরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এ বিষয়ে সরকারের কোনও বক্তব্য নাই৷'' সমঝোতা বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া বিবদমান দুই গ্রুপের কেউ সেখানে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি৷

এর আগে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী ডয়চে ভেলেকে বলেনন,‘‘মাওলানা সা'দ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এর আগে৷ আমরা বলেছিলাম সেই বিষয়গুলো নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে৷ তারপর তিনি ইজতেমায় আসবেন৷ কিন্তু গত বছরও জোর করে এসেছেন৷ কিন্তু এবার এলেও তাকে আমরা ইজতেমায় অংশ নিতে দেবো না৷ তাকে দিল্লি ফিরে যেতে হবে৷''

তাবলিগের ব্যাপারে হেফাজতের কেন মাথাব্যথা– এই প্রশ্ন  করলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা হেফাজতের হলেও একই সঙ্গে তাবলিগের সঙ্গেও কাজ করি৷ আমাদের শত শত মুসুল্লি তাবলিগের কাজে সময় দেন৷ আমরা তাবলিগ হিসেবেই তার বিরোধিতা করছি৷ আর আমরা ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী৷ তাবলিগ সৃষ্টি করেছেন ভারতের দেওবন্দের মাওলানা ইলিয়াস আহমেদ৷ আমরা তার গড়া দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত হতে দিতে পারি না৷''

তিনি কী ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন জানতে চাইলে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘‘তিনি কোরান, হাদিস সম্পর্কে অনভিজ্ঞ, তিনি কোরান হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ মাওলানা আল্লামা শফি মত দিয়েছেন যে, তিনি তাবলিগের নেতৃত্ব দেয়ার অযোগ্য৷ কিন্তু তিনি নিজেই নিজেকে তাবলিগের আমীর ঘোষণা করেছেন৷ আর মাওলানা শফির মতকে শুধু তাবলিগ নয় এই উপমহাদেশের সব আলেমরাই সম্মান করেন৷''

‘তাঁর কথা নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছে’

This browser does not support the audio element.

মাওলানা সা'দবিরোধী তাবলিগ জামায়াতের কওমীপন্থি নেতা মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ মওলানা সা'দের বিরোধিতার কয়েকটি কারণ বলেন ডয়চে ভেলেকে৷ তার মতে, ‘‘মাওলানা সা'দ হযরত ঈসাকে নিয়ে অসম্মানজন কথা বলেছেন, বলেছেন কোরান বুঝে পড়া ওয়াজিব৷ আর বলেছেন, হেদায়েত আল্লাহর হাতে হলে নবীজীকে কেন পাঠানো হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, পকেটে মোবাইল ফোন নিয়ে নামাজ পড়া নাজায়েজ৷ তার এসব কথা নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মাওলানা সা'দ বলেছেন, মাদ্রাসায় টাকার বিনিময়ে পড়ানো যৌনকর্মীদের টাকা উপার্জনের মতোই৷ বেতনের বিনিময়ে মাদ্রাসায় পড়ানোর তিনি বিরোধী৷''

তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘মাদ্রাসায় টাকার বিনিময়ে পড়ানোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য নয়, তার অন্যান্য মন্তব্যের জন্যই আলেমরা তার বিরোধিতা করছেন৷''

এসব নিয়ে মাওলানা সা'দ পন্থিদের কয়েকজনের সঙ্গে যেগাযোগ করা হলেও কেউ কোনো মন্তব্য করেননি৷ তবে বাংলাদেশে তাবলিগের মূল কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ সা'দপন্থিদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা এখনো প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য না দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ