ফ্রান্সের প্যারিসে বছর দুয়েক আগে স্বাক্ষরিত জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়নে বিপুল অর্থের প্রয়োজন৷ যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় অনেকে চুক্তির সাফল্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বকে আশ্বস্ত করতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছর পূর্তিকে ঘিরে মঙ্গলবার একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন৷ প্যারিসের ঐ সম্মেলনে প্রায় ৫০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সহ বেসরকারি সংস্থা ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন৷ ‘ওয়ান প্ল্যানেট' শীর্ষক ঐ সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস পৌঁছেছেন৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রধানরাও সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷ তবে প্যারিসের মার্কিন দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত থাকবেন৷ এছাড়া মাইক্রোসফটের বিল গেটস, ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর আর্নল্ড শোয়ারৎসেনেগার, অভিনেতা লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও, ক্যালিফোর্নিয়ার বর্তমান গভর্নর জেরি ব্রাউন, স্পেসএক্স সংস্থার এলোন মাস্ক উপস্থিত থাকবেন৷
গত জুনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন৷ যদিও নিয়ম অনুযায়ী ২০২০ সালের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি সম্ভব হবে না৷ অবশ্য ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ৷ মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত থেকে আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী কয়েক মাস বা বছরের মধ্যে তাঁর মন পরিবর্তন করবেন, আমি তা-ই আশা করি৷'' তিনি ট্রাম্পকে ইতিহাসের প্রতি তাঁর দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন৷
প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমাতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ এছাড়া ‘সবুজ জলবায়ু তহবিল'-এ যুক্তরাষ্ট্র যে তিন বিলিয়ন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল সেখান থেকে বাকি দুই বিলিয়ন ডলার আর দেবে না বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷
এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করতে১৩ জন মার্কিন বিজ্ঞানীকে অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ ‘ওয়ান প্ল্যানেট' সম্মেলনের আগে তিনি ঐ ১৩ জন সহ মোট ১৮ জন বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করেন৷ তাঁরা আগামী তিন থেকে পাঁচ বছর ফ্রান্সে জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করবেন৷
এছাড়া মঙ্গলবারের সম্মেলনে মাক্রোঁ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবেন৷
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান প্যাট্রিসিয়া এস্পিনোসা মনে করেন, ‘‘বৈশ্বিক অর্থায়ন কাঠামোর সংস্কার এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কম কার্বন নির্গমনকারী, রেজিলিয়েন্ট ও টেকসই না করলে শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দিয়ে কাজ হবে না৷'' এখন থেকে বেসরকারি খাতে নেয়া সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷