ফ্রান্সে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর দলকে কড়া টক্কর বামপন্থি জোটের। মাক্রোঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটকে রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়েছে বামপন্থি, সমাজবাদী ও গ্রিন পার্টির জোট। প্রথম পর্বের ভোটে তারা মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রায় সমান ভোট পেয়েছে। মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটের নাম এনসেম্বল। আর বামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন জোটকে বলা হচ্ছে লেফট-গ্রিন জোট বা নুপেস জোট। এনসেম্বল প্রথম পর্বে পেয়েছে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট এবং বাম জোট পেয়েছে ২৫ দশমিক ৬১ শতাংশ ভোট।
প্রথম পর্বে ভোট পড়েছে খুবই কম। ৪৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। রোববারের আবহাওয়া ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। প্যারিসে তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি। ফলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে বেশি আসেনি।
বাম জোটের নেতা জ্যঁ লুক মেলাঞ্চ বলেছেন, প্রথম পর্বের ভোটের পর সত্যিটা হলো, প্রেসিডেন্টের পার্টি হেরে গেছে। তিনি ভোটদাতাদের কাছে আবেদন করেছেন, আগামী রোববার তারা যেন আরো বেশি করে ভোট দেন এবং মাক্রোঁর পার্টির হার নিশ্চিত করেন।
দেড় বছরে ২২টি মসজিদ বন্ধ করেছে ফ্রান্স
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, গত ১৮ মাসে ২২টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে৷ তবে যে ক্ষমতাবলে এসব বন্ধ করা হয়েছে তার সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরা৷
ছবি: Stephane Mahe/REUTERS
১৮ মাসে ২২ মসজিদ
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, গত ১৮ মাসে ২২টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে৷ এই সংখ্যা তার আগের তিন বছরে মোট মসজিদ বন্ধের তুলনায় অনেক বেশি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা৷ উপরের ছবিতে এক ব্যক্তিকে তার কম্পিউটারে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি মসজিদ দেখাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Stephane Mahe/REUTERS
৯০ মসজিদে তদন্ত
ফ্রান্সে প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ রয়েছে৷ এর মধ্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মতাদর্শ প্রচার সন্দেহে ৯০টি মসজিদে তদন্ত চালানো হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
ছবি: Vanessa Meyer/dpa/picture alliance
মুসলিমদের জন্য বৈরী হয়ে উঠছে ফ্রান্স
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন এমন দেশগুলোর মধ্যে একটি ফ্রান্স৷ কিন্তু সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, দেশটি ক্রমে মুসলমানদের জন্য বৈরী হয়ে উঠছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, ২০২১ সালে মুসলিমবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ বেড়েছে৷ আর অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কমেছে৷
ছবি: Alain Pitton/NurPhoto/picture alliance
বন্ধ হয়ে যাওয়া আলন মসজিদ
ফ্রান্সের উত্তরপশ্চিমের আলন শহরের এই মসজিদটি গত অক্টোবরে বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ছবিতে মসজিদের দরজায় বন্ধের নোটিশ দেখা যাচ্ছে৷ ‘ইসলামের মৌলবাদী রূপ’ প্রচার ও ‘ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণার অনুভব চাষ’ করার অভিযোগ এনে মসজিদটি বন্ধ করা হয়৷ কিন্তু মসজিদের কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার তার অভিযোগের সমর্থনে খুব কম প্রমাণ উপস্থাপন করেছে৷
ছবি: Stephane Mahe/REUTERS
রয়টার্সের বিশ্লেষণ
মসজিদ বন্ধ করার প্রমাণ হিসেবে সরকারের পক্ষে থেকে ২০ পাতার একটি নথি (যেটি ‘হোয়াইট মেমো’ নামে পরিচিত) আদালতে উপস্থাপন করা হয়৷ সেটি রয়টার্স বিশ্লেষণ করে বলছে, নথিটি কবে তৈরি হয়েছে, কে করেছে এবং তথ্য কোথা থেকে পাওয়া গেছে তার কোনো উল্লেখ নেই৷
ছবি: Vanessa Meyer/dpa/picture alliance
চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
হোয়াইট মেমোতে আলন মসজিদের চারজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০২১ সালের এপ্রিলে সংঘটিত দুটি সন্ত্রাসী হামলায় সমর্থন প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়৷ এদের একজন করিম দাউদ (ছবি) স্থানীয় সরকারি অফিসে কাজ করেন৷ ২০২১ সালের অক্টোবরে তাকে সরকারি কর্মচারী হিসেব তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদক দেয়া হয়েছিল৷ ২০২০ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি গির্জায় গিয়ে সংহতিও প্রকাশ করেছিলেন৷
ছবি: Stephane Mahe/REUTERS
পাঁচটি বই উদ্ধার
হোয়াইট মেমোতে মসজিদ থেকে পাঁচটি বই উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে৷ এগুলোকে ‘মৌলবাদী’ বই বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অথচ এর মধ্যে চারটি বই বিশেষায়িত বইয়ের দোকান এবং অনলাইনে অনেক পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন লিল ইন্সটিটিউট অফ পলিটিক্যাল স্টাডিজের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষক দাউদ রিফি৷ অন্য বইয়ের নাম ‘রিয়াদ আস-সালিহিন’৷ ১৩ শতকের এই বইটি ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে রাখা আছে৷
ছবি: Fadel Senna/AFP/Getty Images
জিহাদের ডাক দেয়ার অভিযোগ
হোয়াইট মেমোতে আরও অভিযোগ করা হয়, আলন মসজিদের ধর্মপ্রচারকরা সশস্ত্র জিহাদের প্রশংসা করেছেন ও মুসল্লিরা সহিংসতার ডাক দিচ্ছেন বলে শোনা গেছে (যদিও কারা শুনেছেন তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি)৷ এ ব্যাপারে করিম দাউদ বলছেন, সরকার ‘জিহাদ’ শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা করেছে৷ জিহাদের অর্থ সশস্ত্র সংঘাত হতে পারে৷ আবার ‘জিহাদ আল-আকবর’ বোঝাতে প্রায়ই এটি ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ, নফস বা নিজ আত্মা পরিশুদ্ধ করার সংগ্রাম৷
ছবি: Stephane Mahe/REUTERS
সমালোচনা
অধিকার কর্মী, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিযোগ, ফ্রান্সে ধর্মীয় স্থান বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষকে এত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, যথাযথ পরীক্ষা না করেই মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া অস্পষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় ও পর্যাপ্ত প্রমাণ না দেয়ায় মামলা পরিচালনা করা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Gaizka
সরকারের জবাব
এলিসি প্রাসাদ রয়টার্সের এই বিশেষ প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি৷ তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সরকার কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং ‘আইনের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে’ তা করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Gaizka
অস্থায়ীভাবে বন্ধ
যে আইনে মসজিদ বন্ধ করা হয় তাতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য মসজিদ বন্ধ করতে পারে৷ তবে অধিকার কর্মী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা গেছে, অনেক মসজিদই আর কখনও খোলা হয় না৷ বন্ধ হওয়া ২২টি মসজিদের মধ্যে কতটি আবার খুলেছে সে হিসাব মন্ত্রণালয় জানায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Leroux
11 ছবি1 | 11
তবে সংবাদমাধ্যমের পূর্বাভাস হলো, মাক্রোঁর পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট শেষপর্যন্ত ২৫৫ থেকে ৩০৫-এর মধ্যে পাবে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে ২৮৯টি আসনে জেতা দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে মাক্রোঁ তার সংস্কার পরিকল্পনা চালু করতে পারবেন না। তিনি অবসরের বয়স ৬৫ করতে চান। আর বামপন্থি জোট তা কমিয়ে ৬০ করতে চায়। তাছাড়া বামপন্থি জোট জিনিসের নাম কমানো এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
কিছুদিন আগেই মাক্রোঁ দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তারপরই তার দল যদি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে সেটা তার কাছে বড় ধাক্কা হবে। তিনি নিজের দলের নেতৃত্বাধীন জোটের সরকার যাতে হয়, তার জন্য প্রচার করছেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ফ্রান্সে জিনিসের দাম অনেকটাই বেড়েছে। ফলে মানুষের মনে ক্ষোভ রয়েছে।
মাক্রোঁর দল ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রসঙ্গ তুলে বলছে, এই অবস্থায় ফ্রান্সের দরকার স্থায়ী সরকার। সরকার স্থায়ী না হলে তার প্রভাব ফ্রান্সের উপর পড়বে।
৭১ বছর বয়সি গিবোজ বলেছেন, তিনি মাক্রোঁর দলকে ভোট দেননি। তিনি মাক্রোঁর বিরোধীদের উপর ভরসা করেছেন। আবার ওয়ারেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো এবারও মাক্রোঁর পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। প্রথম পর্বে যে দুই প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন, তারা ১৯ জুন দ্বিতীয় পর্বের ভোটে লড়বেন। সেদিন ঠিক হবে, কোন জোট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এগিয়ে থাকবে।