1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাক্রোঁর ঢাকা সফর: গুরুত্ব পাবে ভূ-অর্থনীতি নাকি ভূ-রাজনীতি

৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ রোববার ঢাকায় আসছেন। ভারতে জি-২০ সম্মেলন শেষে ঢাকা সফর করবেন তিনি।

২০২১ সালে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদ অর্থাৎ সরকারি বাসভবনে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনা। (ফাইল ছবি)
২০২১ সালে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদ অর্থাৎ সরকারি বাসভবনে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনা। (ফাইল ছবি)ছবি: SARAH MEYSSONNIER/REUTERS

৩৩ বছর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ সময়ের মধ্যে দুই দেশেরই অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভূ-অর্থনীতি, ভূ-রাজনীতির গতিপ্রকৃতিও নানা দিকে মোড় নিয়েছে। সেকারণে মাক্রোঁর এ সফর নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। তার সফরে ভূ-অর্থনীতি নাকি ভূ-রাজনীতি কোনটি বেশি গুরুত্ব পাবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মাক্রোঁর এই সফরটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি এমন একটি সময়ে বাংলাদেশে আসছেন, যেখানে আর কয়েকদিন পরেই জাতীয় নির্বাচন। ভেতরে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেটা তো আর বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়, তবে আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারি বড় কোন অর্থনৈতিক ডিল হবে। তা না হলে এই সময় তিনি বাংলাদেশে আসতেন না। এখানে এয়ারবাস কেনার বিষয় আছে, আবার স্যাটেলাইট-২ আমরা যেটা তৈরী করতে চাই সেটা নিয়েও তো আলোচনা হবে। ফলে এখানে অর্থনৈতিক গুরুত্বটাই বেশি পাবে বলে আমার ধারণা।”

এই সফরে এমানুয়েল মাক্রোঁ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তার এই সফরে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর এবং সবশেষ দুই দেশের একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ের কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানাবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাকে বিদায় জানাবেন। এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা উপস্থিত থাকবেন। সোমবার তাদের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশে ফ্রান্স দূতাবাস জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করছে। বিশেষ করে প্যারিস এজেন্ডা ফর পিপলস অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটের কাঠামোর সক্রিয় সমর্থক ঢাকা। শান্তিরক্ষা, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী বাংলাদেশের পাশে থাকবে ফ্রান্স সরকার।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "ফ্রান্সেরপ্রেসিডেন্টের এই সফরে স্যাটেলাইট নিয়ে একটা সমঝোতা স্মারক সক্ষর হবে। আমরা যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২' উৎক্ষেপণ করতে চাই সেটা ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথভাবে করব। পাশাপাশি ছোট ছোট স্যাটেলাইট তৈরীর একটা কারখানা বাংলাদেশে বানাতে আগ্রহ দেখিয়েছে ফ্রান্স। সে ব্যাপারেও আলোচনা হবে। এসব কারণেই বৈঠকে আমাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মাক্রোঁর সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক গবেষক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব দৈনিক প্রথম আলোতে লিখেছেন, "ফ্রান্স ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সূত্র তৈরি পোশাক রপ্তানি, প্রতিরক্ষা ক্রয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক লেনদেন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান। বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মতো ব্যাপক বিস্তৃত না হলেও খুব পিছিয়ে নেই। ফ্রান্স আমাদের পোশাক রপ্তানির অন্যতম ভালো বাজার, যেখানে বার্ষিক রপ্তানি প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের, ভারত ও চীনে আমাদের মোট রপ্তানির চেয়েও বেশি। ফ্রান্সের কাছ থেকে নৌযান ও হেলিকপ্টারসহ সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে বাংলাদেশ।”

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের মতে, "ইউরোপ ও আফ্রিকায় শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক ও রাজনৈতিক সংকটের কোনো ‘ডিপ্লোম্যাটিক সেটেলমেন্ট' বা কূটনৈতিক বন্দোবস্ত করার সামর্থ্য ফ্রান্সের নেই বললেই চলে। নিজ দেশে দাঙ্গাসহ সামাজিক অর্থনৈতিক অস্থিরতায় পড়েছেন মাক্রাঁ দেশটিকে ইদানীং কিছু বিষয়ে চীন-রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝামাঝি একটা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা মাক্রোঁর সফরের লক্ষ্য হতে পারে।”

'ড. ইউনূস প্রসঙ্গ আলোচনায় আসতে পারে'

This browser does not support the audio element.

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা গুরুত্বপূর্ণ এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। ফ্রান্স বর্তমানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং এই অঞ্চলের ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্পর্ক যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিন বিলিয়ন ইউরোর বেশিতে দাঁড়িয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক মো. আব্দুল হান্নান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতিতে ফ্রান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এখন প্রশ্ন হল, কোন সময়ে তিনি বাংলাদেশে আসছেন? জি-২০ সম্মেলন শেষ করে তিনি আসছেন। ফলে বাংলাদেশ নিয়ে তার একটা আগ্রহ আছে। এই আগ্রহ কতটা যৌক্তিক? সেটা যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব এ সপ্তাহেই ইকনোমিস্ট ইন্টেজিন্টে ইউনিট একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ ২০ ধনী দেশের মধ্যে উঠে আসবে। পাশাপাশি বোস্টন কনসাটেন্সির গত নভেম্বরের রিপোর্ট দেখি তারাও একই কথা বলছে। বোস্টন কনসাটেন্সির গবেষণা কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে খুবই উন্নত গবেষণা। তারা বলছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ছাড়া কিন্তু আর কারও অর্থনীতি ট্রিলিয়ন ডলারে নেই। এটা কিন্তু খুবই আশাব্যাঞ্চক কথা। আমি মনে করি এই সব প্রোজেকশনের কারণে ফ্রান্স বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।”

২০১১ সালে যখন নোবেল বিজয়ীকে গ্রামীণ ব্যাংকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ড. ইউনূসের প্রতি লিখিতভাবে প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছিলেনছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand

গত জুলাইয়ে ফরাসি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ চট্টগ্রামে শুভেচ্ছা সফর করে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুয়ের একটি বিবৃতি দেন। মূলত এসবের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের বৃহত্তর অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেয় ফ্রান্স।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলার আহবান জানিয়েছে। এ বিষয়ে কী আলোচনা হতে পারে? জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "হ্যাঁ, হতে পারে। তবে অ্যামনেস্টির কথা শুনে তো আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন না। তারা মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে তো সোচ্চার। ফলে কোন পর্যায়ে হয়ত আলোচনায় এটা উঠতেও পারে।” ড. ইউনূস প্রসঙ্গ কী আলোচনায় স্থান পাতে পারে? জবাবে তিনি বলেন, "হ্যাঁ, এটাও আসতে পারে। কারণ ফ্রান্সে ড. ইউনূস খুবই সম্মানিত একজন মানুষ। ফলে এটাও তিনি বলতে পারেন। কিন্তু এগুলো মূল আলোচনা না, সাইড লাইনে হয়তো কথাগুলো হতে পারে।”

'১৭ বছরে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছাবে'

This browser does not support the audio element.

প্রসঙ্গ, ২০১১ সালে যখন এই নোবেল বিজয়ীকে গ্রামীণ ব্যাংকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়, তখন ফ্রান্স গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি সেসময় ড. ইউনূসের প্রতি লিখিতভাবে প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছিলেন। ড. ইউনূস যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সেগুলো স্বীকার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানগুলো শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ে ন্যায়সঙ্গত সমাধানে পৌঁছাবে বলেও সেসময় আশাপ্রকাশ করেছিলেন সারকোজি। ড. ইউনূস যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, সেগুলোর ন্যায্য সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করতে পারেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ