বিরোধীদের সঙ্গে মাক্রোঁর আলোচনা শুরু। কিন্তু মাক্রোঁর দলের সঙ্গে সরকারে যেতে রাজি নয় দুই বিরোধী দল।
বিজ্ঞাপন
ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোট পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তারপর সরকার গঠনের জন্য বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন মাক্রোঁ। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর এলআর(দ্য রিপাবলিকান) নেতা জেকব বলেছেন, তারা বিরোধী আসনেই বসবেন। কারণ, জনগণ সেই রায় দিয়েছে। জেকব বলেছেন, প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে মাক্রোঁ ছিলেন খুবই উদ্ধত।
তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ''আমরা সংস্থাকে অচল করতে চাই না।'' এলআরের পছন্দের নীতি নিয়ে চললে সংখ্যালঘু সরকারের আনা কিছু বিলে তারা সমর্থন জানাতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জেকব। জেকবের দল এবার ৬১টি আসন পেয়েছে। ফলে তার সমর্থন পেলে বিল পাস করতে সরকারের আর কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু জেকবের শর্ত হলো, তার দলের পছন্দের নীতি নিয়ে সরকারকে চলতে হবে।
মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর সমালোচনা এবং জবাব
চরমপন্থিদের হামলায় নিহত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পর থেকে মুসলিম বিশ্বে তোপের মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/E. Gaillard
মাক্রোঁ যা বলেছিলেন
গত ২১ অক্টোবর প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত করে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ''আমরা কার্টুন ছাড়বো না৷ ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে প্যাটি জীবন দিয়েছেন । তিনি এই প্রজাতন্ত্রের মুখ।''
ছবি: Francois Mori/Pool/Reuters
এর্দোয়ানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মাক্রোঁর বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন,‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী? একজন রাষ্ট্রনেতা যদি বিশ্বাসের স্বাধীনতা না বোঝেন এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে আর কী বলা যায়!’’
ছবি: Sercan Kucuksahin/AA/picture-alliance
মাক্রোঁর সমালোচনায় ইমরান খান
টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, ‘‘একজন নেতার প্রধান গুণ হলো, তিনি সব মানুষকে বিভক্ত না করে ম্যান্ডেলার মতো ঐক্যবদ্ধ করেন৷এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারতেন এবং চরমপন্থাকে আর ছাড় দিতে অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরো মেরুকরণ এবং প্রান্তিকীকরণের পথ ধরলেন যা অনিবার্যভাবেই মৌলবাদের দিকে নিয়ে যায়৷’’
মাক্রোঁর জবাব
তার সমালোচনার জবাবে টুইটারে এমানুয়েল মাক্রোঁ লিখেছেন, ‘‘আমরা কখনো হাল ছাড়বো না৷ আমরা শান্তির চেতনায় সব পার্থক্যকে সম্মান করি৷ আমরা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য গ্রহণ করি না এবং যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যকে রক্ষা করি৷ আমরা সব সময় মানুষের মর্যাদাবোধ এবং সার্বজনীন মূল্যবোধের পাশে থাকবো৷’’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন,
‘‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয় এমন যে কোনো উত্তেজক বক্তব্য বা কাজের আমরা তীব্র নিন্দা করি৷’’
ছবি: Reuters
‘জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মাক্রোঁ’
চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ইন্সটাগ্রামে এমানুয়েল মাক্রোঁর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘ আপনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি তরুণদের মস্তিষ্কে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অবস্থা তৈরি করছেন৷ আপনি খুব সাহস করে নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদের প্রেরণাদাতা মনে করতে পারেন৷’’
ছবি: Imago-Images/ITAR-TASS/ Press Office Republic of Chechnya
প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত সকল ফরাসি নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে৷ সবাইকে সব জনসমাবেশ এবং কার্টুনের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে বিবৃতিতে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
7 ছবি1 | 7
বামপন্থিদের নেতৃত্বে নুপেস জোটের শরিক সমাজবাদী পার্টির সঙ্গেও মাক্রোঁর কথা হয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, বামপন্থি জোটের নীতি মেনে পদক্ষেপ নিলে মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোটকে সমর্থন করতে তাদের কোনো অসুবিধে নেই। যেমন, বামপন্থি জোটের দাবি, মাসিক ভাতা এক হাজার তিনশ ইউরো থেকে বাড়িয়ে এক হাজার পাঁচশ ইউরো করতে হবে। এই পদক্ষেপ নিলে বামপন্থি জোট সমর্থন করবে।
প্রশ্ন হলো, তাহলে কি মাক্রোঁ সংখ্যালঘু সরকার চালাবার কথা ভাবছেন বা ওইদিকেই যেতে চাইছেন? সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিল নিয়ে সরকারকে বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের সমর্থন পেতে হবে। মাক্রোঁ এবার অতি-দক্ষিণপন্থি নেতা ল্য পেনের সঙ্গে কথা বলবেন। আর মাক্রোঁ যদি বিরোধীদের সমর্থন না পান, তার সংস্কার কর্মসূচিতে বিরোধীরা সায় না দেন, তাহলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেবে। সেক্ষেত্রে মাক্রোঁকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আবার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।